খুলনা বিভাগে ১১৮ জন শিক্ষক চাকরিচ্যূত হচ্ছেন ফেরত দিতে হবে ১১৭ কোটি টাকা
ডেস্ক রিপোর্ট : খুলনা বিভাগের ১১৮ জন শিক্ষকের জাল সার্টিফিকেটে চাকরি করার বিষয়টি ধরা পড়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট জমা দিয়ে চাকরি বাগিয়েছেন সেইসব প্রতিষ্ঠানই জাল বলে শনাক্ত করেছে। মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের এসব জাল শিক্ষক ইতিমধ্যে ১১৭ কোটি ৬ লাখ ৩ হাজার ৭৯৮ টাকা বেতন তুলে হজম করেছেন। যদিও এই টাকা ফেরত দিতে হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। কেবল তাই না এসব জাল শিক্ষককে চাকরিচ্যূত করতে স্ব স্ব জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ পাওয়ার পর চাকরিচ্যূতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে কয়েকজন জেলা শিক্ষা অফিসার জানিয়েছেন।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় জাল সার্টিফিকেটে চাকরি করছেন বলে যে ১২১ জন শনাক্ত হয়েছেন। তার মধ্যে যশোরে ২৪, খুলনায় ২৭, সাতক্ষীরায় ১৬, বাগেরহাটে ৯, ঝিনাইদহে ১৩, কুষ্টিয়ায় ৭, মাগুরায় ৬, নড়াইলে ৬, চুয়াডাঙ্গায় ৫ ও মেহেরপুরে ৫ জন রয়েছেন।
যশোরে যে ২৪ জন রয়েছেন তারা হচ্ছেন, অভয়নগরের নওয়াপাড়া মহিলা কলেজের সাচিবিক বিদ্যার প্রভাষক জাকির হোসেন ও আব্দুল হামিদ টিএম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কম্পিউটারের সহকারী শিক্ষক মহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলার দাইতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটারের শিক্ষক মনিরুজ্জামান, চৌগাছার চান্দপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তানিয়া আক্তার, সদর উপজেলার জগন্নাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আফরোজা খাতুন, তুলি রাণী বিশ্বাস ও রেশমা খাতুন, উপশহর মহিলা ডিগ্রি কলেজের দর্শনের প্রভাষক ইয়ামিন হোসেন, মণিরামপুরের ঝাঁপা উত্তরপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইলিয়াস কাঞ্চন, শার্শার লক্ষ্মণপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক সায়মা খাতুন, অভয়নগরের এস আর সুভরাড়া বানরগাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পারভীন আফরোজ, চৌগাছার কলুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শফিকুল ইসলাম, মণিরামপুরের গোবিকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্পণা মন্ডল ও কাজল কুমার পাল, চৌগাছার মাকাপুর বল্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মুসলিমা খাতুন, গরিবপুর আদর্শ বিদ্যালয়ের নাজমা পারভীন, রোজিনা খাতুন ও যতীন্দ্রনাথ মন্ডল, অভয়নগরের আন্ধা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মরিয়ম খাতুন, সদর উপজেলার সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের বদরুল আলম, ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুষমা শিরিনা নার্গিছ, অভয়নগরের পোতপাড়া পাইকপাড়া ভুগিলহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আনিছুর রহমান, নওয়াপাড়া মহিলা কলেজের সাচিবিক বিদ্যার প্রভাষক জাকির হোসেন ও রূপদিয়া ওয়েলফেয়ার একাডেমির রেহেনা বারী।
চাকরিচ্যূত হওয়ার তালিকায় খুলনা জেলায় যে ২৭ জন রয়েছেন তারা হচ্ছেন, ডুমুরিয়ার সাহপুর মধুপুর কলেজের ফিরোজ খান, পাইকগাছার আলোকদ্বীপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাধবী রায়, দাকোপের চালনা কলেজের সুপর্ণা মল্লিক, বাজুয়া ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সজল কান্তি গাইন ও মিরাজুল ইসলাম, দৌলতপুর দিবা নৈশ কলেজের মোছা.আলছানিয়া, ডুমুুরিয়ার চুকনগর কলেজের তাপস কুমার নাথ, পাইকগাছার এসএমএ মাজেদ বালিকা বিদ্যালয়ের লিলিমা খাতুন, দাকোপের কালাবগি সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মঞ্জু রাণী মন্ডল ও বিজিবি সামুকপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রিতা আক্তার, পাইকগাছার সম্মিলনী বিদ্যা নিকেতনের মহসীনুজ্জামান, বটিয়াঘাটার খলসিবুনিয়া জিপিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাপস কুমার হালদার, পাইকগাছার হলিঢালী কপিলমুনি মহিলা কলেজের প্রভাষক কামাল হোসেন, শামিমা জাহান, শেখ তৌহিদুর রহমান, এসএম আমিনুর রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন ও সুন্দরী মন্ডল, ডুমুরিয়ার শাহপুর মধুগ্রাম কলেজের কালীদাশ মন্ডল, বটিয়াঘাটার রামমোহন বালিকা বিদ্যালয়ের শংকর বিশ্বাস, কয়রার বামিয়া এমএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নুর নাহার, ফুলতলার ফুলতলা বি. ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের দিলিপ চক্রবর্তী, খুলনা সদরের এপিসি বালিকা বিদ্যালয়ের আলমগীর হোসাইন, দৌলতপুরের রায়েরমহল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাহফুজা খাতুন, পাইকগাছার শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শংকর প্রসাদ মনি ও কয়রার ভাগবা এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৃপেন্দ্র নাথ মন্ডল।
সাতক্ষীরার যে ১৬ জন শিক্ষককে বেতন ফেরত দিতে হবে তারা হচ্ছেন, তালা উপজেলার সুভাষিনী কলেজের প্রদর্শক ইয়াকুব আলী শেখ, আশাশুনির গোদাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের নির্মল কুমার বিশ্বাস, একই স্কুলের ফয়জুর রশিদ, সাতক্ষীরা সদরের দিবা নৈশ কলেজের বিলকিস জাহান সিদ্দিকা, শিল্পী রাণী পাল ও শান্তি রঞ্জন পাল, কলারোয়ার বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা কলেজের নির্মল কান্তি সরকার, কলারোয়ার বামনখালী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের আবুল কাশেম, আশাশুনির গদাইপুর জেহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ইলিয়াস হোসেন, পুইজালা বিএম আরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঝর্ণা তরফদার, সাতক্ষীরা সদরের সুন্দরবন টেক্সটাইলস মিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাকলী দেবনাথ, তালার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজের সুচিত্রা রায়, কলারোয়ার বেগম খালেদা জিয়া মহাবিদ্যালয়ের আমিরুল ইসলাম ও সোনার বাংলা কলেজের তৌহিদুর রহমান, তালার ফয়েলা চাদকারী অগ্রণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শেখ ফিরোজ আহমেদ ও তালার শহীদ স্মৃতি কলেজের মনিরুজ্জামান।
বাগেরহাটের চাকরিচ্যূতির তালিকভুক্ত ৯ জন শিক্ষক হলেন, মোরেলগঞ্জের কুবুনিয়া রহমতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রবিউল হক ও কে কে পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিখা খানম, বাগেরহাট সদর উপজেলার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মহিলা মহাবিদ্যালয়ের বিধান বিশ্বাস, চিতলমারীর শেরেবাংলা কলেজের নবনীতা সরকার, মোরেলগঞ্জের জিউধরা সেরজন স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, বাগেরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিলা রাণী বিশ্বাস, চিতলমারীর শেরেবাংলা কলেজের লিটন মালাকার, বাগেরহাট সদর উপজেলার সুহাষিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হিরামন বৈরাগী, চিতলমারীর ত্রিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হ্যাপী রাণী মজুমদার।
ঝিনাইদহের জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করা ১৩ জন হচ্ছেন, ঝিনাইদহ সদরের শিশু কুঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের তাপস কুমার বিশ্বাস, কালীগঞ্জের শহীদ নুর আলী কলেজের প্রদর্শক শামছুল হক ও রফিকুল ইসলাম, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লালন একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রাজিয়া খাতুন, গুরুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোস্তাফিজুর রহমান, কোটচাঁদপুরের এসডি ডিগ্রি কলেজের শাহানা পারভীন হীরা, হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিণাকুন্ডু পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মঈনউদ্দিন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাজি আশরাফ আলী কলেজের রাশেদুল ইসলাম, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাংকিরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মামুন অর রশীদ, কালীগঞ্জের নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হাজেরা খাতুন, কোটচাঁদপুরের বহরমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাহফুজা খানম ও শামিমা আক্তার ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাসুদেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আব্দুর রহমান।
কুষ্টিয়ার ৭ জন হচ্ছেন, ভেড়ামারা পাইলট স্কুলের শাহিনা খাতুন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বুজরখ বাঘই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টিপু সুলতান, দৌলতপুর উপজেলার খাসমথুরাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএম তুহিনুজ্জামান, ভেড়ামারার আব্দুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মুসলিমা খাতুন, কুমারখালির নাতুরিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের ইদ্রিস আলী, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দহকুলা মহম্মদশাহী উচ্চ বিদ্যালয়ের মিরাজ আলী ও দিনমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাজী জাকিয়া সুলতানা।
মাগুরায় ৬ জন হচ্ছেন, শ্রীপুর উপজেলার চরগোয়ালপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেগম বিলকিস ও নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএম আশ্রাফুল আলম, শালিখা ঘাটর রামানন্দনকাটির রাজিয়া সুলতানা, মাগুরা সদর উপজেলার বগিয়া সুভাষিনী বসু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সফিজুর রহমান, নজির আহম্মদ কলেজের প্রভাষক জিনাত রেহানা ও মোহাম্মদপুরের বাবুখালি আফতাব উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইসমাইল হোসেন।
নড়াইলের ৬ জন হচ্ছেন, কালিয়া উপজেলার জেএ চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ওয়ালিউর রহমান চৌধুরী, নড়াইল সদর উপজেলার দেবভোগ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মুস্তাহিদ আল আমিন, কালিয়ার আদর্শ সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যাপীঠের রেজবি সুলতানা, সদর উপজেলার উজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মনিরুজ্জামান, কালিয়ার খামার পারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আবুল হাসান, নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক আব্দুস সবুর শেখ।
চুয়াডাঙ্গার ৫ জন হচ্ছেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার পাঁচলিয়া জামাল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেলিম রেজা, জীবননগরের হাসাদহ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলার বড় সলুয়া নিউ মডেল কলেজের প্রভাষক শফিকুল ইসলাম, জীবননগরের জীবননগর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক নয়ন তারা ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পৌর কলেজের বেগম হালিমা আক্তার।
এবং মেহেরপুরের ৫ জন হচ্ছেন, সদর উপজেলার মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মজিবুর রহমান, গাংনীর সাহেবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাফুর উদ্দিন, বামুন্দি নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মাহমুদ হাসান ও প্রদর্শক জাহাঙ্গীর আলম ও সদর উপজেলার এ আর বি কলেজের ফাতেমা মুহতাসিমা। চাকরিচ্যূত হওয়ার তালিকায় থাকা শিক্ষকদের অধিকাংশ কম্পিউটারের। এর বাইরে সাচিবিক বিদ্যা ও গ্রন্থাগারিক বেশি। এছাড়া, ধর্মীয় শিক্ষকও রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষক এনটিআরসির জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে চাকরি নেন। এখন তাদের লাখ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিতে হবে। তা না হলে মামলা এবং জেল জরিমানা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন,‘পত্র পাওয়ার পর তা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন শনাক্তের কাজ চলছে। বিস্তারিত পাওয়ার পর বাস্তবায়ন করা হবে।’