সরকারি গুদামের ট্রাক ভর্তি চাল আটকের পর ছেড়ে দেয়া নিয়ে হৈচৈ
ডেস্ক রিপোর্ট : যশোরের বিসিক শিল্পনগরীর একটি প্রতিষ্ঠানের সামনে রেশন ও কাবিখার চাল ভর্তি ট্রাক অবস্থান নেয়ার ঘটনায় তুমুল হৈচৈ শুরু হয়। বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সরকারি খাদ্য গুদামের চাল ভর্তি ট্রাকটি জব্দ করেন একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। পরে খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষে প্রত্যয়ন দিলে সতর্কতা দিয়ে ট্রাকটি ছেড়ে দেয়া হয়। খাদ্য কর্মকর্তার প্রত্যয়ন এবং ওই ট্রাক ভর্তি চাল আটক ও পরে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় নানামুখি প্রশ্ন উঠেছে।
একাধিক সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, এদিন বিকেলে সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে চাল ভর্তি একটি ট্রাক বের হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে না গিয়ে যশোর বিসিকের ন্যাশনাল ফ্লাওয়ার মিলের সামনে যায়। সেখানে বেশকিছু সময় অবস্থান নেয়। কাবিখা প্রকল্পসহ আরও কয়েকটি ডিও’র চাল অসৎ উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্যে না নিয়ে পথেই হাত বদল হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যায়। এ ধরনের সংবাদে একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ট্রাকে থাকা লোকজনকে চ্যালেঞ্জ করেন। এরপর ট্রাক চালক ও ওই চালের সাথে থাকা লোকজনকে চার্জ করলে তারা প্রথমে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। এরপর সরকারি খদ্য গুদাম থেকে কাবিখার চাল রিসিভ করা কয়েকজন, অন্যান্য ডিও’র কয়েকজন এবং একজন খাদ্য কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে কাগজপত্র উপস্থাপন করলে ঘন্টা দুয়েক পরে চাল ভর্তি ট্রাকটি ছেড়ে দেয়া হয়। তথ্য মিলেছে কাবিখা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা চাল বিক্রি করা হয়েছিল এক পার্টির কাছে। ডিও কেনা কয়েক ব্যক্তি ওই চাল খাদ্য গুদাম থেকে রিসিভ করে বিক্রি করে দেন। আর ওই চাল কেনে বিসিকেরই একটি প্রতিষ্ঠান।
একটি সূত্রের দাবি রেশন ও কাবিখা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ওই চাল। তবে, এদিন রেশনের চালও লোড দেয়া হয় খাদ্য গুদাম থেকে। রেশনের চাল সংশ্লিষ্ট অনেকেই নিজেরা না খেয়ে বিক্রি করে দেন। কিন্তু কাবিখার চাল পথে বিক্রি করে দেয়ার সুযোগ নেই। অথচ চাল পাওয়া যায় বিসিকের ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে।
যদিও বিকেলেই ওই চাল বহন করার বৈধতা রয়েছে বলে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা ওই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিশ্চিত করেন। তবে, ওই খাদ্য কর্মকর্তার দেয়া প্রত্যয়ন কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। নানামুখি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিসিক ও খাদ্য বিভাগে। সরকারি কোনো কাজের ডিও’র বিপরীতে সরকারি গুদাম থেকে চাল গ্রহণ করলেও পথে বিক্রি করে দেয়ার কোনো বিধান আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে যশোর সদর খাদ্য গুদামের ইনচার্জ (ওসি এলএসডি) মাহবুব আলম গ্রামের কাগজকে জানান, বিসিক এলাকায় ট্রাক ভর্তি চাল আটকের ঘটনাটি তার কাছে পরিষ্কার না। তার জানামতে, কয়েক ডিও ক্রেতা ওই চাল রিসিভ করেছিলেন। আর কাবিখার জন্য বরাদ্দ করা ছিল ওই ডিও’র চাল। আবার আরও কয়েকটি ডিও’র বিপরীতেও চাল লোড দেয়া হয় বৃহস্পতিবার। অধিদপ্তরের এক অফিসার তাকে চাল আটকের ব্যাপার জানিয়েছিলেন। পরে উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধান হয়ে গেছে বলে তার কাছে তথ্য রয়েছে।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষে বলা হয়েছে একটি তথ্যে ওই চাল আটকে দেয়া হয়। ট্রাক চালক কিংবা চালের সাথে থাকা কারো কাছে বৈধ কাগজপত্র ছিল না। পরে খাদ্য বিভাগ থেকে ওই চাল বহনের বৈধতা দিয়ে প্রত্যয়ন দেয়া হয়। ওই প্রত্যয়নপত্রে রেশনের চাল বলেও উল্লেখ করা হয়। এরপর বিশেষ সতর্কতা দিয়ে ট্রাকটি ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানান তারা। আগামীতে কাগজপত্র সাথে নিয়ে সরকারি চাল বহন করা পরামর্শও দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে।