ঝিনাইদহে জ্বিনের বাদশা চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার,পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলামের প্রেস ব্রিফিং
সাইফুল ইসলাম ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঘটনা ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর। গভীর রাতে মোবাইলের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় ঝিনাইদহ শহরের খাজুরা মাঝেরপাড়ার প্রবাসি শাহ আলমের স্ত্রী রেনুকা খাতুনের। মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে ‘মা’ ডাক দিয়ে হাদিস কোরআনের বানী শোনাতে থাকে। সঙ্গে ভৌতিক শব্দ। কানে ভেসে আসে হা হা, হি হি, এইবার তোকে খাব, বহুদিন তাজা রক্ত খায়নি। রেনুকার চোখ থেকে ঘুম ছুটে যায়। রেনুকা তখনও জানেন না তিনি জ্বিনের বাদশা নামক প্রতারকের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছেন।
দীর্ঘক্ষন আলাপচারিতায় প্রতারক চক্রটি বলে “আল্লাহর তরফ থেকে হুকুম হয়েছে. তোকে ৭ হাড়ি কাঁচা স্বর্ণ দিতে”। এ কথা বলে প্রতারক চক্র প্রথমে রেনুকার কাছে একটি জায়নামাজ হাদিয়া চাই এবং ৫৬০ টাকা দাবী করে। ৭ হাড়ি সোনার লোভ সামলাতে না পেরে রেনুকা বেগম বিকাশ একাউন্টে ৫৬০ টাকা পাঠায়। ৫ নভেম্বর জ্বিনের বাদশা দলের প্রতারকরা আবারো রেনুকা খাতুনের কাছে ফোন করে জানায় ৭ হাড়ি স্বর্ন পেতে হলে তোমার বাড়ির কিছু স্বর্ণ দিতে হবে।
রেনুকা ঘটনার দিন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর ডাচ বাংলা ব্যাংকের বিপরীতে একটি গাছের নিচে দুই লাখ আশি হাজার টাকা মুল্যের প্রায় চার ভরি স্বর্ণ রেখে আসে। স্বর্ন রেখে আসার সময় তিনি দেখতে পান সেখানে একটি সোনা সাদৃশ্য মুর্তি রয়েছে। রেনুকার বিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। এ ভাবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারক চক্রটি রেনুকার কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। রেনুকা প্রতারিত হওয়ার পর গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রয়ারি ২০২২) ঝিনাইদহ সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন যার নং ৩৪।
মামলাটি রেকর্ডের পর ঝিনাইদহ সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের কাছে তদন্তের জন্য অর্পন করা হয়। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার সাঈদ ও ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারের তত্বাবধানে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল প্রতারক চক্রটিকে সনাক্ত করতে সক্ষম হন। শুক্রবার রাতেই এসআই রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একটি বিলের মধ্য থেকে প্রতারক চক্রের সদস্য বিশ্বনাথপুর গ্রামের মিন্টু পোদ্দারের ছেলে রায়হান ও তার ভাই তুহিন, একই গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে বিকাশ এজেন্ট জিয়াউর রহমান ও শাকপালা গ্রামের শ্রী নারায়ন দাসের ছেলে মিলন দাসকে গ্রেফতার করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, একটি ছুরি ও পিতলের মুর্তি উদ্ধার করে। শনিবার দুপুরে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে সোপর্দ করে আসামীদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে রায়হানের নেতৃত্বে এই প্রতারক চক্র খুপরি ঘর বেধে ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘জ্বিনের বাদশা’ পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলো।