১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ সনদ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ ছেলেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি, অব্যহতি শাস্তি দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের

ডেস্ক রিপোর্ট : ভোলায় নামের মিল থাকায় এক মুক্তিযোদ্ধার সনদে দুই ব্যক্তির
ভাতা উত্তোলনের চাঞ্চল্যকর তথ্য অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে। নামের মিলের সুযোগ
নিয়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে মাসিক ভাতা হিসাবে ১৩ বছরে ১৫ লাখ
টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি কোটায় ৩ ছেলের সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার
অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে একজনের চাকরি হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে, অপর দুজন পুলিশ কনস্টেবল
পদে।

জেলা সদরের ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চন্দ্র প্রসাদ এলাকার কাজী রুহুল আমিন (রুহুল
আমিন কাজির) বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমীন। তিনি দৌলতখানের রাধাবল্লভ এলাকার
রুস্তম আলী কাজীর ছেলে। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে ভুয়া রুহুল আমিনের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। এ সময় তিনি প্রমাণপত্র হিসাবে তথ্য
উপস্থাপন করেন। জেলা প্রশাসকের কাছে করা অভিযোগপত্রে এই রুহুল আমীন উল্লেখ করেন,
তার এমআইএস মুক্তিযোদ্ধা নম্বর ০১০৯০০০১২৮৪। লালমুক্তিবার্তা নম্বর ৬০৪০৭০০৯০।
তারিখ ১৩ জানুয়ারি ১৯৯৯। বেসামরিক গেজেট ৬৫৬। পৃষ্ঠা ১৪৮১, তারিখ ১৭ এপ্রিল
২০০৫।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিযুক্ত কাজী রুহুল আমিনের ভোটার তালিকার সিরিয়াল নং
০০৯৪। ভোটার নম্বর ০৯০১৭৮১৯৯১৯২। পিতার নাম রয়েছে ছেলামত কাজী। তার মা ফিরোজা
বেগমের ভোটার সিরিয়াল নং ০০৫৫। ভোটার নং ০৯০১৭৮১৯৯০৯৭। ফিরোজা বেগমের
স্বামীর নাম ছেলামত কাজী। ফলে অনুসন্ধানে প্রকাশ পায় এই রুহুল আমিনের পিতার নাম
ছেলামত কাজী হলেও তিনি সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রুহুল
আমীনের নাম ও পিতার নামসহ মুক্তিযোদ্ধার সনদের কপি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে ভাতা
উত্তোলনসহ সব সুবিধা গ্রহণ করছিলেন।
তার তিন ছেলের মধ্যে আলী আকবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পান। অপর
দুজন ২০১৮ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হওয়া মো. মিজানুর রহমান এবং এর আগে
চাকরি হয় আলী আজগরের। তাদের নিয়োগের সময়ও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল
বলে অভিযোগ রয়েছে। ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান,পুলিশের
নিয়োগে তথ্য গোপন ও জালিয়াতির আশ্রয় নিলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তারা বিষয়টি তদন্ত করবেন।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক তৌফিক ইলাহী চৌধুরী
বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক সুজিত
হাওলাদারকে নির্দেশ দেন।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র
সহসভাপতি দোস্ত মাহামুদ অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সরকারের দেওয়া মুক্তিযোদ্ধার ভাতার
টাকা ফেরতসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একই দাবি করেন ডেপুটি
কমান্ডার সফিকুল ইসলাম ও স্থানীয় গণ্যমান্য মুক্তিযোদ্ধারা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে,
রুহুল আমিন কাজী, পিতা ছেলামত কাজী কোনো মুক্তিযোদ্ধা নন। অপরদিকে ভোলা সদর
উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর ও সোনালী ব্যাংকে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, ভেলুমিয়ার
এই কাজী রুহুল আমিন ছবিসহ মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত রয়েছেন।
ভোলার সোনালী ব্যাংকের হিসাব নম্বর ১০০০১৭৩১৭। ২০১৩ সাল থেকে তিনি নিয়মিত
ভাতা গ্রহণ করছেন। ওই ব্যাংক হিসাবে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত ১৮ লাখ ১১ হাজার
৯১৭ টাকা জমা হয়। সম্প্রতি ই-পেমেন্টের জন্য এমআইএস ডাটাবেস সিস্টেমে
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নকালে কম্পিউটার সফটওয়্যার ওই ডেটা গ্রহণ করেনি।
অনুসন্ধানে এই রুহুল আমিনের ব্যবহৃত লালমুক্তিবার্তার নম্বর খুঁজতে গিয়ে
বীর মুক্তিযোদ্ধা তথ্য ব্যবস্থাপনার সিস্টেমে দেখা গেছে অপর এক ব্যক্তির ছবি। নাম রয়েছে
রুহুল আমীন, পিতার নাম রুস্তুম আলী কাজী, মায়ের নাম জুল সেতারা বেগম। ঠিকানা
দৌলতখান উপজেলার রাধাবল্লভ কাজী বাড়ি। এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে দৌলতখান
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে গেলে নির্বাহী অফিসার তাৎক্ষণিক সোনালী ব্যাংক
দৌলতখান শাখাকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।
ওই দপ্তরে উপস্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম খান, এই রুহুল আমীন মুক্তিযোদ্ধা
বলে শনাক্ত করেন। সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার জানান, ওই ব্যক্তি নিয়মিত ভাতা উত্তোলন
করেন। এই রুহুল আমীন বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন।
তিনি জনতা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। তার সনদ ব্যবহার করে ভেলুমিয়ার
কাজী রুহুল আমিনের ভাতা নেওয়া ও তিন ছেলেকে সরকারি চাকরি দেওয়া, অপর একজনকে
নাতি বানিয়ে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি শুনে হতবাক হন ব্যাংকার রুহুল আমীন। ভেলুমিয়ার
এই কাজী রুহুল আমিন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে জানান, তার বাড়ি ছিল
দৌলতখানের চরপাতা এলাকায়। নদীভাঙনের পর ৩০ বছর আগে তিনি ভোলার ভেলুমিয়ায়
বাড়ি করেন। তার কাছে মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তিনি তা
দেখাতে পারেননি। প্রত্যুত্তরে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ছেলেদের চাকরি হওয়ায় ম‚ল সনদ
জমা দিতে হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *