অভিযানের মধ্যেও বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক: বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানের মধ্যেই রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ ও ‘গেটলক সার্ভিস’ বাস চলছে। সোমবারও এভাবে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করেছে। বাড়তি ভাড়াও আদায় করা হয়েছে। প্রায় কোনো রুটেই যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া নেওয়া হয়নি। মালিক বা বাস কোম্পানির নির্ধারিত ভাড়া দিতে যাত্রীদের বাধ্য করছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। এ নিয়ে অনেক যাত্রী প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন পরিবহণ শ্রমিকরা। ভাড়া নিয়ে বাসে বাসে বাগবিতণ্ডাও হয়েছে।এদিকে বাড়তি ভাড়া নেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে সোমবার ৩২২টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিআরটিএ। অপরদিকে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে হিউম্যান হলার ও লেগুনার ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সিটিং সার্ভিস ও গেটলক সার্ভিসের নামে ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি ভাড়া নিয়ে আসছে পরিবহণ শ্রমিকরা। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সম্প্রতি সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। রোববার থেকে সিটিং ও গেটলক সার্ভিস বন্ধ করে নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত জানায় ঢাকা বাস মালিক সমিতি। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় চলছে। মিরপুর, বাড্ডা, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় গেটলক সার্ভিসের বাস চলাচল করছে। রামপুরাসহ কয়েকটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে যাত্রীরা অভিযোগ দিলে পরিবহণ শ্রমিকরা বাড়তি ভাড়া ফেরত দেন। পোস্তগোলা, মালিবাগ থেকে উত্তরা রুটে চলা রাইদা পরিবহণের একাধিক যাত্রী জানান, ওই বাসে এখনও সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গাড়িতে সিএনজিচালিত বা ডিজেলচালিত স্টিকার লাগানো নেই। যাত্রীপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজার থেকে মালিবাগ আসা যাত্রী রিফাত জাহান বলেন, নতুন ভাড়া ঘোষণার আগে এ পথে ভাড়া নিত ২০ টাকা। নতুন ভাড়া কার্যকরের পর তা বাড়িয়ে করেছে ২৫ টাকা। এখনও সেটাই নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযোগ দিলে ৫ টাকা ফেরত দেওয়া হয়। বাড্ডার বাসিন্দা মারুফ হোসেন বলেন, বাড্ডা থেকে বনশ্রী পর্যন্ত রাজধানী ও অছিম পরিবহণের বাসে সর্বনিম্ন ১৫ টাকা বাসভাড়া নেওয়া হয়। তবে যারা জোরালো প্রতিবাদ করেন তাদের কাছ থেকে ১০ টাকা নেওয়া হয়। একই অভিযোগ করেন মহাখালী থেকে আগারগাঁও আসা যাত্রী তৌফিক আলী। তিনি বলেন, বৈশাখী পরিবহণের বাসে উঠলেই ৩০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। তিনি বলেন, মহাখালী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৩০ টাকা ভাড়া। কিন্তু গাবতলী নামলেও ৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। তা হলে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় হচ্ছে কোথায়! তিনি বলেন, বাসে কম আয়ের মানুষ চলাচল করেন। তাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। আব্দুল্লাহপুর থেকে আজিমপুর রুটে চলা বিকাশ পরিবহণের যাত্রীরাও একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, কারও কাছ থেকেই সর্বনিম্ন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। তাদের নির্ধারিত ভাড়ায় গেলেই কেবল যাত্রী ওঠানো হয়। অন্যথায় বাসে কাউকেই তোলা হয় না। এদিকে বিআরটিএ জানায়, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৩২২টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এসব বাসে ৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৩২২টি বাসের মধ্যে ২৪৮টি ডিজেল ও ৭৪টি সিএনজিচালিত বাস। এছাড়া বেপরোয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি চালানোর অপরাধে দুজন চালককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একটি বাসকে ডাম্পিং করা হয়েছে।
এদিকে সিএনজিচালিত হিউম্যান হলার, লেগুনা, অটো-টেম্পো, অটোরিকশার পৃথক ভাড়া নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সোমবার সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শুধু ডিজেলচালিত বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ালেও এ ভাড়া বৃদ্ধি আদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে সিএনজিচালিত, ডিজেলচালিত, পেট্রলচালিত, অকটেনচালিত সব ধরনের বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি হিউম্যান হলার, লেগুনা, অটো-টেম্পো, অটোরিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশা ও মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের পরিবহণে অতিরিক্ত মাত্রায় ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।