সুন্দরগঞ্জে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি গঠনের অভিযোগ

মোশাররফ হোসেন বুলু, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত সুন্দরগঞ্জ সদর বহুমুখী কারিগরি দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিট গঠন হয় কোনো নির্বাচন ছাড়াই।
অভিযোগে প্রকাশ, ওই প্রতিষ্ঠানে গত বছরের ২ নভেম্বর/২১ তারিখের স্মারক নং-৩৭.১০.৩২৯১.০০০.০৮.০০১.২১-১৯১ দ্বারা তফশীল অনুযায়ী মাদরাসার অভিভাবক সদস্য নির্বাচন ১২ ডিসেম্বর/২১ ইং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুড়ান্ত ভোটার তালিকায় মৃত কয়েকজন ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত থাকায় অভিভাবক সদস্য মতিয়ার রহমান সহকারী জজ আদালত গাইবান্ধায় নির্বাচনের ৩ দিন আগে ৯ ডিসেম্বর/২১ ইং ২৮৫/২১ নং (অন্য) মামলা দায়ের করলে নির্বাচনের উপর অন্তরবর্তীকালিন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন আদালত। এ আদেশের কপি আদালত থেকে ১১ ডিসেম্বর/২১ ইং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাদরাসা সুপারের নিকট পৌঁছানো হলে ১২ ডিসেম্বর অভিভাবক সদস্যের নির্বাচন স্থগিত থাকে। এরপরও বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ঢাকা থেকে চলতি বছরের ৬ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুন্দরগঞ্জ সদর বহুমূখী কারিগরি দাখিল মাদরাসা পরিচালনার জন্য (গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা ২০০৯ এর সংশ্লিষ্ট প্রবিধান অনুসারে দুই বছরের জন্য কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এ কমিটিতে সভাপতি পদে মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের নাম থাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ একাধিক নাশকতা মামলার আসামি হওয়ায় এরকম ধূর্ত ব্যক্তিকে নির্বাচন ছাড়াই গোপনে সভাপতি করা হয়েছে। কমিটি গঠনে আদালতের অন্তরবর্তীকালিন নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কমিটি অনুমোদন হলো কিভাবে তা এলাকাবাসিকে ভাবিয়ে তুলেছে। এবিষয়ে অভিভাবক সদস্য অভিযোগকারি আব্দুল মাজেদ জানান, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন উপজেলার ভুরারঘাট সিনিয়র মাদরাসায় চাকুরি করাকালে জাল-জালিয়াতির কারণে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। সেই জালিয়াত ব্যক্তি কিভাবে সভাপতি হলেন তা মেনে নেওয়া যায় না। একারণে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন বলে জানান। আদালতে মামলা দায়েরকারি মতিয়ার রহমান জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল আছে।
এ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আতাউর রহমান জানান, মাদরাসা পরিচালনা কমিটি গঠন কল্পে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রিজাইডিং কর্মকর্তা চেয়ে আবেদন করা হয়। এরপর প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিযুক্ত হওয়ার পর নির্বাচনের সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এমতাবস্থায় ১১ ডিসেম্বর/২১ ইং নির্বাচনের উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার কাগজ পেয়ে পরদিন ১২ ডিসেম্বর অভিভাবক সদস্যের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এরপর আর কিছুই জানিনা। কিভাবে কমিটি অনুমোদন হলো তাও জানিনা।
বিতর্কিত এ কমিটির সভাপতি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, অনুমোদিত কমিটির কাগজ পেয়ে জানলাম সভাপতি হয়েছি। এর বাহিরে কিছু জানিনা। উল্লেখ্য, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন পাশ্ববর্তী ভূরারঘাট এম.ইউ. বহুমুখী ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসায় প্রভাষক (আরবি) ইনডেক্স নং- ৩৯৮৪৭৪ অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তার জাল জাতিয়াতির অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত কমিটি বিভিন্নভাবে তদন্তে তার জালিয়াতির বিষয় প্রমাণিত হয়। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রীট পিটিশন নং- ৮৮০২/১৮ এর ০১/০২/২০২১ ইং তারিখের আদেশের বলে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের অধীনে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সাখাওয়াত হোসেন চাকুরিচ্যুত হন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান, সুন্দরগঞ্জ সদর মাদ্রাসায় কোনো প্রকার নির্বাচন হয়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বোর্ড থেকে কমিটি অনুমোদন পাওয়ার জন্য কোন প্রকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার স্বাক্ষরে কোন কাগজ দাখিল করে থাকলে জাল করে করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে উপেজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফ’র সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমি অবগত নই। ফাইল দেখে বলতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *