মোল্লাহাটে স্ত্রীকে তাড়িয়ে অবশেষে শিশু পুত্র হত্যা এবং নিজে আত্মহত্যার অভিযোগ

মোল্লাহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের মোল্লাহাটে লোভী মা ও বাবার দাবিকৃত যৌতুকের মটরসাইকেল না পেয়ে স্ত্রীকে তাড়িয়ে দিয়ে অবশেষে নিজের আড়াই বছরের শিশু পুত্রকে হত্যা করে গলায় ফাঁস নিয়ে হায়দার মোল্লা (২৮) নামে এক যুবক আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বড়গাওলা গ্রামে হায়দার মোল্লার নিজ বসত ঘরে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এঘটনায় শিশু পুত্র ও পিতার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

হায়দার মোল্লা ওই গ্রামের ছলেমান মোল্লা ও হেনা দম্পতির ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হায়দার মোল্লা নিজের বসত ঘরে প্রথমে তার আড়াই বছরের শিশু পুত্র জিসান মোল্লাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। এরপর হত্যা ও নিজের আত্মহত্যার বিষয়ে অন্য কেউ দোষী নয় এমন চিরকুট লিখে। পরে একই ঘরের ফ্যানের সাথে মাফলার দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপর ডাকাডাকি করেও তার সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলা হয়। এরপর ঝুলন্ত অবস্থায় হায়দার মোল্লার ও খাটের উপর শোয়ানো তার শিশু পুত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ সংবাদ সংগ্রহে ওই বাড়িতে গেলে হায়দার মোল্লার বাবা ও মা অসুস্থ থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নাই। তবে, হায়দার মোল্লার ছোট ভাই রতন মোল্লা (২৩) জানান, তার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করে দীর্ঘ ৮/৯ মাস পূর্বে ভাবী চলে যায়। পরের দিন আমি নিজে আনতে যাই, আমার সাথে না আসায় পরে মুরব্বিরা যায়, তবু ভাবী আসে নাই। এর ৫/৬ মাস পরে আজ থেকে প্রায় এক/দেড় মাস পূর্বে আমাদের বাড়ি আসে এবং আবার চলে যায়। প্রতিবার আমার ভাতিজা জেতে না চাওয়ায় তাকে রেখে যায়। এছাড়া ঝগড়া এবং চলে যাওয়ার কারণ জানেন না বলেও উল্লেখ করেন রতন মোল্লা।

উপজেলার হাড়িদাহ গ্রামে হায়দার মোল্লার শশুর বাড়ী গেলে তার শোকাতুর স্ত্রী রানী ওরফে জোবাইয়া (২২) বলেন, বিয়ের শুরু থেকেই মটর সাইকেল চেয়ে না পেয়ে আমার শাশুড়ি ও শশুর আমাকে বন্দী দশায় রাখে। বাবার বাড়ি বেড়াতে আসতে না দেয়া এমনকি মোবাইলে কথা বলতে দিতনা। আমার স্বামী যতটা তার চেয়ে অনেক বেশি আমার শাশুড়ি ও শ্বশুর নির্যাতন করেছে। আমার শিশু পুত্র রেখে আমাকে বাবার বাড়ি আসতে বাধ্য করেছে। কোনো ভাবেই আমার ছেলেকে আমার কাছে দেয় নাই। তাছাড়া আমাকে তাড়িয়ে আমার স্বামী ঢাকা থাকে।ঘটনার দিন আমার স্বামীকে মোবাইলে আমার শাশুড়ি বলেছে, তোর ছেলের যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারবো না তুই যা পারিস তাই কর। এরপর শুক্রবার সকালে বাড়িতে পৌঁছে সন্ধ্যায় আমার ছেলেকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করে।
হায়দার মোল্লার শশুর মোঃ কামরুল মোল্লা জানান, বিয়ের সময় মটর সাইকেল দেয়ার কথা ছিল না, তবু মোটরসাইকেল দাবিতে আমার মেয়েকে সীমাহীন অত্যাচার নির্যাতন করে তার শিশু পুত্রকে রেখে তাড়িয়ে দেয়। আর এর মূলে আমার বিয়াই বিয়ান (মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি)। এর বিচার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

থানা অফিসার ইনচার্জ সোমেন দাশ জানান, শিশু পুত্র হত্যা ও পিতার আত্মহত্যা সংবাদের ভিত্তিতে ইং ২৮/১০/২২ তারিখ রাত অনুঃ ৮ টার সময় মোল্লাহাট থানা পুলিশ বড় গাওলা সাকিনস্থ নিজ বসত ঘর হতে মোঃ হায়দার মোল্যা (২৮), পিতা-সলেমান মোল্যা, সাং-বড়গাওলা, থানা-মোল্লাহাট, জেলা-বাগেরহাট ও শিশু পুত্র জিসান (২বঃ ৬মাস) এর মৃতদেহ উদ্ধার করেন। মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতপূর্বক পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এছাড়া সহকারী পুলিশ সুপার, ফকিরহাট সার্কেল দ্রুত উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *