ইজিপিপি প্রকল্পের সাড়ে ৪কোটি টাকা লুটপাটে চলছে কর্মদিবস ফাঁকি!
ওসমান হারুনী,জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের ইসলামপুরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি ইসলামপুরে ২০২১-২২ইং অর্থ বছরের প্রথম পর্যায়ের ইজিপিপি প্রকল্পের সাড়ে ৪কোটি টাকা লুটপাটে চলছে কর্মদিবস ফাঁিক! যথা সময়ে শ্রমিক মজুরী ও তদারকি না থাকায় শ্রমিক শুন্য হয়ে পড়েছে কর্মসৃজন প্রকল্প।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০দিনের প্রকল্পের কাজের ৩৫কর্মদিবস অতিবাহিত হলেও এখনো অনেক প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। যে সব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো উদ্বোধন করে শ্রমিকের বদলে কয়েক গাড়ি বালি মাটি রাস্তায় ফেলে চলছে কর্মদিবস ফাঁিক। প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা প্রতিদিন মাথাপিছু ৪শত টাকা মজুরির ভিত্তিতে ৪০দিন প্রকল্পের কাজ করবে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শ্রমিকদের প্রকল্পের আওতায় মাটি কাটার কথা রয়েছে। কিন্তু কর্মদিবসে গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার পাথর্শী, সাপধরী, বেলগাছা, চরগোয়ালীনি,পলবান্ধা, গোয়ালেরর চরসহ ১২টি ইউনিয়নের সিংহভাগ প্রকল্প সরেজমিনে দেখা গেছে কর্মসৃজস প্রকল্পের ভয়াবহ অনিয়ম চিত্র। কোন প্রকল্পের কাজেই নেই শ্রমিক। প্রকল্পের কাজে উপজেলা কমিটি, ট্যাগ কর্মকর্তা ও এবং ইউনিয়ন কমিটি ও পিআইসি সদস্যদের দায়িত্বহীনতার কারণে তদারকি না থাকায় প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ভেস্তে গেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন ইজিপিপি প্রকল্পে স্বল্প মেয়াদী কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দু:স্থ পরিবারগুলোর দারিদ্র নিরসন ও দুর্যোগ ঝুঁিক হ্রাসে সক্ষমতা বৃদ্ধি এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলেও তা মানা হচ্ছে না ইসলামপুর উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। সিংহভাগ প্রকল্পগুলি এমন ভাবে দেওয়া হয়েছে, যেখানে ৪০দিনে ১০জন শ্রমিক কাজ করলেই প্রকল্প কাজ সমাপ্ত হবে। সেখানে ৩/৪গুণ শ্রমিক বেশী দিয়ে প্রকল্পের কাজে তালিকা করা হয়েছে। প্রকল্প সভাপতিরা কাজের বেলায় আবার তালিকা ভুক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ না করে প্রকল্পের টাকা লুটপাটের জন্য চুক্তিভিত্তিক কিছু শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজে কিছু মাটি কেটে কাজ বন্ধ রেখেছেন।
বেলগাছা ইউনিয়নের প্রকল্পে নং-০৬,সিন্দুরতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে চর মন্নিয়া খেয়াখাট পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পসহ মন্নিয়া ০৫নং প্রকল্পের কাজ ৩৫কর্মদিবসে একটুপা মাটিও পড়ে নি।
কাজ শুরুর ৩৫কর্মদিবস অতিবাহিত হলেও এখনো সিংহভাগ প্রকল্প এলাকায় নেই প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত সাইন বোর্ড/বিল বোর্ড। কয়েকটি প্রকল্পে সাইন বোর্ড ঝুললেও তথ্য সম্বলিত সাইন বোর্ড নেই কবে কাজ শুরু ও শেষ!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প প্রকল্পের তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা কর্মসৃজন প্রকল্পের রাস্তায় কাজ না করলেও ভূয়া বিল ভাউচার করে শতভাগ শ্রমিক হাজিরা দেখিয়ে শেষ মহুর্তে চলছে ৪০দিনের মজুরী টাকা উত্তোলনের পায়তারা।
নিয়মানুযায়ী কাজ শুরুর আগে ইজিপিপি প্রকল্পের তালিকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে নোটিশ বোর্ডে দেওয়া কথা থাকলেও তা টানানো হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে নন ওয়েজ কষ্ট প্রকল্পের তালিকা একাধিক বার চেয়েও পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে সাপধরী ইউনিয়নের চেঙ্গানিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প হতে আলিপ উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজে ৫০ জন ও সুরুজের বাড়ি হতে লিয়াকতের বাড়ির সামনে খালের পাড় পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজে ৫০ জন এবং আকন্দপাড়া করিমের বাড়ি হতে তুরাপ আলীর বাড়ির পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজে ৫০। এছাড়া ১৫নং প্রকল্পের পূর্ব চেঙ্গানিয়া ইন্দুলামারী বাজারে মাটি ভরাট কাজে ৪১শ্রমিকের কেউ কর্মদিবসে কাজ করেনি।
এব্যাপারে সাপধরী ১২ প্রকল্পে সভাপতি মোজাফ্ফর ও ১৩নং আ: আজিজ মন্ডলসহ সভাপতিদের সাথে কথা হলে কোন সুদোত্তর দিতে পারেন নি।
পাথর্শী ইউনিয়নের প্রকল্পের ৩১নং ঢেংগারগড় সরদার বাড়ি জামে মসজিদ হতে আ: মালেক মাস্টার সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে গিয়ে কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি। অথচ এই প্রকল্পে গত ১৭জানুয়ারি থেকে প্রতি কর্মদিবসে ৮০জন শ্রমিক দৈনিক মজুরি নিয়ে ৪০দিন কাজ করার কথা রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিন গাড়ি দিয়ে ১০/১২জন মানুষ কাজ করেছে। এর পর কেউ কাজ করেনী।
এব্যাপারে প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য ছানোয়ার সরদার ফোনে জানান, বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে, চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে আবারও কাজ করবেন।
একই অবস্থা এই ইউনিয়নের ২৮নং প্রকল্পের শনিবার কর্মদিবসে ৬০ শ্রমিকের কেউ শ্রমিক কাজে আসেনী। স্থানীয়রা জানান, গত একমাস ধরে এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ, প্রকল্প শুরুর দিকে কয়েকদিন গাড়ি দিয়ে রাস্তায় কিছু মাটি কেটেছে মেম্বার। এব্যাপারে প্রকল্প সভাপতি আবু তাহের খান জানান, হাতে টাকা নেই গাড়ি দিয়ে মাটি কেটেছি, কাজ কিছু বাকি আছে। গাড়িওয়ালা এখনো টাকা পায়। শ্রমিক মজুরী পেলে দুই/এক দিনেই মাটি কাটবো।” এভাবে প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত ৪কোটি ৫০লাখ ২৪হাজার টাকা লুটপাটের জন্য চলছে কর্মদিবস ফাঁিক।
এব্যাপারে পাথর্শী ট্যাগ অফিসার নুরনবী জানান,“ প্রকল্পে সভাপতি আমাকে একই কথা বলেছেন। কয়েক দিন মাটি কেটে কাজ বন্ধ রয়েছে।”
জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ৬০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২হাজার ৮১৪ জন তালিকা ভুক্ত শ্রমিক প্রকল্পে ওয়েজ কষ্ট প্রকল্পের ৪ কোটি ৫০লাখ ২৪ হাজার টাকা ও নন ওয়েজ কষ্ট প্রকল্পের ২০লাখ ৬৬ হাজার ৯১৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
এব্যাপারে ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, প্রকল্পে কাজে কোন শ্রমিক উপস্থিত না থাকলে মজুরী দেওয়া হবে না।
এব্যাপারে ইসলামপুর উপজেলা ইজিপিপি কমিটি সভাপতি নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মু:তানভীর হাসান রুমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।