ঝিনাইদহের মহেশপুরে ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ নীরব প্রশাসন
সাইফুল ইসলাম ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটাগুলোতে চলছে অবাধে ফলজ বনজ ও ওষধি গাছের কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি। প্রভাবশালী মহল এবং প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে ইট পোড়ানোর কাজে এসব গাছের কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলায় গড়ে ওঠা অধিকাংশ ইটভাটায় নেই লাইসেন্স, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এমনকি নেয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন অথচ পোড়ানো হচ্ছে ইট। বঞ্চিত হচ্ছে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে।মহেশপুরে চলছে ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহাউৎসব। নিয়ম না মেনে চলছে ইট পোড়ানো। সরকারি আদেশ অমান্য করে অবৈধভাবে ফলজ বনজ ঔষধি গাছের কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করতে দেখা যায়। উপজেলার জলিলপুর মাঠপাড়ার রিডো নামের একটি ইটভাটার ভাটার মালিক প্রতিনিয়ত ফলজ-বনজ ও ঔষধি গাছের কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে।
অথচ ইটের ভাটার জ্বালানি হিসেবে কি ব্যবহার হবে আইনে তা বলা হয়েছে। কিন্তু আইনের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। একজন আইনজ্ঞ জানান, ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৬ ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনো ফলজ-বনজ ও ঔষধি গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না এবং বসতবাড়ির আশেপাশে কোনো ইটভাটা থাকবে না। মহেশপুরে অবস্থিত রিডো ইট ভাটা, নস্তির শাকিল ইটভাটার পাশে ফলজ-বনজ ঔষধি গাছের কাঠ এনে রেখে রাতের অন্ধকারে তা পোড়ানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে নামমাত্র কয়লা রেখে দেখানো হচ্ছে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, রিডো ভাটা, শাকিল ভাটা, সুমন ভাটায় প্রতিনিয়ত রাতের আঁধারে কাঠ এনে ইট পোড়ানো হয়। কয়লার দাম বেশি বলে তারা কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। অন্যদিকে ইটভাটাগুলো কোনো নিয়ম না মেনে ইট তৈরি করতে শুরু করেছে। আইনে আরো বলা হয়েছে, যেখানে ধান ক্ষেত থাকবে সেখানে কোনো ভাটা থাকবে না। কয়েকটি ভাটা গড়ে উঠেছে মহেশপুরে এদের লাইসেন্স নবায়ন আছে কিনা তাও দেখাতে পারছে না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ২ ডজন ইটভাটা গড়ে উঠেছে। গতবছর কয়েকটি বন্ধ থাকায় তারাও নতুন করে এবছর শুরু করেছে ব্যবসা। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধনী আইন ২০১৩ এর ৫৯ নম্বর আইনের ধারা ৪ এ বলা হয়েছে। লাইসেন্স ব্যতীত ইট প্রস্তুত নিষিদ্ধ। নিয়ন্ত্রণ। সংশোধনী ২০১৩ এর ৫৯ নম্বর আইনের ধারা ৪ এ আরো বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সে জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করেন তা না হলে তিনি অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা জরিমান বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
৫ ধারায় বলা হয়েছে, উপ-ধারা ১ এর বিধান লঙ্ঘন করে ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কাটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ধারা ৮ লঙ্ঘনের দণ্ড হলো এই বিধান না মেনে চললে বা বিধান লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ এলাকায় ইটের ভাটা স্থাপন করলে তিনি অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্বাশতীশীল জানান, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে।