আসাদের বেফাঁস মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে তালপাড়
আলিফ হোসেন,তানোর : রাজশাহীর তানোরে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সভা আয়োজন করে দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্র হনন ও বিষোদাগার করার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এখবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারী বুধবার তানোর থানা মোড়ে আওয়ামী লীগের ব্যানারে প্রচারণা সভা আয়োজন করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বীর সভাপতিত্বে ও সাবেক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলার সাবেক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান রবু, দেওপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আখতার, মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান ও তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হকপ্রমুখ। স্থানীয়রা জানান, এরা সকলে নৌকাবিরোধী অবস্থানের জন্য দলের পাদ পদবী হারিয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগের কমিটি থাকার পরেও এরা আওয়ামী লীগের ব্যানারে নৈতিকভাবে কোনো কর্মসূচী দিতে পারেন না। আবার প্রধানমন্ত্রীর আগমণ সফল করার নামে প্রচারণা সভা করে দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করা যায় না। তাদের উচিৎ ছিল বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও অর্জনের চিত্র তুলে ধরা। কিন্ত্ত এসব না করে দলীয সাংসদকে কটুক্তি ও মানহানিকর বক্তব্য দেয়ায়, প্রতিয়মান হয় দলীয সভার নামে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হয়ে ষড়যন্ত্র ও বিএনপির বি-টিম হয়ে তারা কাজ করছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ভাষ্য, রাজশাহী- ১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী কখানো নৌকায় ভোট দেন না, তিনি আওয়ামী লীগের চেতনাবিরোধী ও রাজাকার পুত্র এমন কাল্পনিক হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে জেলার সাবেক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের হাসির খোরাক বা হাসির পাত্র হয়েছেন। কারণ তার করা অভিযোগ এমপি ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে মানায় না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের
অভিমত ফারুক চৌধুরী একমাত্র নেতৃত্ব।
যাকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সব প্রটৌকল ভেঙ্গে একক ক্ষমতা বলে ফারুক চৌধুরীকে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়ে সাধারণ নির্বাচনে ৫ বার নৌকার টিকেট দিয়েছেন। অন্যরা রাজনীতি করে যেখানে পৌঁছাতে চাই, সেখান থেকে ফারুক চৌধুরীর রাজনীতি শুরু। একজন নেতার প্রতি দলীয় প্রধানের কতটা বিশ্বাস-আস্থা থাকলে এমনটা করেন তার প্রমাণ ফারুক চৌধুরী এমপি। তিনি ২০০১-২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তিনবার বিজয়ী এবং একবার প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তিনি জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত (তানোর-গোদাগাড়ী) ও আঁতুড়ঘর তছনছ করে আওয়ামী লীগের বসত ঘরে পরিণত করেছেন। নৌকা তাঁর নিজের নির্বাচনী প্রতীক, অথচ তিনিই নাকি নৌকায় ভোট দেন না আসাদের দাবি। তাহলে তার এই কথার মানে দাঁড়ায় কি দলের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁর চেয়ে রাজনৈতিক দূরদর্শীতা আসাদেরই
বেশি ! এখন প্রশ্ন হলো ফারুক চৌধুরী ছিলেন জেলার সভাপতি আর আসাদুজ্জামান আসাদ ছিলেন ওই কমিটির সম্পাদক, তাহলে যে ব্যক্তি নৌকায় ভোট দেন না, তার নেতৃত্ব মেনে নিয়ে তিনি রাজনীতি করলেন কেনো, তখন তিনি কেনো সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা বা নিজে পদত্যাগ করেন নি এর জবাব কি আছে আসাদের কাছে ? আবার ফারুক চৌধুরী এমপিকে বলেছেন আওয়ামী লীগের চেতনাবিরোধী। অথচ এমপি ফারুক চৌধূরী বিভিন্ন নির্বাচন বা দলীয় কর্মসূচিতে কখানো কি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে চেতনাবিরোধী কোনো কাজ করেছেন, কখানো দলের বিরুদ্ধে কি অবস্থান নিয়েছেন, কখানো কি আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কোনো নেতার বিরুদ্ধে বিষোদাগার করেছেন, কখানো কি দলীয় কর্মসূচির নামে চাঁদাবাজী করেছেন করেন নাই এই প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না তাহলে তিনি চেতনাবিরোধী হলেন কি বিবেচনায়।
তাহলে আসাদের নেতৃত্বে যারা জাতীয় সংসদ, রাজশাহী জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের আদর্শ নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে এমনকি নৌকার বিজয় ঠেকাতে অন্যদলের পক্ষে কাজ করেছে তাহলে তারাই কি আওয়ামী লীগের চেতনাবান্ধব ? এছাড়াও আসাদ তাকে রাজাকার পুত্র বলে জঘন্যতম মিথ্যাচার করেছেন। কারণ রাজাকারের সজ্ঞা কি ? সাধারণ তো মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা অন্যর সম্পত্তি জবরদখল, সম্পদ লুট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, খুন-ধর্ষণ, হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে তাদের বুঝি। কিন্ত্ত ফারুক চৌধুরীর প্রয়াত পিতা শহীদ আজিজুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এমন একটিও অভিযোগের কেউ কি কোনো প্রমাণ দিতে পারবে না পারবে না তাহলে কি বিবেচনায় আসাদ তাকে রাজাকার বলেছেন। কারণ এমপির পিতা শহীদ আজিজুল হক চৌধূরী ও চাচা মুকবুল হক চৌধূরীকে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে রাজশাহীর বাবলা বনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তার মামা জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান হেনা। তাহলে তিনি রাজাকার পুত্র হলেন কি ভাবে-? মৃত মানুষকে নিয়ে এমন মিথ্যাচার শুধু জঘন্য অপরাধ নয় কবিরা গুনাহ্ও বটে। এক জন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কি এমন বক্তব্য দিতে পারেন সেটিও চলছে আলোচনা সমালোচনা। এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও আসাদুজ্জামান আসাদের কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এবিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না
বলেন, আসাদুজ্জামান আসাদের মিথ্যা বানোয়াট বক্তব্যর তারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, জীবনে যিনি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি, তিনি একজন সাংসদকে নিয়ে এমন মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন। তিনি বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলের সভাপতি এবং সাংসদেরা হচ্ছেন তার প্রতিনিধি, কাজেই সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-উপাত্ত ব্যতিত দলীয সাংসদের বিরুদ্ধে বিষোদগার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিষোদগারের সামিল।