ঝিনাইদহে‘গলার উপর পা দিয়ে চেপে মারধর করা হলো এক যুবককে’

লালন মন্ডল,ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ শহরের হামদহ কাঞ্চনপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের অভিযান বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কোন প্রকার এ্যাপ্রোন বা সরকারি পোষাক না পড়ে এক যুবককে ধরে মারধর করার স্থানীয়রা তাদের বাঁধা দেয়। পরে পরিচয় দিলে স্থানীয়রা থেমে গেলেও ওই যুবকের গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমনকি সে সময় ওই যুবকের ভাই পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও তার মা’কে মারধর করা হয়। তাদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে ওই এলাকার ওবাইদুর রহমান মাসুদ। সোমবার বিকেলে মধ্যপাড়ার একটি নির্বাচনী ক্যাম্পের কাজ করছিল ওবাইদুর রহমান মাসুদের ছোট ভাই আশিকুর রহমান রবু। বিকাল ৩ টার দিকে ৩ জন ব্যক্তি সেখানে গিয়ে রবুকে মারপিট করে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে টানা-হেচরা শুরু করে। তাদের বেধঢ়ক মারপিট দেখে তার ভাই মাসুদ ও তার মা শামসুন্নাহার সেখানে উপস্থিত হয়ে মারধরে বাঁধা দেয়। একপর্যায়ে তাদেরকেও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তারা নিজেদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের লোক পরিচয় দিলে মাসুদসহ অন্যান্যরা পিছিয়ে যায়। সেখানে রবুর কাছ থেকে ৪ পিচ ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন তারা। এক পর্যায়ে বিষয়টি সাজানো নাটক দাবী করলে মাদকদ্রব্যের আরও কিছু লোকজন এসে কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদকে মারপিট করতে করতে গাড়িতে তুলে নিয়ে। পরে হামদহ আলহেরা ক্লিনিকে সামনে এসে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে ছেড়ে দেয়। মারধরে মাসুদ গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক বলেন, মাদকদ্রব্যের লোকজন এসেই রবুকে মারধর শুরু করে। তাদের পরিচয় চাওয়া হলে তারা প্রথমে পরিচয় দেয়নি। রবুকে খুবই মারধর করে। সেই ঘটনার ভিডিও করলে তারা মোবাইল কেড়ে নিয়ে যায়।
স্থানীয় ভাবে সংগৃহীত ভিডিওতে দেখা যায়, যুবক রবুকে মাটিতে ফেলে গলার উপর পা তুলে ধরে রেখেছে একজন। আর অন্যজনকে মারধর করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে আহত মাসুদ বলেন, আমি নির্বাচনে দাড়িয়েছি। যে কারণে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী মাদকদ্রব্যের লোকজনকে টাকা দিয়ে আমার ভাইকে ইয়াবা দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের কাছে ইয়াবা যদি পাওয়াও যায় তবুও ওভাবে মাটির উপর ফেলে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে মারধর করা কোন আইনে আছে। তারা আমার বৃদ্ধা মাকেও মারধর করেছে। আমাকে মেরে রক্তাক্ত করেছে।
ঘটনার পর পরই সেখানে উপস্থিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সকলেই স্বোচ্চার হতে হবে। তবে আমি মনে করি আজ মাদকদ্রব্যের লোকজন যা করেছে তা ঠিক করেনি। পৌরসভায় নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা চলছে। এর মধ্যেই থানাকে না জানিয়ে এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একজন প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মিন্টু আরও বলেন, ঘটনার পর আমি সহকারী পরিচালককে ফোন করেছিলাম। তিনি নাকি অভিযানের কোন ঘটনাই জানেন না। তাহলে তাকে না জানিয়ে, থানাকে না জানিয়ে তাকেও না জানিয়ে এমন একটি অভিযান করা মানে কিছু স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলক মজুমদার বলেন, আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায়। রবুর কাছ থেকে আমরা ৪ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করেছি। আসামী নিয়ে আসার সময় তার লোকজন আমাদের উপর চড়াও হয়। মারধরের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। মোবাইল কেন নিয়ে এসেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিডিও করার সময় যারা ভিডিও করছিল তারা আমাদের পরবর্তীতে ভিডিও দেখে মারধরের হুমকি দিচ্ছিল। তাই মোবাইল নিয়ে এসেছিলাম। পরে মোবাইল ফেরত দিয়েছি। তবে মোবাইলে রেকর্ড করা ভিডিওতে হুমকির এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *