পিডিবির অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করায় সংবাদকর্মীর বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

স্টাফ রিপোর্টার : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মিটারবিহীন সেচ পাম্পের গড়বিল নিয়ে সংবাদ প্রচার করায় সংবাদকর্মীর বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুবকর তালুকদারের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার বলেন, অফিসের সকল নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনেই তার বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী সংবাদকর্মী সরিষাবাড়ী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সামর্থবাড়ি এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের সন্তান ও দৈনিক আজকের প্রভাত পত্রিকার সংবাদদাতা তিনি। জানাযায় এস এম খুররম আজাদ সংবাদকর্মী হিসেবে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় কয়েক মাস আগে সরিষাবাড়ী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ পিডিবির মিটারবিহীন সেচ পাম্পের গড়বিলের দূর্নীতির বিষয়টি সকলের নজরে আনেন এবং নানা মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। গত ৩ মার্চ দুপুরে মিটারবিহীন সেচ পাম্পের গড় বিলের প্রতিবাদে সরিষাবাড়ী প্রেস ক্লাবের সামনে স্থানীয় কৃষকগণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন—এটি নিয়ে সংবাদ প্রচার ও লেখালেখি শুরু করেন তিনি। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মো. আবুবকর তালুকদার। জানাযায়, ওই রাতেই পরিবারের লোকজনের অনুপস্থিতিতে তার (সংবাদকর্মী) বাসার গেইট ভেঙে প্রবেশ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুবকর তালুকদার ও তার লোকজন। প্রবেশের পর তারা তল্লাশিসহ বাড়ির বিভিন্ন জিনি পত্র ভাংচুর করে। খবর শুনে সংবাদকর্মী এস এম খুররম আজাদ তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার বাসায় আসলে তাকে নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ টি অবৈধ বলে জোরপূর্বক কাগজে একটি স্বাক্ষর নেন আবুবকর তালুকদার। অতঃপর সংবাদকর্মী এস এম খুররম আজাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ বিষয়ে সংবাদকর্মী এসএম খুররম আজাদ বলেন, আমার দোষ আমি তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছি—শুধুমাত্র এ কারণেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তারা এবং এক মাসের অধিক সময় ধরে আমার পরিবার বসবাস করছে অন্ধকারে। অফিসে গিয়েও মিলছে না সংযোগ। উল্টো নির্বাহী প্রকৌশলীর অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হতে হচ্ছে আমার পরিবারকে। এ অবস্থায় আমার স্ত্রী (মুক্তিযোদ্ধা সন্তান) ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিষয়টি প্রতিকারের আশায়। তাছাড়াও গ্রেফতার আতঙ্কে আমিও বাড়ি ছাড়া।

তিনি আরো বলেন, বাসার লাইনটি প্রক্রিয়াধীনে রয়েছে তা অফিস আগে থেকেই অবগত। এর আগে একাধিকবার বিদ্যুতের বিলও নিয়ে গেছে অফিসের লোকজন কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা বিদ্যৎ বিল করে দেয়নি। তাহলে আজ কেনো আমাদের এমন ভোগান্তি বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যুৎ ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুবকর তালুকদার বলেন, বিদ্যুৎ আইন ২০১৮ সালের ৪৬ ধারায় এ সম্পর্কে স্পষ্ট বলা আছে —’বাসার মালিকের অনুপস্থিতিতে বাসায় তল্লাশি করা যাবে এবং সকল নিয়মকানুন মেনেই তার বাসায় তল্লাশি করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জামালপুর জেলা জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট ইউসুফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনে বলা আছে বাসার মালিকের অনুপস্থিতিতে বাসায় তল্লাশি করা যাবে, তবে ভাংচুর করা যাবে না। এছাড়াও ২০১৮ সনের ৪৬ ধারার (২) উপ-ধারা (১) এর অধীনে—যে জায়গা তল্লাশি করা হইয়াছে উহার মালিক বা তাহার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে উক্তরূপ তল্লাশি সম্পন্ন করিতে হইবে এবং জব্দকৃত জিনিসের একটি তালিকা প্রস্তুত করিয়া উক্ত ব্যক্তির ও কমপক্ষে দুইজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির স্বাক্ষর গ্রহণ করিতে হইবে। যদি এরুপ কার্য সম্পন্ন না হয় তবে সেটি আইনের পরিপন্থী হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী পৌসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বদিউজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, কর্তন কৃত বিদ্যুৎ সংযোগটি দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে বহুবার অনুরোধ করার হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার বলেন, মামলা নিষ্পত্তি না হওযা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উপমা ফারিসা বলেন, বিদ্যুৎ ও বিতরণ বিভাগ যেহেতু আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান সেহেতু এ ব্যাপারে সে কোনরূপ সাহায্য সহযোগিতা করতে পারবেন না। যদি বাসায় তারা ভাংচুর করে থাকে তাহলে থানায় মামলা করার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।

এছাড়াও তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট লাগে, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় সেখানে যদি কোন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত না থাকে তবে সেটি ভ্রাম্যমাণ আদালত হিসেবে গণ্য হবেনা বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *