বাস্তবায়ন হয়নি জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, জমি ফিরে পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিন’শ জমির মালিক;
নয় মাসেও উচ্ছেদ হয়নি দেবহাটার খলিশাখালীর ভূমিদস্যুরা!
মিজানুর রহমান দেবহাটা : দেবহাটার খলিশাখালী নামীয় ব্যাক্তি মালিকানাধীন ৪৩৯.২০ একর (১৩২০ বিঘা) সম্পত্তি ভূমিদস্যু কর্তৃক জবরদখলের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় নয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। গেল বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে খলিশাখালির ভূমিদস্যু বাহিনী প্রধান আনারুলের নেতৃত্বে মুর্হুমুহু বোমা ও গুলি বর্ষনের মধ্যদিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে প্রায় তিনশ মালিকের মালিকানাধীন ওই গোটা সম্পত্তি জবরদখল ও সেখানকার মৎস্য ঘেরগুলি থেকে কোটি টাকা মূল্যের মাছ লুট করে নেয় অস্ত্রধারী ভূমিদস্যু ও জবরদখলকারীরা।
দখলদারিত্ব বজায় রাখতে জবরদখলের পিছনে থাকা ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতাদের পরামর্শে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং প্রশাসনকে বোকা বানাতে রাতারাতি খলিশাখালী বিস্তৃর্ণ জমিতে তুলে দেয়া হয় ‘মুজিবনগর ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্র’ নামের একটি সাইনবোর্ড।
দখলদারিত্বে নের্তৃত্বসহ খলিশাখালীতে অবস্থানরত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের অধিকাংশরাই বিএনপি ও জামায়তের সক্রিয় নেতা-কর্মী। ভূমিদস্যু আনারুলের নেতৃত্বে বর্তমানে খলিশাখালীতে অবস্থান করছে কয়েক ডজন মামলার আসামী কুখ্যাত আকরাম ডাকাতের নেতৃত্বাধীন আকরাম বাহিনী, স্থানীয় ইউপি সদস্যের একটি বাহিনী, গফুর মাস্তানের বাহিনী, মুর্শিদ ও শাহিনুরের বাহিনী এবং অহিদুল ও মনি’র নেতৃত্বাধীন বাহিনীসহ অন্তত হাফডজন অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর শতাধিক দাগী অপরাধী। জমির প্রকৃত মালিক ও প্রশাসনের উচ্ছোদাভিযান ঠেকাতে এসব ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের কথিত ভূমিহীন সাজিয়ে জবরদখলকৃত ওই ব্যাক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিতে ঘর বানিয়ে আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন জবর-দখলকান্ডের মুল হোতা আনারুল। জবরদখল পরবর্তী খলিশাখালির ব্যাক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি, শতশত বিঘা জমির মৎস্য ঘের লুন্ঠন এবং জমি বেঁচাকেনা ও হাতবদল করে গেল নয় মাসে নুন্যতম তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ভূমিদস্যু আনারুল ও সহযোগীরা।
এদিকে, জবরদখলের এ ঘটনায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি ও মৎস্য সম্পদ হারিয়ে প্রায় পথে বসেছেন খলিশাখালীর ওই সম্পত্তির অন্তত তিন’শ মালিক ও তাদের পরিবারবর্গ। একদিকে ব্যাংক ঋনের চাপ, আর অন্যদিকে জবরদখলকৃত সম্পত্তি ফিরে পেতে এবং সুবিচারের আশায় অদ্যবধি প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এসব জমির প্রকৃত কাগজপত্রধারী মালিকেরা।
জমি জবরদখলের ঘটনার দু’মাস পর অবৈধ দখলদার ও ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদে জেলা প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে জেলা প্রশাসনের সে প্রক্রিয়া পরবর্তীতে আলোর মুখ দেখেনি বলে অভিযোগ জমির মালিকদের।
জমির মালিকদের মধ্যে কাজী গোলাম ওয়ারেশ, সুরুজ ওয়ারেশ, আনারুল ইসলাম, আলহাজ্ব আনছার আলী, ডা. নজরুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা জানান, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের জেলা ভূ-সম্পত্তি জবরদখল ও পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত সভায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ জেলার শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিস্তারিত আলোচনার মধ্যদিয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, ‘খলিশাখালী নামক স্থানে ৪৩৯.২০ একর সম্পত্তি ব্যাক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি, খাস সম্পত্তি নয়। এই জমি অবৈধ দখলদারদের খালি করতে হবে। নইলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, সরকার ভূমিহীনদের খাস সম্পত্তিতে ঘর আনিয়ে দিচ্ছে। উক্ত ব্যাক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি ভূমিহীনদের দেয়া যাবেনা’। যার আলোকে গেল বছরের ৩০ জানুয়ারী খলিশাখালীর ভূমিদস্যুদের ৭ দিনের মধ্যে জমি ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করে দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন। এমনকি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবৈধ দখলদাররা জমির দখল না ছাড়ায় উচ্ছেদাভিযান পরিচালনার জন্য পুলিশ মোতায়েন চেয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। কিন্তু তারপর থেকে উচ্ছেদাভিযানের গোটা প্রক্রিয়াটি ক্রমশ স্থগিত হয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদে প্রশাসনের কোন তৎপরতাই দেখছেননা জমির মালিকেরা।
তারা অবিলম্বে আবারো ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের প্রক্রিয়া চলাকালে অবৈধ দখলদাররা উচ্চ আদালতে একটি রীট পিটিশন দায়ের করে। সেজন্য ওই সময়ে আর উচ্ছেদাভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। রীট পিটিশনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে হয়তো আবারো জমি খালি করার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।