যৌতুক লোভীদের নির্যাতনে মুমূর্ষ গৃহবধু’কে ৯৯৯ এর সাহায্যে উদ্ধার
মোল্লাহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বড়গুনী গ্রামে যৌতুক লোভী স্বামী ও তার ঘনিষ্ঠ জনদের সীমাহীন নির্যাতনের শিকার মুমূর্ষ এক গৃহবধু’কে ৯৯৯ এর সহায়তায় উদ্ধার করে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গত শনিবার বিকাল ৩টায় সীমাহীন নির্যাতনের পর বিনা চিকিৎসায় বন্ধি দশা থেকে ওই গৃহবধু’কে রাত আড়াইটার দিকে উদ্ধার ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভিকটিম গৃহবধুর নাম সুরাইয়া (২০)। তিনি চিতলমারী উপজেলার বড়গুনী গ্রামের জাকির মোল্লার ছেলে সাইফুল ইসলামের স্ত্রী ও মোল্লাহাট উপজেলার চরকুলিয়া গ্রামের পান্না মোল্লার মেয়ে।
চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধু জানান, প্রায় তিন বছর পূর্বে সাইফুল ইসলামের সাথে তার বিয়ে হয়। ১৯ মাস বয়সের তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের শুরু থেকেই যৌতুকের জন্য তাকে নির্যাতন করে স্বামীসহ শশুর কুলের সকলে। সম্প্রতি ঘুর্ণি ঝড় সিত্রাং এর বৃস্টিতে শশুর বাড়ির ধানসহ লেপ-কাথা ভিজে যায়। ঘটনার দিন শনিবার সবকিছু রৌদ্রে শুকানো হয়। ওই সময় স্বামী, শশুর, শাশুড়ী গালি-গালাজ করে বলে, দরকার মতো (পর্যাপ্ত) টাকা দিতে না পারায় ওই সব ভিজেছে, এবং এর সকল দোষ গৃহবধুর। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে জবাব দেয়ায় গৃহবধুকে প্রথমে লাঠি পেটা শুরু করে স্বামী সাইফুল ইসলাম। এসময় বাচার জন্য দৌড়ে পালানোর চেস্টা করলে ধরে ফেলে দেবর মোহাম্মাদ মোল্লা (২৪)। তখন দেবরের পায়ে ধরে বাচার আকুতি জানালেও কর্ণপাত না করে গলা টিপে ধরে সে। এমন সময় শশুর জাকির মোল্লা ও ননদের বর কায়ূম একযোগে এলোপাথাড়ী লাথি মারধর করে। এরপর টেনে-হিচড়ে ঘরের মাধ্যে নিয়ে গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পৈশাচিক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে অচেতন অবস্থায় ঘরের মধ্যে বন্ধি রাখে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করেন ভিকটিম সুরাইয়া।
৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহযোগিতায় ভিকটিম’কে উদ্ধারকারী চরকুলিয়া গ্রামের নিজাম মোল্লা জানান, প্রথমে মোবাইলে জানতে পারেন যে, তার ভাইঝি সুরাইয়াকে মারপিট করা হয়েছে। তাই তিনি ভিটিমের মা এবং কাকি’কে ওই বাড়িতে পাঠান। ওই বাড়ি পৌছলে ভিকটিমের মা এবং কাকি দু’জনকেই তারা মারতে উদ্ধত হয়। একপর্যায়ে রাতে কৌশলে ওই বাড়ি থেকে ফিরে আসেন তারা। এরপর তাদের মাধ্যমে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা ও বিনা চিকিৎসায় বন্ধি দশার বিষয়টি জানতে পেরে ৯৯৯ এ কল করেন তিনি। যার মাধ্যমে চিতলমারী থানা পুলিশের হস্থক্ষেপে ওই দিনগত রাত আড়াইটার দিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি ককরা হয়।
নারী নেত্রী ও দ্বীপ মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান দিল ফারজানা ফারুকী বিথী বলেন, এটা অত্যন্ত ন্যাক্কার জনক ঘটনা। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান ভিকটিম নারীর পাশে থাকবেন এবং এঘটনার যথাযথ বিচার দাবীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
এছাড়া স্থানীয় ’রংধনু নারী উন্নয়ন সংস্থা’ এর পক্ষ থেকেও ভিকটিম’কে নির্যতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানোসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবীতে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জরুরী হস্থক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।