ঢাকার অনুরোধে মালয়েশিয়ায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিনিধি : মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে দেশটির অভিবাসন পুলিশ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসাবে বসবাস করছিলেন তিনি।
খায়রুজ্জামানকে ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে কুয়ালালামপুরের আমপাং এলাকায় তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি জেলহত্যা মামলার আসামি ছিলেন। পরে খালাস পেয়ে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেফতার হলেও এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ ছিল।
এদিকে, ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতারের তথ্য মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।
তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিবাসন সংক্রান্ত ইস্যুতে যাদের গ্রেফতার করা হয়; তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ডেপোটেশন সেন্টারে কারা অন্তরীণ রাখা হয়। তাকেও সেখানে কারা অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। আমরা মালয়েশিয়ায় আমাদের দূতাবাসকে (হাইকমিশন) জানিয়েছি। তারা সেখানকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সেই মামলার কাগজপত্র ….। তবে আমি জানি যে, সেটা তদন্তের দুর্বলতা হতে পারে কিংবা অন্য কিছু হতে পারে, এটা আদালতের এখতিয়ারাধীন তাই কমেন্ট করতে চাই না, তাকে খালাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি যতদূর জানি বা বুঝি যে তাকে সশরীরে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করার এবং এ মামলাটিকে আবারও খতিয়ে দেখার সুযোগ আছে যেটা আইন মন্ত্রণালয়ের বিবেচ্য বিষয়। তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি।’
কী কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া চিঠিতে অভিবাসনসংক্রান্ত একটি আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেফতারের কথা বলেছে। এটা নিশ্চয়ই আমাদের দূতাবাস (হাইকমিশন) জানে। এ মুহূর্ত আমার জানা নেই। খায়রুজ্জামানের শরণার্থী কার্ড আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে মালয়েশিয়া চিঠিতে বলেছে, অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ ফিরিয়ে আনার পর কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আইন মন্ত্রণালয় মিলে সিদ্ধান্ত নেবে।’
মালয়েশিয়ার জাতীয় দৈনিক স্টার অনলাইনে এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতারের কথা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জাইন উদিন বলেছেন, সাবেক কূটনীতিককে গ্রেফতারের খবর তার জানা আছে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, প্রক্রিয়া মেনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘একটা অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল এবং তার নিজের দেশের অনুরোধ ছিল।’
খায়রুজ্জামান সেনাবাহিনীর একজন সাবেক মেজর। ১৯৭৫ সালে জেল হত্যা মামলায় আসামি ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি জেলহত্যা মামলা থেকে খালাস পেয়েছিলেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর তাকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। দেশে ফেরায় ঝুঁকি থাকায় তিনি কুয়ালালামপুরে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর থেকে একটি শরণার্থী কার্ড সংগ্রহ করে মালয়েশিয়ায় বসবাস শুরু করেন।