মাগুরায় ভ্যান চালক থেকে কোটিপতি, মুক্তিযোদ্ধার ইট ভাটা জবরদখলের অভিযোগ

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা সদর উপজেলার বাগবাড়িয়া গ্রামের মিলন মোল্লা ভ্যান চালক থেকে হয়েছেন কোটিপতি। তার বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন মোল্লার এমআরবি ইট ভাটা জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। সে ও মোহন মোল্লা ১ বছরের লিজ নেওয়ার কথা বলে ৬ বছরের জন্য চুক্তিনামা করেন৷ প্রতিবছর ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ দেওয়ার কথা থাকলেও টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মোহন মোল্লা ১৬ জুন ২০১৯ তারিখে ওই মুক্তিযোদ্ধার ইট ভাটা দখল ছেড়ে দিলেও মিলন মোল্লা দল ছাড়েনী । এখনো অবৈধভাবে দখল করে আছে ভাটাটি।
মিলন মোল্লা লিজ নেওয়া ইট ভাটায় গড়ে তুলেছে গরুর খামার। এখন মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবার ইট ভাটাটি ফেরত চাইলে দেওয়া হচ্ছে প্রাননাশের হুমকি। ওই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মামুন মোল্লা এখনো মিলন মোল্লার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ভয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারের কেউ রাস্তায় পর্যন্ত বের হতে পারছেনা। বাধ্য হয়ে মুক্তিযোদ্ধা তাঁর ভাটাটি রফিকুল ইসলামের নিকট লিজ দেয়। চুক্তিনামা থাকা সত্বেও সে ভাটাটি দখলে নিতে পারছেনা। এছাড়া মিলন মোল্লার সাথে অপর ভাটা ব্যবসায়ী মুরাদ ও তুরানসহ অনেক ভাটা মালিক বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে ওই জমিতে পুকুর খনন করে ধ্বংস করছে ফসলি জমি৷ জমির মালিক জমি ফেরত চাইলেই দেওয়া হয় প্রান নাশের হুমকি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার বাগবাড়িয়া গ্রামে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ইট ভাটা। সরকারিভাবে ইট ভাটাগুলো অবৈধ হলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর ব্যবসা করছেন এ সকল ইট ভাটা ব্যবসায়ীরা। কয়েক বছর আগে মিলন মোল্লা ভ্যান চালাতো। পরে ভাটার ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। একটি সময় তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন মোল্লার কাছ থেকে এমআরবি নামক ইট ভাটাটি লিজ নেন। ২ বছরের কথা বলে ৬ বছরের একটি চুক্তিনামা করেন। চুক্তিনামা অনুযায়ী প্রতি বছরের ভাড়ার টাকা দেওয়া হচ্ছে না।
মিলন মোল্লার বিরুদ্ধে এলাকায় অভিযোগের শেষ নেই। সে ও তার পরিবার এখনো সক্রিয় বিএনপি রাজনীতি করেন এবং নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। সে এলাকায় ত্রাস হিবেবে পরিচিত। মাগুরা সদর থানা পুলিশের এসআই ইমরোজের সাথে রয়েছে তার গভীর সখ্যতা।এ কারনেই মিলন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন বলেন, মিলন মোল্লা আমার ভাটা ভাড়া নিয়ে কোন ভাড়া দেই না। ভাড়া চাইতে গেলেই ভাড়া না দিয়ে আমার এবং আমার পরিবারের লোকজনের হুমকি দিচ্ছে। ঢ্যাং কেটে নিবে বলে বেড়াচ্ছে। বাড়ির মেয়েরা পর্যন্ত বাইরে বের হতে পারছে না৷ আমি বাধ্য হয়ে রফিকুলের কাছে ভাটাটি ভাড়া দিয়েছি। এখন মিলন মোল্লার সাথে গফুর মোল্লা, হাই মোল্লা, আকিদুল মোল্লা, বাবলু মোল্লা, নাজমুল, রেজাউল, রাজিব, তুরাপ, মুরাদ, তুজাসহ বেশ কয়েকজন হুমকি দিচ্ছে। আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।

এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ওই ভাটা লিজ নিয়েছি। কিন্তু মিলন মোল্লার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে ইট ভাটায় যেতে পারছি না।

এ বিষয়ে কচুন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমার দেড় একর জমি মামুনের কাছে লিজ দিই। সে আমাকে নিয়মিত টাকা দিত। পরে ওই ভাটা ও আমার জমি ভূমি দস্যু মিলন মোল্লা নিয়ে নেই।
ফসলি জমিতে পুকুর কেটে আমার জমি নষ্ট করেছে। টাকা চাইতে গেলেই দেয় না। পরে বাধ্য হয়ে রফিকের নিকট লিজ দিই। এখন সে আমাকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া ও প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে সে।

এ বিষয়ে মোহন মোল্লা বলেন, মিলনের সাথে যখন আমার ব্যবসায়ী বনিবনা হয় না। সে আমার ব্যবসার সকল টাকা আত্মসাৎ করে। এক বছর পর আমি তার সাথে ব্যবসা বন্ধ করে দেই। এ সময় আমি মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিনের চুক্তিনামার ৫০% টাকা ফেরত দেঢ়ই।

এ বিষয়ে মিলন মোল্লা বলেন, আমি কারো জমি জবরদখল করিনি। আমি কারো কোন হুমকি দিচ্ছি না। আমার সাথে ৬ বছরের চুক্তি রয়েছে। এ জন্য আমি ভোগদখল করছি। আর লিজ নিলে তো ওই জমি ভোগ করার অধিকার আমার রয়েছে।

এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসআই ইমরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় তাকে চেঞ্চ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *