যেসব কারণে পদত্যাগ করতে হচ্ছে তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয়বার দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে ডা. মুরাদ হাসান ইতোমধ্যে বেশকিছু ‘অবমাননাকর’ ও ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য করে বিতর্কিত হয়েছেন। সর্বশেষ চলচ্চিত্র অভিনেতা ইমন ও অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির সঙ্গে আলাপচারিতার ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে তোপের মুখে পড়েন মুরাদ হাসান।
একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আগামীকালের মধ্যে তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আমি রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছি।
এরআগে সোমবার সকালে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের দেওয়া বক্তব্য তার ব্যক্তিগত মন্তব্য। এটি দল বা সরকারের নয়। এ ধরনের বক্তব্য তিনি কেন দিলেন, বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’ সম্প্রতি বিভিন্ন টকশো ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডা. মুরাদ হাসানের দেওয়া কিছু বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
১ ডিসেম্বর রাতে ‘অসুস্থ খালেদা, বিকৃত বিএনপির নেতাকর্মী’ শিরোনামে এক ফেসবুক লাইভে যুক্ত হন মুরাদ হাসান। লাইভের এক পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে তিনি বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এছাড়া তিনি বিএনপির সাবেক নারী এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে ​‘মানসিক রোগী’ বলেও অভিহিত করে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন।এরপর রোববার রাতে তার সঙ্গে এক চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে তিনি আরও তোপের মুখে পড়েন।
এদিকে ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগ দাবি করেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। প্রতিমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের নিয়েও নোংরা বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়ে তার বক্তব্যের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করলেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন বর্তমান এবং সাবেক নেত্রী৷এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বেসরকারি নারী সংগঠন নারীপক্ষ।
যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বলা ‘কুরুচিপূর্ণ’ ও ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না বলেও জানিয়েছেন ডা. মো. মুরাদ হাসান।
প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে হাস্যরস করতে করতে ওই নারীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়েও ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেন তিনি।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রোববার রাতে দুইটি ফোনালাপটি ফাঁস হয়। ফোনালাপের শুরুতে ডা. মুরাদের কণ্ঠের অন্যপাশে চিত্রনায়ক ইমনকে কথা বলতে শোনা যায়। যেখানে তিনি অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন।একপর্যায়ে দেখা করার জন্য ‘নির্দেশ’ দেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠানোরও হুমকি দেন তিনি।
ওই কথোপকথনের দ্বিতীয় ধাপে আবার কথা হয় এই দুজনের। ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি ‘সঠিক’ বলে গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন চিত্রনায়ক ইমন।
ঘটনাটি দুই বছর আগের দাবি করে ইমন জানান, একটি ছবির মহরত অনুষ্ঠানের আগের রাতে ফোন দেন প্রতিমন্ত্রী।
এরআগে চলতি বছরের অক্টোবরে মুরাদ হাসান তার এক বক্তব্যে বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। বক্তব্যে তিনি সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ এবং ১৫তম সংশোধনী বাতিল করে ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহাল রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন। তার এই প্রস্তাবটি নেট দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তোলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *