সুন্দরগঞ্জে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের অভিযোগ
মোশাররফ হোসেন বুলু, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানে সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মা তুলে অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুঃ মাহমুদ হোসেন মন্ডলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপন-২০২২ উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম হল রুমে যান। প্রতিযোগিতা চলাকালীন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের অংশ গ্রহণকারী নয় এমন কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য সেখানে যান। শিক্ষার্থীদের আসনে বসে থাকা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী কৌশিক সরকারের নিকট গিয়ে মাহমুদ হোসেন মন্ডল জানতে চান, সে প্রতিযোগী কিনা? জবাবে ওই শিক্ষার্থী ‘না’ সূচক জবাব দেন। এতে ওই কর্মকর্তা তাকে অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কেন বের হবো শিক্ষার্থী একথা বলতেই কর্মকর্তা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন এবং শতশত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামনে ‘মাগীর বাচ্চারা’ বলে গালি দেন। একজন শিক্ষা কর্মকর্তার এমন ভাষায় গালি দেওয়াতে বিব্রত হয়েছেন উপস্থিত অভিভাবকরাও।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের এমন নোংরা ভাষার গালি দেওয়ার প্রতিবাদে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অডিটোরিয়াম হল থেকে বের হয়ে ওই কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল সহকারে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুধু এ ঘটনাই নয়, ওই কর্মকর্তা খেলাধুলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এমনকি বিভিন্ন জাতীয় কর্মসূচিতেও তিনি আমাদের সাথে অশালীন আচরণ করেন। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, শুধু আমাদের না, আমাদের বাবা, মা তুলেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমরা ইউএনও মহোদয়ের নিকট অভিযোগ করতে চাইলে ওই কর্মকর্তার অফিস সহায়ক মাজেদ আমাদের প্রথমে সন্ত্রাসী ও পরে পুলিশে দেওয়ারও ভয় দেখান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতাউর রহমান তুলক ও আঃ রউফ ওই কর্মকর্তার বিচার দাবি করে বলেন, একজন শিক্ষা কর্মকর্তা হয়ে আমার শিক্ষার্থীদের বাবা-মা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করায় আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি। শুধু তাই নয়, এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার এধরণের অশালীন কথাবার্তা বলেছেন। কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার সময়ের অশালীন কথাবার্তার ঘটনাও তারা তুলে ধরেন। এজন্য তার বিচার চাই। তারা শিক্ষার্থীদের সংযত থাকতেও নির্দেশনা দেন বলে জানান। এক পর্যায় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। উল্লেখ্য যে শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন মন্ডলকে ৫ বছর আগে এ উপজেলা থেকে বদলী করা হলেও বছর খানেক না যেতেই তদবির করে ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ইং তিনি আবারও এ উপজেলায় যোগদান করেন। সেই থেকে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।
শিক্ষার্থীদের সাথে অশালীন আচরণ ও গালি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল ড্রেস পরা শিক্ষার্থীদের বহিরাগত হিসেবে দাবি করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন মন্ডল বলেন, প্রতিযোগিতায় ছাত্রদের সাথে কিছু বহিরাগত ছাত্র অনুষ্ঠানে এসেছিল। তারা খুব যন্ত্রণা করছিল। বিচারকরা বিচার করতে পারছিল না। বলেছি তোমরা চুপ কর। বেয়াদবি করোনা। তোমরা ফাইজলামি করতে আসছো! ফাইজলামি করলে বের করে দেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফ জানান, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ ও তাদের সাথে আচরণ খারাপ করেছে। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করবো।