অস্ত্রধারীদের খোঁজ নেই, গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা
ডেস্ক রিপোর্ট : নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের করা এক মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করা নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম মকবুল হোসেন। তিনি নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়, আইনজীবী মকবুল গত মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর আক্রমণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলার ১ নম্বর আসামি।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
‘নিউমার্কেটের যে দোকান থেকে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে, আমরা তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় জেনেছি। সুতরাং কোনো অবস্থায় এঁদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
তবে সংঘর্ষের সময় বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হেলমেট পরা কিছু যুবককে দেখা গেছে। গণমাধ্যমে সেসব ছবি বের হয়েছে। এমনকি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদের ওপর আক্রমণেও হেলমেটধারীদের দেখা গেছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তাঁদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
নিউমার্কেট থানায় পুলিশের করা ওই মামলায় মকবুল হোসেনসহ মোট ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যরা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। এই ২৪ জনের সবাই নিউমার্কেট থানা বিএনপি ও এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী বলে জানিয়েছে দলটি। তাঁদের মধ্যে একজন মো. টিপু, তিনি যুক্তরাজ্যে আছেন, তাঁকেও আসামি করা হয়েছে বলে বিএনপির নেতারা জানান। টিপু ছাত্রদলের ঢাকা কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি।
বিএনপির দাবি, গত সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দিনভর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষে ‘ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী’ জড়িত। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ওই সংঘর্ষে ছাত্রলীগ জড়িত এবং পুলিশের ইন্ধনে এটা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ উল্টো বিএনপির নেতাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
এই ঘটনা নিয়ে গতকাল বিকেলে চাঁদপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে দিতে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন ছিল। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নিউমার্কেটের যে দোকান থেকে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে, আমরা তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় জেনেছি। সুতরাং কোনো অবস্থায় এঁদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
‘ওই সংঘর্ষে ছাত্রলীগ জড়িত এবং পুলিশের ইন্ধনে এটা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ উল্টো বিএনপির নেতাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
গত সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দিনভর নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুজনের প্রাণহানি এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বৈঠকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সমঝোতার পর নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার বিপণিবিতানগুলো খোলা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুড নামের যে দুই দোকানের কর্মচারীদের বাগ্বিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সেই দোকান দুটি মকবুল হোসেনের নামে সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ নেওয়া। তবে তিনি কোনো দোকান নিজে চালাতেন না। দোকান দুটি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।
গ্রেপ্তারের আগে মকবুল দাবি করেছিলেন, ‘বিএনপি করার কারণে’ পুলিশ তাঁকে এ মামলার আসামি বানিয়েছে। ঘটনার সময় তিনি ওই এলাকায় ছিলেন না।
‘নিউমার্কেটে কী ঘটেছে, তা সবার কাছে পরিষ্কার। সহিংসতার ঘটনার ছবি আছে, ফুটেজ আছে। সেগুলো দেখেই তদন্ত চলছে।’
তবে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা হচ্ছে না। তিনি গতকাল রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এক অনুষ্ঠানে বলেন, নিউমার্কেটে কী ঘটেছে, তা সবার কাছে পরিষ্কার। সহিংসতার ঘটনার ছবি আছে, ফুটেজ আছে। সেগুলো দেখেই তদন্ত চলছে।
নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়। মোট আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৫৭৪। যাঁদের মধ্যে ২৪ জন ছাড়া বাকি সবাই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। চারটি মামলার মধ্যে নিহত দুজনের স্বজনেরা বাদী হয়ে দুটি হত্যা মামলা করেন। বাকি দুটি মামলার বাদী পুলিশ। এর মধ্যে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, জখম ও ভাঙচুর করার ঘটনায় করা মামলায় আসামি হিসেবে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। পুলিশ অপর মামলাটি করে গত বুধবার বিকেলে ঢাকা কলেজের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায়। তাতেও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মামলায় যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে মকবুল হোসেন ছাড়া আর কাউকে তিনি চেনেন না। অন্য আসামিরা কেউ নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী নন।
গত রাতে গণমাধ্যমে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের পাঠানো এক বিবৃতিতে পুলিশের মামলায় আইনজীবী মকবুলসহ যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের সবাইকে দলীয় নেতা-কর্মী বলে উল্লেখ করা হয়। অন্যরা হলেন নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, সাবেক সহসভাপতি শাহ আলম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন হাওলাদার, যুবদল নেতা আমির হোসেন, মিজান ব্যাপারী, নিউমার্কেট থানা বিএনপি নেতা আলমগীর, মিজান, টিপু, মিঠু, শহীদুল ইসলাম, জাপানি ফারুক, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, বাবুল, জুলহাস, বাচ্চু, ছাত্রদল নেতা মিন্টু, আসিফ, শ্রমিক দলের নেতা তোহা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মনির। তাঁদের আসামি করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হেলমেট পরিহিত লোকজন যাদের দেখা গেছে, তারা কারা? এসব নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
পুলিশের ভাষ্য, সংঘর্ষের ঘটনায় উসকানিদাতা হিসেবে মকবুল হোসেনকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেন শাহ্ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে, যাঁরা এ ঘটনায় উসকানি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই দিন ধরে ঘটনা ঘটল, সবাই দেখল ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘর্ষ। ঘটনার পর তারা বিএনপিকে খুঁজে পেল।’ তিনি বলেন, ‘একজন লন্ডনে আছেন, তাঁকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে ইশরাক হোসেনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশ যে মামলা দিয়েছে, সেখানেও দেখা গেছে একজন ওমরাহ করতে গেছেন, দুজন জেলে আছেন, তাঁদেরও আসামি করা হয়েছে। তাঁরা নাকি পুলিশকে ইটপাটকেল মেরেছেন! এগুলো নাকি আইনের শাসন!’