ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে ভয়াবহ যানজটের শঙ্কা
ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদযাত্রায় রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে যানজটের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের অন্যতম পথ উত্তরা, টঙ্গী ও গাজীপুর সড়কে বড় বড় গর্ত রয়েছে। সেখানে এখনই যানজট হচ্ছে। সায়েদাবাদ এলাকায় সিটি করপোরেশনের কাজ চলায় সেখানে একই ধরনের সমস্যা রয়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে সায়েদাবাদ ও আশপাশ এলাকায় গাড়ির চলাচল বেড়েছে। ঈদে তা আরও বেড়ে যানজটের তৈরি হতে পারে।
এমনকি মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে তা চলে আসতে পারে। এছাড়া মেঘনা সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের টোলপ্লাজায় টোল দিতে গিয়ে গাড়ির দীর্ঘ সারি হতে পারে। আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সোমবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আয়োজিত সভায় কয়েকজন বক্তা এসব আশঙ্কার কথা জানান।
সভায় রুট পারমিটবিহীন ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস দূরপাল্লার রুটে চলাচল, পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রীবহন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ঈদের আগে ও পরে সাত দিন পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ও আলোচনা উঠে আসে। ঈদের বাড়তি যাত্রীর চাপ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিআরটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
যানজটের শঙ্কা প্রসঙ্গে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, সড়কের ভাঙাচোরা থাকার বিষয়টি সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই দেখভাল করছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের রাস্তা দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন সেতুমন্ত্রী। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবসহ আমরা সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল পর্যন্ত পরিদর্শন করেছি। সেখানেও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩২টি পয়েন্টে ১০০টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে সড়কের যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী সভাপতি আবুল কালাম বলেন, সড়কের যে অবস্থা তাতে ঈদযাত্রায় ভয়াবহ যানজট তৈরি হবে। এখনই যানজট শুরু হয়েছে। টঙ্গী থেকে কলেজগেট পর্যন্ত রাস্তায় বড় বড় ভাঙ্গা রয়েছে। রোববার বৃষ্টির পানিতে ওইসব ভরে যায়। তখন পড়ে গাড়ি নষ্ট হয়। আমি তিনটি গাড়িকে ভাঙ্গায় পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে দেখেছি। এভাবে চললে ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে বের হতেই কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। এ সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ সড়ক ঠিক হয়ে যাবে। পাল্টা জবাবে আবুল কালাম বলেন, এখনই ঈদের যাত্রী যেতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার ভয়াবহ যাত্রী চাপ পড়বে। তিনি দ্রুত এ রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান।
সায়েদাবাদ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সায়েদাবাদ এলাকায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। যাত্রীবাহী ছাড়াও পণ্যবাহী গাড়ি আশপাশ এলাকায় পার্কিং করে। এতেও সড়কে যানজট হয়। এছাড়া সায়েদাবাদ টার্মিনালের কাছাকাছি সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে জানিয়ে তা দ্রুত শেষ করার দাবি জানান। ওই সড়কের কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোশাররফ বৈঠকে জানান, অন্যবারের ঈদের মতো এবারও সাত দিন সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পশুবাহী ট্রাক চলাচল করায় রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকবে। মেঘনা সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের টোলপ্লাজায় টোল দিতে গিয়ে যানজটের তৈরি হতে পারে। সেখানে বুথ বাড়াতে হবে।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদে গণপরিবহণের সংকটের সুযোগে লক্কড়-ঝক্কড় বাসে যাত্রী বহন করা হয়। বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। এসব গাড়ি যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ডেকে তোলে। এসব গাড়ির কারণে গাবতলী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালে যানজট তৈরি হয়।
সভায় বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার আরও বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রুট পারমিট নেই এমন বাস চলতে পারবে না। মোটরসাইকেল ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং। পুলিশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। চেকপোস্টগুলো সচল রাখতে হবে।
মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধিসহ ১২ নির্দেশনা, সড়কে দাঁড়াবে না গাড়ি : পবিত্র ঈদুল-আজহা উপলক্ষ্যে অনেকেই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকে যাওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া গাড়ি ও যাত্রীদের জন্য ১২টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সড়কে চলাচল নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন করতে যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা বন্ধসহ এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-ঢাকা মহানগরীতে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সড়কে বাস রেখে বা থামিয়ে যাত্রী ওঠানো যাবে না। যাত্রীরা টার্মিনালের ভেতরে থাকা অবস্থায় বাসের আসন গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট বাসের প্রতিনিধিদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকা মহানগরীতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো টার্মিনাল সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে দাঁড়াবে না। ভ্রমণকালে ঢাকা মহানগরের প্রবেশ ও বাহিরপথের গণপরিবহনগুলোকে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে, যেন কোনো অযাচিত যানজটের সৃষ্টি না হয়।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ঢাকা মহানগরী থেকে যাওয়া দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আন্তঃজেলা পরিবহণের যাত্রীরা বা গমনপ্রত্যাশীদের প্রধান সড়কে এসে অপেক্ষা বা দাঁড়িয়ে না থেকে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করতে হবে। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার রুটপারমিটবিহীন বা অননুমোদিত রুটে কোনো বাস চলাচল করবে না। কোনো যানবাহনই ছাদের ওপর অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবে না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
ট্রাফিক নির্দেশনায় যাত্রীদের বাসের ভেতর অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। চলাচলের সময় যাত্রীদের যানবাহনের টিকিট সঙ্গে রাখা এবং মালামাল নিজ হেফাজতে রাখতেও বলা হয়। সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং জীবনহানির আশঙ্কা এড়াতে যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বাসের চালকদের অসম প্রতিযোগিতায় অংশ না নিতে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়। করোনার ঊর্ধ্বগতি চলছে বিধায় পরিবহণ চালক ও যাত্রী সবাইকেই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যাতায়াতের আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
এছাড়া যে কোনো প্রয়োজনে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম : ০১৭১১-০০০৯৯০ অথবা জাতীয় জরুরি সেবা: ৯৯৯-এ ফোন করার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।