শিক্ষার্থী না থাকলেও এমপিওভুক্ত

জসীম উদ্দিন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : বিদ্যালয়ের অবকাঠামো বলতে কয়েকটি আধাপাকা ঘর। শ্রেণিকক্ষের নেই দরজা-জানালা, নেই বেঞ্চ-চেয়ার। শিক্ষার্থী বাস্তবে না থাকলেও আছে কাগজে কলমে। কয়েক বছর ধরে ক্লাস হয় না। এমনকি সাইনবোর্ডও নেই। অথচ ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে এমন কয়েকটি বিদ্যালয়ের নাম এমপিওভুক্তির তালিকায় উঠেছে।

জানা গেছে, ৬ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এমপিওভুক্তির তালিকায় রাণীশংকৈল উপজেলার চারটি নিম্নমাধ্যমিক ও তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে হোসেনগাঁও ইউনিয়নের কলিগাঁও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলিগাঁও নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বাচোঁর ইউনিয়নে ভি এইচ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাতোর ইউনিয়নে প্রয়াগপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে।

এছাড়া স্তর পরিবর্তন হয়েছে কাশিপুর ইউনিয়নের মহারাজাহাট উচ্চবিদ্যালয়, আলশিয়া ভোকরগাঁও ও জগদল উচ্চবিদ্যালয়ের। এর মধ্যে কয়েকটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হয় না। শিক্ষার্থী আসে না। এ ছাড়া অবকাঠামোর দশা হযবরল।

ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদনের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী উপস্থিতির খাতা, বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল, অবকাঠামো ঠিকঠাক দেখানোর কথা রয়েছে। তবে কাগজে কলমে ঠিকঠাক লেখা হলেও বাস্তবে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে, এমপিওভুক্ত হওয়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

হোসেনগাঁও ইউনিয়নের কলিগাঁও বালিকা উচ্চবিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির সামনে কোনো সাইনবোর্ড নেই, দূর থেকে দেখে বোঝা যাবে না এটি কোনো বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে তিনটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, তবে সেগুলো অর্ধনির্মিত, নেই দরজা-জানালা, মেঝে মাটিতে ভরা। শ্রেণিকক্ষে একটিও চেয়ার কিংবা বেঞ্চ নেই।

স্থানীয় লোকজন জানান, কলিগাঁও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কয়েক বছর ধরে ক্লাস হয় না। কোনো শিক্ষার্থীও আসে না। ইতিমধ্যে কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি বিদ্যালয়ে।

কলিগাঁও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জমিরউদ্দীন বলেন, তিনটি ক্লাসরুম রয়েছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৫ জন, শিক্ষক-কর্মচারী মিলে ১১ জন। বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হতো, বর্তমানে বিদ্যালয় ছুটি তাই চেয়ার-বেঞ্চ নেই। বিদ্যালয় খুললে আবার চেয়ার-বেঞ্চ নিয়ে আসা হবে।

একইভাবে বাচোঁর ইউনিয়নের ভিএফ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয় এলাকায় কোনো সাইনবোর্ড নেই। অবকাঠামো বলতে তিনটি ঘর তাতে কিছু চেয়ার-বেঞ্চ রয়েছে। তবে তা ময়লা-আবর্জনায় ভরা।

বিদ্যালয়ের আশপাশের বাড়ির কয়েকজন তরুণী জানায়, তারা এই বিদ্যালয়ে পড়ে না, কারণ এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আসেনা। তারা তিন কিলোমিটার দূরে মীরডাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।

ভিএফ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, ‘বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয়। তবে ছুটির কারণে একটু ময়লা-আবর্জনা হয়েছে। আমরা সব ঠিক করে ফেলব।’

জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৈয়ব আলী বলেন, শর্ত ভাঙার সুযোগ নেই। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। বিদ্যালয় খুললেই সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *