দেশে ভয়ংকর মাদক ডিওবি উদ্ধার

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক : দেশে প্রথমবারের মতো ভয়ংকর মাদক ডিওবি উদ্ধার করা হয়েছে।‘ক’ শ্রেণির উদ্ধার হওয়া এই মাদকের পরিমাণ ৯০ ব্লটার (পিস)।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, ডিওবি তাদের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত নিষিদ্ধ মাদক।এটি দেখতে অনেকটা এলএসডির মতো।এটি আরও বেশি ক্ষতিকর।অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যুও হতে পারে।অধিদপ্তরের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মাদক সেবনের পর সেবনকারীকে যে কোনোভাবে প্রভাবিত করা যায়। তাকে দিয়ে যে কোনো কাজ করানো যায়। সে নির্দেশিত কাজ করতে উদ্যমী হয়ে ওঠে। এজন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে হয়। আর বেশি পরিমাণে সেবন করলে ঘটতে পারে মৃত্যু। ভয়ংকর এই মাদক উদ্ধারের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, খুলনায় একজনের কাছে এলএসডি রয়েছে- গোয়েন্দাদের এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতারে খুলনায় অভিযান চালান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। একজনের কাছ থেকে কিছু এলএসডি উদ্ধারের পর অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে ডিওবির তথ্য পাওয়া যায়। তার তথ্যের ভিত্তিতে ৯০ ব্লটার ডিওবি উদ্ধার করা হয়।এদিকে মাদক কারবারে জড়িত দুই জনকে সোমবার আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তারা হলেন- আসিফ আহমেদ শুভ ও তার বন্ধু অর্ণব কুমার শর্মা। এ ছাড়া মাদক চালানের সঙ্গে জড়িত সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের খুলনা বয়রা বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মামুনুর রশীদকে আটক করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছে- মাদকসেবীদের কাছে প্রতি ব্লট (পিস) ডিওবি ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এটি সেবনে ‘তৃতীয় নয়ন’ খুলে যায় বলে মাদকসেবীদের দাবি।
ফজলুর রহমান বলেন, ডার্ক ওয়েবসাইট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ২০০ ব্লট ডিওবি কেনেন খুলনার যুবক আসিফ আহমেদ শুভ। অর্ডার করার পর ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকের চালানটি সরাসরি তার বাসায় পৌঁছায়। বিমানবন্দরগুলোতে উন্নতমানের স্ক্যানার না থাকায় কুরিয়ারে আসা ডিওবি ধরা পড়েনি। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে অর্ডার করার পর এক মাসের ব্যবধানে এই মাদক শুভর বাসায় কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে যায়।
তিনি জানান, স্ক্যানারে ধরা না পড়লেও বিদেশ থেকে এলএসডির মতো মাদক আসতে পারে এই ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য ছিল। গত আগস্ট মাসে কিওয়ার্ড ‘syash’ শব্দটি পান গোয়েন্দারা। এরপর চলে অনুসন্ধান।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, তিন মাসের বেশি সময় অনুসন্ধানের পর এই মাদকের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে শক্তিশালী স্ক্যানার নেই, এটা সত্য। কিন্তু আমাদের নজরদারি ছিল। নজরদারির কারণেই এই মাদক আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি।
সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস খুলনা বয়রা শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে পার্সেল পাঠাতেন। গোপনে ক্রেতা সেজে ৫ পিস এলএসডির অর্ডার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। খুলনা থেকে কোনো বাধা ছাড়াই সুন্দরবন কুরিয়ারের রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড শাখায় পার্সেলটি পৌঁছায়। প্রযুক্তির সাহায্যে এই পার্সেলের প্রেরক শুভর খোঁজ পান গোয়েন্দারা। তবে মাদক কারবারিদের সঙ্গে কুরিয়ারটির খুলনার বয়রা শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদের যোগসাজশে পার্সেলটির প্রেরকের মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র রাখা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *