পুলিশকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক : পুলিশকে সেবক হয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর, যারা একেবারে তৃণমূলে পড়ে থাকে তাদের জন্য কাজ করতে হবে। যারা নিজেদের অবাঞ্ছিত মনে করে এবং শত নির্যাতনের মধ্যেও কোনো প্রতিকার চাইতে পারে না সেই মানুষগুলোর মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরও যে নাগরিক অধিকার রয়েছে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ পুলিশের কাছে গেলে যে ন্যায়বিচার পাবে-সেই আত্মবিশ্বাসটা যেন মানুষের মধ্যে থাকে। এজন্য সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রোববার সকালে পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দেশের প্রতিটি (৬৫৯) থানায় ‘সার্ভিস ডেস্ক’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি গৃহহীন পরিবারের জন্য পুলিশের নির্মিত ৪০০টি বাড়ি হস্তান্তর করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ দুটি মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। সভায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনস প্রান্ত থেকে রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, রংপুরের পীরগঞ্জ থানা থেকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, মাগুরা সদর থানা থেকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মুহিদ উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সার্ভিস ডেস্কে কর্মরত নারী পুলিশ সদস্য, সার্ভিস ডেস্ক থেকে সেবা পাওয়া সুবিধাভোগী এবং গৃহ পাওয়া উপকারভোগীরা বক্তব্য রাখেন।
ধর্ষণ, নির্যাতন অথবা অন্য যে কোনো অপরাধের শিকার নারীরা থানায় গিয়ে নিঃসংকোচে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। এজন্য দেশের প্রতিটি থানায় বসানো হয়েছে এই সার্ভিস ডেস্ক। যেখানে ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০২০ সালে এ সার্ভিস ডেস্ক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। এখন পর্যন্ত এখান থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৪৭৬ জন নারী, ৩২ হাজার ২৮৬ জন শিশু, এক লাখ ৩৮ হাজার ৩২৫ জন পুরুষ ও ১১ হাজার ৮১ জন প্রতিবন্ধীসহ মোট তিন লাখ ৬৩ হাজার ১৬৮ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন শুরু করেছি। ৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পরই দুস্থ ও নির্যাতিতদের আইনি সহয়তা প্রদানের জন্য লিগ্যাল এইড সেল গঠন করা হয়। সর্বস্তরের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর করে দেওয়ার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জনগণের পুলিশ। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জনগণের পাশেই থাকবেন, এটাই আমাদের লক্ষ্য। পুলিশের আধুনিকায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন করায় নারীদের জন্য অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। হেল্প ডেস্কে যারা কাজ করবেন তাদের প্রয়োজনে বিদেশে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে। যে বাহিনী জনগণের বাহিনী তাকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫১৯টি থানায় ৫২০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০০ গৃহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণমানুষের নেতা। তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে পুলিশের এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে এক বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, সার্ভিস ডেস্ক পুলিশের সেবার পরিধিতে নিঃসন্দেহে একটি নতুন ধারার সূচনা করবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ প্রত্যয় বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় পুলিশের উদ্যোগে সারা দেশে ৫২০টি থানায় গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।