বিচারক সংকটে ঠাকুরগাঁও আদালত, বাড়ছে মামলার জট

জসিম উদ্দিন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও আদালতে বিচারক সংকটের কারণে বাড়ছে মামলার জট। প্রতিনিয়ত প্রচুর
মামলা আসলেও বিচারকাজ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারক না থাকায়
ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। মামলা এগোচ্ছে না স্বাভাবিক গতিতে।
এতে বিচার প্রার্থীদের মামলার পেছনে ঘুরতে হয় বছরের পর বছর।
এসব মামলার পক্ষ-বিপক্ষের বিচারপ্রার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে দিনের পর
দিন আদালত চত্বরে ধরনা দিলেও সময়মতো রায় না পাওয়ার অভিযোগ তাদের।
জেলার পাঁচটি উপজেলার ছয়টি থানার মামলা ছাড়াও আদালতে করা মামলার
বিচারকার্য পরিচালিত হয় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা ও দায়রা
জজকোর্টের ১৮টি আদালতে। কিন্তু দুটি কোর্টে ১৮ জন বিচারক থাকার কথা
থাকলেও রয়েছেন ১২ জন। তাই বাধ্য হয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বিচারক
নিয়েই চলছে কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে বিচারক শূন্যতায় দেওয়ানি, ফৌজদারি,
আমলি ও নারী, শিশু এবং মানবপাচার মামলার রায় অপেক্ষমান থাকায় জট
বেধেছে। ফলে বাড়ছে মামলার জট।
বিচারের আশায় বছরের পর বছর আদালতে ঘুরছেন সদরের আচকা গ্রামের নাছিমা
খানম। কিন্তু বিচারক সংকটে তার দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলা নিষ্পত্তি
হয়নি আজও। মামলা চালাতে গিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব প্রায়।
শুধু নাছিমা নন, এভাবে বছরের পর বছর বিচারের আশায় আছেন জেলার কয়েক লাখ
মানুষ। ফলে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিচারক সংকটকে
দায়ী করছেন ভুক্তভোগী মানুষ ও আইনজীবীরা।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও
জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে ১৭ হাজারের বেশি মামলার জট লেগে আছে। বিচারক
সংকটে এসব মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ফলে, একদিকে যেমন মামলা জট লেগে
আছে, অপরদিকে বিচারক সংকটে বিচার না পেয়ে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি
ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে বিচার
ব্যবস্থার ওপর। বাড়ছে অপরাধ।
ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার মাধবপুর গ্রামের মনসুর আলী বলেন, ‘আমি আট বছর
ধরে আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরছি। এখনো কোনো দিক পাচ্ছি না। কবে
নাগাদ মামলা নিষ্পত্তি হবে জানি না। মৃত্যুর আগে বিচার দেখে যেতে পারবো
তো?’
ঠাকুরগাঁও আদালতের অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান রিজবি রাইজিংবিডিকে বলেন,
‘বিচারক সংকটের কারণে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এতে মানুষের
ভোগান্তি বাড়ছে। মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বিচারক নিয়োগ ছাড়া এর কোনো
সমাধান আছে বলে মনে করি না।’
ঠাকুরগাঁও আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বলেন, ‘মামলা
নিষ্পত্তিতে বিচারক সংকট এখন বড় সমস্যা। আমরা বিচার কার্যক্রমের গতি
বাড়াতে সাক্ষীদের দ্রুতই উপস্থাপন করছি। আশাকরি শিগগিরই বিচারকের শূন্য
পদ পূরণ হলে মামলার জট কমবে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম বলেন, ‘১২
জনকে দিয়ে ১৮ জনের কাজ করতে হয়। এতে দিনকে দিন সাধারন মানুষের ভোগান্তি
বাড়ছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি
জানাচ্ছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *