বলুহর মৎস্য হ্যাচারী এখন দূর্নীতির আখড়ার বসবাস! ম্যানেজার আশরাফ-উল ইসলামের বিরুদ্ধে পুকুর,জমি লিজ দিয়ে বিনা রশিদে রেনু বিক্রির অভিযোগ
সাইফুল ইসলাম ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারীর ম্যানেজার আশরাফ-উল ইসলামের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে বলুহর মৎস্য প্রজেক্ট বাংলাদেশের বৃহৎ মৎস্য প্রকল্প গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রকল্প। এটি ঝিনাইদহ জেলার কোঁটচাদপুর উপজেলার বলুহর ইউনিয়ানে অবস্থিত।পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দর্শনার্থীদের আনাগোনাও এতে রয়েছে। এ প্রকল্পে সরকারিভাবে দেশি বিদেশি বিভিন্ন মাছ নিয়ে গবেষণা করা হয় । বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মৎস্য প্রকল্প হিসেবেও এর পরিচিতি রয়েছে। এটি ১৯৭৯ সালে সর্বপ্রথম বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এই মৎস্য হ্যাচারি প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় । টানা ৬ বছরে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯৮৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এটি ঊদ্ভোদন করা হয় এবং পুরদমে মাছ চাষ শুরু হয়। প্রথমদিকে হাতেগোনা কয়েকটি প্রজাতির মাছের পোণা চাষ শুরু হলেও এখন (অর্ধ-শতাধিক) মাছের পোণা চাষ শুরু হয়।
কিন্তু থেমে নেই বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারীর ম্যানেজার আশরাফ-উল ইসলামের দূর্নীতি। একাধিক মৎস্য হ্যাচারীর মালিক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন তিনি সরকারী দামে বিক্রি করেন না মাছের পোনা। যে দামে ভাউচার লিখেন তার থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা নিয়ে থাকেন। মাছের পোনার খাদ্য না দিয়ে বিক্রি করার কারণে পোনা মারা যায় তার কোন পদক্ষেপ নেন না তিনি। এদিকে কোটচাঁদপুর ওয়েস্ট জোন ডিস্টিবেশন কোঃ লিঃ এর টাকা, পুরাতন গাড়ি মেরামতের টাকা, হ্যাচারীর নিজস্ব চারটি পুকুর লিস দেওয়া এবং হ্যাচারীর ঘাসেরজমি লিস দিয়ে সরকারি টাকা দিয়ে ঘাস কেনাসহ বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাতের ও অভিযোগ উঠেছে।
যশোর বেনাপোল সীমান্তের মৎস্য চাষি রায়হান বলেন ৫০০ গ্রাম রুই,২৫০ গ্রাম বৃগেট,২৫০ গ্রাম সিলভার মাছের রেনুর দাম নিয়েছে ৬০০০ টাকা কিন্তু আমি ভাউচার পেয়েছি মাত্র ১৯০০ শত টাকার।
এবিষয়ে হরিনাকুন্ড মৎস্য খামারী আনন্দ বলেন আমি রেনু পোনার দাম জিজ্ঞাস করলে বলেনি পরে আমার নিকট থেকে বাটা মাছের পোনা নিয়েছে ৩০০০ টাকা এবং রুই মাছের রেনুর দাম নিয়েছে ১২০০০ টাকা কিন্তু ভাউচার দিয়েছে শুধুমাত্র ১৯০০ টাকার।
অন্যদিকে আলমডাঙ্গার মৎস্য খামারী আছের আলী,ইউনুসের দুই ভাই বলেন, দামের কোন ঠিক নাই,আমার নিকট ধেকে ২৫০০ নিয়েছে। পোনা পানিতে ছাড়ার সাথে সাথে মারা গিয়েছে।
এদিকে মাগুরার মৎস্য খামারীর মালিক ইউসুফ বলেন আমাদের নিকট সরকারি দাম বলেনা কখনো ৫০০ টাকা কখনও নেই ৩০০০ টাকা ।আবার সিলভারের রেনু পোনা আনলে বাটা হয়ে যায়,বাটার পোনা আনলে মৃগেল মাছ হয়ে যায়।
মহেশপুর উপজেলার মৎস্য চাষি মিন্টু বলেন আমরা মহেশপুরের মৎস্য চাষীরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ আমাদের কোনরকম সুবিধা দেয়না বরং আমাদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, কোটচাঁদপুর বলুহর মৎস্য হ্যাচারীর ম্যানেজার আশরাফ-উল ইসলামের দূর্নিতির অনেক অভিযোগ আছে। তিনি বিদ্যুৎ অফিসের বিলের ভাউচার করেন দুইটা সরকারি খাতায় দেখিয়ে বিল উঠান একটা বিদ্যুৎ অফিসে পরিশোধ করেন অন্যটা। এদিকে পুরাতন গাড়ি মেরামতের নামে, হ্যাচারীর নিজস্ব চারটি পুকুর লিস এবং হ্যাচারীর ঘাসেরজমি জিয়া নামের এক দিনমজুরের কাছে লিস দিয়ে সরকারি টাকা হতে ঘাস কেনাসহ বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাতের ও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারী গ্রামের মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বলুহর মৎস্য হ্যাচারীতে সিনিয়র দিনমজুর হিসাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। বর্তমান এই আশরাফ-উল-ইসলামের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়েই আমার প্রতি বিভিন্ন রকম ভাবে সে টর্চার করে আমাকে চাকুরী থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। তিনি হ্যাচারীর কর্মচারীদের আমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন, আমার সাথে কথা বললে তাদের চাকুরী থাকবে না এমন ভয়ও দেখান তাদেরকে।
তিনি আরও জানান, ২০২০ সালে উৎপাদন খাতের বাজেট ছিল ৪৩ লক্ষ টাকা সেখানে মাস বিক্রি হয় এক কোটি টাকার বেশি। এদিকে ২০২১ সালে উৎপাদন খাতের বাজেট ছিল ৪৫ লক্ষ টাকা সেখানে মাস বিক্রি হয় ১ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকারও বেশি। এই হ্যাচারীর ম্যানেজার আশরাফ-উল-ইসলাম প্রতিনিয়ত হ্যাচারী থেকে বিনা রশিদে মাস বিক্রি করতেন। এগুলোর বাঁধা দিতে গেলে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকির তোপেও পড়তে হতো।
তিনি আরও বলেন, ব্লুড ব্যাংক নামের ২৬ নং পুকুর থেকে রেনু বিক্রি করার রাইট আছে কিন্তু উৎপাদন কেন্দ্রে যে ব্লুড উৎপাদন হয় তা বেচার কোন রাইট নেই। তিনি এগুলো রশিদ বিহীন এই রেনু বিক্রি করেন। এটা বলতে গেলেই আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেখায়। সুতরাং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি প্রশাসনের নেক দৃষ্টি দিয়ে এই বাংলাদেশের এতো বড় সম্পদ রক্ষা করার জন্য আমি দেশের প্রত্যেটি মানুষের পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি
এবিষয়ে আরেক দিনমজুর ইউনূস আলী বলেন, বলুহর হ্যাচারীর ম্যানেজার আশরাফ-উল ইসলামের বিরুদ্ধে সত্য কথা বললেই চাকুরী বিভিন্ন কৌশলে হারাতে হয়। যেমন আমাকে ও এক কৌশলে হারাতে হয়েছে চাকুরী। সুতরাং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ রইল প্রশাসনের নিকট।
এবিষয়ে কোটচাঁদপুর বলুহর মৎস্য হ্যাচারীর ম্যানেজার আশরাফ-উল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এ কথার কোন ভিত্তি নেই। বরং এখানে যা আয় উপার্জন হয় তাদিয়ে সবদিক সামলানো লাগে।
এবিষয়ে যশোর মৎস্য প্রকল্পের পিডি আলফাজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করে ম্যানেজার আশরাফ-উল ইসলামের প্রশংসা করেন। যদি তিনি অপরাধী সাব্যস্ত হন সে ক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থা নিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি খুব ভালো মানুষ ভাই , যদি তথ্য সঠিক হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।