জনসমাগম কমানো জরুরি

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক : করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন ওমিক্রন বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। দ্রুত সংক্রমণশীল এই ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে।

এগুলো হচ্ছে-সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম সীমিত করা এবং ষাটোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনারদের (সম্মুখসারির কর্মী) মধ্যে যারা কমপক্ষে ছয় মাস আগে দুই ডোজ নিয়েছেন, তাদের বুস্টার (তৃতীয় ডোজ) দেওয়া। এ ছাড়া দেশে প্রবেশের সব পয়েন্টে স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন কার্যক্রম আরও জোরদার করার কথা বলা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন অফ লাইন সভা পরিহার করে অনলাইন সভা আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছে এই কমিটি।

এগুলো বাস্তবায়নে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় যেকোনো মুহূর্তে এটি ব্যাপকভিত্তিতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সোমবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় এসব তথ্য।এর আগে গত শনিবার (১১ ডিসেম্বর) কমিটির ৪৯তম সভা হয়। সেখানে বিস্তারিত আলোচনার পর ওমিক্রন ঠেকাতে উল্লিখিত সুপারিশ করা হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের কথা জানান।

ভয়াবহ এ ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে বিশ্বের ৫৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও দুজন শনাক্ত হয়েছেন। পার্শ্ববর্তী ভারতে এখন পর্যন্ত ৩৩ জনের দেহে ওমিক্রনের হদিস মিলেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটি নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই বাংলাদেশির মধ্যে ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। ফলে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে।

এদিকে আমাদের বাজার-ঘাট, পর্যটন, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। ধরনটি দ্রুত ছড়ায় বলা হচ্ছে। কিন্তু পর্যবেক্ষণ বলছে, এখন পর্যন্ত ওমিক্রন ধরনটি মারাত্মক নয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির গলাব্যথা, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়। রোগী খুব ক্লান্তি বোধ করে। তবে দেশে এখন পর্যন্ত কোনো রোগীর অক্সিজেন, হাসপাতাল বা আইসিইউতে যাওয়ার দরকার হয়নি।

ঘরে বসেই চিকিৎসা নেওয়া যায়। কেউ একবার আক্রান্ত হলে পুনরায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এটা থেকে বাঁচার একটাই উপায় সতর্কতা, সচেতনতা, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি।

সবচেয়ে জরুরি টিকা নেওয়া। অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর অভিমত-এই মুহূর্তে জল, স্থল অর্থাৎ, এয়ারপোর্ট, ট্রেন, লঞ্চ যে পথেই যে-ই বাইরে থেকে আসুক এসব জায়গায় কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।

কারও শরীরে পজিটিভ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশনে নিতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের অনেক বড় বর্ডার। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করছে, এটা আপাতাত ঠেকাতে হবে। এজন্য কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। যারাই আসবে তাদের পরীক্ষা করতে হবে।এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা বা অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশিরাও যেন না আসে সে ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এখনই লকডাউন, ফ্ল্যাইট বা বর্ডার বন্ধ করার দরকার নেই। তবে স্ক্রিনিং, টেস্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশন করা ও হাসপাতাল প্রস্তুত রাখতে হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও ভাইরোলজিস্ট ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ওমিক্রন ধরনটি অনেক বেশি পরিবর্তন হচ্ছে।

ধরনটির বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা বলছে এটার ট্রান্সমিশন (বিস্তার) ক্ষমতা বেশি হওয়ায় অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে খুব বেশি রিইনফেকডেটেড অর্থাৎ পুনঃসংক্রমণ করছে।

তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি পরিমাণে অসুস্থ করে কিনা- এটা এখনো প্রমাণিত হয়নি। আরেকটি ব্যাপার- ধরনটি শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে ‘কনসার্ন অব ভ্যারিয়েন্ট’ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কাজেই সাবধান থাকতে হবে।

এটি আরও মারাত্মক রূপ নিতে সময় লাগতে পারে। মনে রাখতে হবে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের বিজ্ঞানীরা ডেল্টা শনাক্ত করেই তারা কনসার্ন (উদ্বেগ) ঘোষণা দেননি।

প্রথমে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব আন্ডার মনিটরিং’, তারপর ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ এবং সবশেষে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বলেছেন।

ওমিক্রনের ক্ষেত্রে শুরুতেই ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন বলা হচ্ছে। কাজেই খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে না-সেটা কিন্তু বলা যাচ্ছে না।

প্রতিরোধের জন্য এখনই শক্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। সবাইকে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে, জনসমাগম তথা ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। দ্রুত টিকার আওতায় আসতে হবে।

জানা গেছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরুর পর এ পর্যন্ত ছয় কোটি ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৮৬ জন অন্তত একটি ডোজ পেয়েছেন।

আর তাদের মধ্যে চার কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৯১ জন পেয়েছেন দুটি ডোজ। এই হিসাবে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মোটামুটি এক-চতুর্থাংশ কোভিড টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টিকার সুরক্ষা দুর্বল হয়ে আসায় ধনী কিছু দেশ বাড়তি আরেক ডোজ টিকা দিচ্ছে নাগরিকদের, যাকে বলা হচ্ছে বুস্টার ডোজ।বাংলাদেশের গবেষক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পাওয়ার আগে তৃতীয় ডোজের পক্ষে ছিলেন না।

কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর এখনো দেশেও টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *