সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ – পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
হাবিবুল্লাহ বাহার হাবিব : সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বড় ও দামি সরকারি গাছ কেটে আসবাবপত্র বানিয়ে তা ঢাকার শ্যামলীর বাসায় পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। বৃহষ্পতিবার ওইসব আসবাবপত্র তিনি তার গাড়ির চালক আমিনুল ইসলাম ও ম্যাকানিক সুরত আলীর সহায়তায় নিজ নামে সুন্দরবন ক্যুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারি জানান, গত বছরের ৩০ আগষ্ট খামারবাড়ির উপপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন ড.জামালউদ্দিন। নির্ধারিত গেষ্ট হাউজে না উঠে তিনি অফিসেরই একটি ভবনে বসবাস শুরু করেন। তারা আরো জানান, এক মাস আগে থেকে তিনি খামারবাড়ির আম, জাম, নিম ও মেহগণি গাছের ডাল কেটে গোপনে বিক্রি করেছেন। ২২টি নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল ও ডাব পেড়ে মাইক্রোবাসের পিছনে করে ঢাকার শ্যামলীর বাসায় নিয়েও গেছেন। এক মাস আগে অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষের পেছন দিক থেকে তিনি বড় ২টি জাম গাছ ও ২টি মেহগনি গাছ কেটে বাসভবনের পাশের একটি ঘরে রেখে দেন। চারটি গাছের দাম ৫ লাখ টাকার বিশি । পরে ম্যাকানিক সুরত আলী ও তার গাড়ি চালক আমিনুল ইসলামকে দিয়ে পাটকেলঘাটা থেকে মিস্ত্রী এনে খাট, সোফা সেট, টি টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করেন। বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওইসব ফার্ণিচার সুরত আলীর মাধ্যমে ভ্যানযোগে সুন্দরবন ক্যুরিয়ার সার্ভিসে সাইফুল ইসলাম, আগরগাঁও বিএনপি বাজার, শ্যামলী, ঢাকা তার বাসার ঠিকানায় পাঠান। বুকিং স্লিপে প্রেরক হিসেবে ড. জামালউদ্দিনের নাম লেখা হয়েছে। বুকিং খরচ নেওয়া হয়েছে ২০৭০ টাকা। পর্যায়ক্রমে এসব আরবাবপত্র তিনি ঢাকার বাসায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বনে জানান তারা। তারা আরো জানান, যোগদানের পর থেকে উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন ও ট্রেনিং অফিসার এস এম খালিদ সাইফুল্লাহ নির্ধারিত সরকারি কোয়ার্টারে উঠেননি । ভালো ভবন কনডম দাবি করে অফিসের ঘরেই বসবাস করে আসছেন। এতে উপপরিচালক মাসিক বাড়িভাড়া হিসাবে ২৪ হাজার ৪৪৭ টাকা ও খালিদ সাইফুল্লাহ ১৯ হাজার ৬১০ টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছেন। একইভাবে এক মিটিং এ অফিসের একটি পরিত্যক্ত ভবন গণপূর্ত বিভাগে এক উপসহকারী প্রকৌশলের সঙ্গে যোগসাজো সে ১১ হাজার ৬২১ টাকার টেন্ডার দেখিয়ে ৩ লাখ টাকার বেশি সরকারি টাকা লুটপাটের ফন্দি এটেছেন।
কৃষি অধিদপ্তরের অফিসের সামনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি সাইফুল ইসলাম, বাহার আলীসহ কয়েকজন জানান, কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই সরকারি গাছ কাটার ব্যাপারে উপপরিচালক ড. জামালউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, এর কৈফিয়ত আপনাদের কাছে দেবনা। প্রশ্ন করার অধিকার আপনাদের কে দিল। এটা আপনাদের একতেয়ারে পড়ে না। সুন্দরবন ক্যুরিয়র সার্ভিস সাতক্ষীরা শাখা সূত্রে জানা গেছে, কৃষিবিদ ড. জামাল উদ্দিন শ্যামলীর ঠিকানায় যে আসবাবপত্র বুকিং করেছেন তা হলো , খাট একটা, সোফাসেট একটা, সাইড বক্স একটা, টি টেবিল একটা। কৃষি বিভাগের একটি সূত্র জানায়,এখনো জামালউদ্দীনের বাসায় ১টি বক্স খাট, তিনটি সোফা সেট ও কয়েকটি টেবিল রয়েছে,যেটি তিনি পর্যায়ক্রমে ঢাকায় পাঠাতেন। এ ব্যাপারে ড. জামালউদ্দিরনের গাড়ির চালক বলেন, তিনি স্যারের নির্দেশে সুন্দরবন ক্যুরিয়র সার্ভিসে ওইসব আসবাবপত্র বুকিং দিয়েছেন। একইভাবে খামারবাড়ির ম্যাকানিক সুরত আলী বলেন, উপপরিচালক স্যারের নির্দেশে তিনি খামারবাড়ি থেকে ভ্যানে করে ওইসব আসবাবপত্র সুন্দরবন ক্যুরিয়ার সার্ভিসে পৌছে দিয়েছেন। তবে আসবাবপত্র তৈরির জন্য পাটকেলঘাটা থেকে যে মিস্ত্রী কাজ করেছিলো, তাদের নাম তিনি জানেন না।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জামালউদ্দিন বলেন, তিনি কয়েকটি গাছ কেটে অফিসের জন্য আসবাবপত্র তৈরি করেছেন । এর পাশাপাশি অফিসের কর্মচারিদের মাধ্যমে স্থানীয় ‘স’ মিল থেকে কাঠ কিনে বাসার জন্য আসবাবপত্র বানিয়েছেন। তবে কোন কর্মচারি কোন ‘স’ মিল থেকে কাঠের লগ কিনে এনেছেন এমন প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারেননি। একপর্যায়ে তিনি বলেন, অফিস ও গেস্ট হাউজে বসার জন্য কিছু আসবাবপত্র তৈরি করেছি। তার বিল এখনো উর্দ্ধতনদের কাছ থেকে পাননি। বিধি অনুসরণ না করে অফিসের গাছ কাটা ও ফার্নিচার তৈরি করে ঢাকাতে আপনি পাঠাতে পারেন কিনা,এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকারন্তরে তিনি সব স্বীকার করে বলেন,তার ভুল হয়ে গেছে। এটা তার ক্যারিয়ারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। অবশেষে তিনি নিউজটি না করার অনুরোধ জানান।