বিচারকের বিরুদ্ধে স্ত্রীর নির্যাতনের অভিযোগ!

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক : রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলার আবেদন করেছেন তার স্ত্রী। ওই বিচারক ছাড়াও আরো তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তার আইনজীবী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২-এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামানের আদালতে আবেদনটি করেন ওই বিচারকের স্ত্রী ডা. হৃদিতা সরকার। মামলার আবেদনে যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

রংপুর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) খন্দকার রফিক হাসনাইন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আগামী বৃহস্পতিবার আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওই দিন শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা যৌতুকের মামলার শুনানি করা হবে।

বিচারকের স্ত্রী ডা. হৃদিতা সরকারে করা মামলার আসামিরা হলেন দেবাংশু কুমার সরকার (৩২), তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকার চয়ন (৬০), ফুফাতো ভাই নিলয় দে সরকার (২৭) ও চাচা রঞ্জন সরকার (৫০)। তাদের সবার ঠিকানা ময়মনসিংহরে হালুয়াঘাট উপজেলা।

এদিকে মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১১ মে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার হালুয়াঘাট পূর্ব বাজার এলাকার সুধাংশু কুমার সরকার চন্দনের ছেলে দেবাংশু কুমার সরকারের সঙ্গে একই উপজেলার উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামের নারায়ণ সরকারের মেয়ে হৃদিতা সরকারের বিয়ে হয়।

মেয়ের পরিবার জানায়, বিয়ের দিন বর দেবাংশু কুমার সরকার ও তার পরিবার কনেপক্ষের কাছে নগদ ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় হিন্দু আইনে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

কনের বাবা বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল (উপহার সামগ্রী) বরপক্ষকে দেন। বিবাহের কয়েক মাস পার না হতেই দেবাংশু কুমার সরকার নেশাগ্রস্ত হয়ে নতুন একটি প্রাইভেট কার ক্রয়ের জন্য তার স্ত্রী ডা. হৃদিতা সরকারের ওপর ৩০ লাখ টাকার চাপ দেন।

ডা. হৃদিতা সরকার আরো বলেন, তার বাবার অক্ষমতার কথা জানালে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও থেকে নেত্রকোনা হয়ে রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করলেও যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেন দেবাংশু কুমার সরকার।

তিনি আরো বলেন, স্ত্রী ও একমাত্র ছেলেসন্তানের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে দিন দিন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন তিনি। অবশেষে প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাবি করা যৌতুকের টাকা না পেয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার।

এর মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে দেবাংশু ৩০ লাখ টাকা ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী হৃদিতা সরকারের সঙ্গে সংসার না করার সিদ্ধান্ত জানান। এ নিয়ে চলতি বছরের ২৮ মার্চ ডা. হৃদিতা সরকার তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে উপস্থিত হলে তার ওপর অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুর্বৃত্ত হামলা চালানের অভিযোগও করেন।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ ২১ দিন চিকিৎসা শেষে গত ১৭ এপ্রিল রংপুর কোতোয়ালি থানায় এজাহার করতে গেলে আসামি বিচারক হওয়ায় থানা থেকে মামলা আদালতে করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। পরে হৃদিতা সরকার আদালতে বিচারকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু দমন আইনে অভিযোগ করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রংপুর-১-এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খন্দকার রফিক হাসনাইন সাংবাদিকদের বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) মামলার আবেদনের শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত। ওই দিন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *