আগুনে পুড়িয়ে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন
ডেস্ক রিপোর্ট : পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আগামী ৭ দিনের মধ্য অর্থ আদায় করে বাদীকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বরগুনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে।
বুধবার সকালে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি পলাতক ছিল।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম বরগুনা জেলা বেতাগী উপজেলার তালগাছিয়া-দেশান্তরকাঠী গ্রামের মৃত মুনসুর আলী ওরফে নয়া মিয়া হাওলাদারেরর ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামির স্ত্রীর বাবা বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার সন্নাসী গ্রামের মজিবর রহমান ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বেতাগী থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগ করেন ১৯৮৭ সালে তার মেয়ে আসমা বেগমকে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বিয়ে দেয়। তাদের সংসার জীবনে চার সন্তানের জন্ম হয়। জাহাঙ্গীর আলম যৌতুক লোভী হওয়ায় প্রায়ই বাদীর মেয়ে আসমাকে নির্যাতন করত। এছাড়া বাদীর জামাইয়ের চরিত্র ভালো ছিল না। অন্য নারীর প্রতি আসক্ত ছিল। এসব বিষয় নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্য সম্পর্ক ভালো ছিল না। আসামি তার একই গ্রামের বিধবা জাহানারার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়।
বাদীর মেয়ে আসমা বেগম পরকীয়ার বিষয়টি জেনে যায়। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে চরম অশান্তি দেখা দেয়। ২০০৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর আলম তার বসতঘরে বসে আড়ালে পরকীয়া প্রেমিক জাহানারার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে।
বাদীর মেয়ে আসমা দেখে প্রতিবাদ করে। এ সময় উভয়ের মধ্য বাকবিতণ্ড হয়। জাহাঙ্গীর তার স্ত্রীর ওপর চড়াও হয়ে ঘরের পেছনের বারান্দায় নিয়ে আসমাকে বেদম মারধর করে মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত জখম করে। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর আলম তার ঘর থেকে কেরোসিন এনে স্ত্রীর কাপড়ে ও শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আসমার ছোট মেয়ে আরিফা দেখে তার ডাক চিৎকারে আশ-পাশের লোকজন জড়ো হয়। এই ফাঁকে আসামি পালিয়ে যায়। আগুনে আসমার ডান বাহু বুকের নিম্ন ভাগসহ শরীরের নিম্নাংশ আগুনে পুড়ে যায়। বাদী মামলার করার পরে তদন্ত করে এসআই জসিম উদ্দিন ২০ জুন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
আসমাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে বরিশাল পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করায়। এরপর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৯ সালের ৫ মার্চ মারা যায়।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুস্ট। দ্রুত সময়ে আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. নুরুল আমীন বলেন, আসামি ৮ বছর জেল হাজতে ছিল। হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক হয়েছে। আসামির আপীল করতে হলে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করতে হবে।