প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ | স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্রীরা

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক ননী গোপাল হালদার (৫২) উপজেলার ৯৬ নং বটতলা চন্দনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পঞ্চম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত ছাত্রীরা।
অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে জানাগেছে, উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের ৯৬ নং বটতলা চন্দনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল হালদার ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর একাধিক ছাত্রীকে নিয়মিত যৌন হয়রানী করে আসছেন। এর মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি পশ্চিম জিউধরা গ্রামের মো. আবুল কালাম মল্লিকের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়–য়া ইয়াতিম নাতনীকে প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল যৌন হয়রানী করলে ওই ছাত্রীটি বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি তার নানা-নানীর কাছে বলে দেয়। সে আর ওই বিদ্যালয়ে যাবেনা এবং জোর করে পাঠালে সে আত্মহত্যা করবে বলেও নানা-নানীকে হুমকি দেয়। ওই ছাত্রীর ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের দ্বারা একাধিক ছাত্রী যৌন হয়রানীর শিকার হওয়ার বিষয় ভূক্তভোগী ছাত্রীরা প্রকাশ করলে বেরিয়ে আসে প্রধান শিক্ষকের একের পর এক চাঞ্চল্যকর লাম্পট্য কাহিনী।
এ ঘটনায় যৌন হয়রানীর শিকার ওই ছাত্রীর নানা গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং মোড়েলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) তুহিন মন্ডলের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
শনিবার সকালে সরেজমিন ওই বিদ্যালয় এলাকায় গেলে প্রধান শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানীর শিকার ৪ শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় এ প্রতিনিধির। ভূক্তভোগী ওই সব ছাত্রী জানায় প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল হালদার বিভিন্ন সময় তার কক্ষে ডেকে নিয়ে তাদেরকে আদর করে চুমু দেন, কোলে বসিয়ে শরীরের স্পর্শ কাতর স্থানে হাত দিতেন। এ কথা ম্যাডাম ময়না রানী শিকদারকে জানালে তিনি তাদেরকে বলতেন ওতে কি হয়, স্যারতো তোমাদেরকে একটু আদর করতেই পারে। জানতে চাইলে শিক্ষকা ময়না রানী শিকদার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে ঘটনার পর থেকে ওই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত ছাত্রীদের অভিভাবকরা তাদের মেয়েদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। বুধবার সরজমিনে পঞ্চম শ্রেনীর ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৫ জন ছাত্রকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল হালদার ইতোপূর্বে জয়বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকাকালীন সময় এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানী করে জনতার হাতে মার খেয়েছেন এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে বর্তমান বিদ্যালয় বদলি হয়ে আসেন। তারা আরো জানায়, প্রধান শিক্ষক তার প্রতিবেশী এক গৃহবধুকে ঝাপটে ধরলে ওই গৃহবধু তাকে ঝাড়– পেটা করেন। স্থানীয় আর এক বাসিন্দার মেয়ে সন্ধ্যায় মাঠ থেকে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মাঠে বসে ওই মেয়েকে ঝাপটে ধরেন প্রধান শিক্ষক। মেয়েটি বাড়িতে ফিরে ঘটনা জানালে মেয়ের বাবা প্রধান শিক্ষককে রাস্তায় ফেলে মারপিট করেন।
প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল হালদারের কাছে জানতে চাইলে, তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং রাজনৈতীক কারনে তিনি হয়রানী শিকার বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যস্ত থাকায় অভিযোগ দেখতে পারিনি। অভিযোগ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অভিযোগ সম্পর্কে ওসি (তদন্ত) তুহিন মন্ডল জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তাদেরকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি জানা নেই বললেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জালাল উদ্দিন, তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানালেন।
সংশ্লিষ্ট ক্লাষ্টারের দায়িত্বরত উপজেলা শিক্ষা অফিসার সজল মহলীর সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করলেও তিনি তার ফোন রিসিভ করেননি। #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *