পোস্টারে ছেয়ে গেছে গ্রামাঞ্চল সুন্দরগঞ্জে ১৩ ইউনিয়নে ৯৯ চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন

মোশাররফ হোসেন বুলু, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (তৃতীয় ধাপ) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ১৩ ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। তাই বিজয় লাভের আশায় প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। তারা আরামের ঘুম হারাম করে ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন। তাদের প্রতীক সম্বলিত পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহরের অলি-গলি, বাসা-বাড়ি, চায়ের দোকান, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনা।
নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীরা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে দিন-রাত সময় দিচ্ছেন। তারা ভোটারদের কাছে গিয়ে আদর্শের বয়ানসহ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন। তবে দলীয় ভাবে নির্বাচন হওয়ায় ভোটাররা মুখ খুলছেন না। মুখ খুলছেন পরিচিত দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। সরজমিনে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীরা দল বেঁধে প্রচার প্রচারনায় নির্বাচনী এলাকা সরগরম করে তুলছেন। তারা অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও রিক্সায় মাইক বেঁধে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি মাইকে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও আদর্শের কথা বলছেন।
এবার যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে ৯৯ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন। দলীয়ভাবে প্রার্থী হয়েছেন ২৭ জন। এরমধ্যে আ’লীগের ১৩, জাপার ১১ জন ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাসদ এবং ইসলামী আন্দোলনের একজন করে। বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন আকবর আলী (লাঙ্গল), আব্দুল জব্বার (মটর সাইকেল), সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার (চশমা), জাহেদুল ইসলাম জাবেদ (ঘোড়া), বর্তমান চেয়ারম্যান নজমুল হুদা (আনারস), শমেস উদ্দিন (নৌকা) ও শহিদুর রহমান (অটোরিক্সা)। সোনারায় ইউনিয়নে ৫ প্রার্থী হলেন এইচ.এম মতিয়ার পারভেজ (মটর সাইকেল) সাবেক চেয়ারম্যান আনছার আলী সরদার (লাঙ্গল), আব্দুর রাজ্জাক (আনারস), রনজিৎ কুমার সরকার (নৌকা) ও বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ বদিরুল আহসান (চশমা)। তারাপুর ইউনিয়নে প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। এরা হলেন আবুল আলা মওদুদী সরকার (আনারস), সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ (নৌকা), বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম (মটর সাইকেল), আব্দুর রাজ্জাক মিয়া (ঘোড়া), নুরুজ্জামান সরকার (চশমা) ও শাহজাহান কিবরিয়া (অটোরিক্সা)। বেলকা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছেন ৪ জন। এরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ (দুটি পাতা), সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল হক সরদার (মটর সাইকেল), জাহাঙ্গীর আলম (আনারস) ও মজিবর রহমান (নৌকা)। দহবন্দ ইউনিয়নের ৪ প্রার্থীরা হলেন আমিনুল ইসলাম সাজু (লাঙ্গল), আরাফাত-উল ইসলাম (আনারস), গোলাম মোস্তফা প্রামানিক (চশমা) ও রেজাউল আলম সরকার (নৌকা)। এ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় প্রার্থী হননি। সর্বানন্দ ইউনিয়নে ৭ প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এরা হলেন চাঁদ মিঞ্চা (নৌকা), মশিউর রহমান সরদার (লাঙ্গল), আজাদুল ইসলাম আজাদ (টেলিফোন), জহুরুল ইসলাম (মটর সাইকেল), মশিউর রহমান (দুটি পাতা), বর্তমান চেয়ারম্যান মাহাবুর রহমান (চশমা), রাশেদুল ইসলাম (অটোরিক্সা) ও শাহজাহান মিয়া (ঘোড়া)। রামজীবন ইউনিয়নে ৯ প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন দলীয়। দলীয়রা হলেন এটিএম এনামুল হক মন্টু (লাঙ্গল), আবু বক্কর ছিদ্দিক (গামছা), সাদেকুল ইসলাম সরকার (নৌকা)। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন ইদ্রিস আলী (দুটি পাতা), জিয়াউল হক (অটোরিক্সা), মোজাফ্ফর হোসেন (চশমা), শামছুল হুদা সরকার (আনারস), সোলায়মান হোসেন (মটর সাইকেল) ও হাবিজার রহমান (ঘোড়া)। এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিজানুর রহমান এবছর প্রার্থী হননি। ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮ প্রার্থী হলেন সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম মাহাবুব আলম (লাঙ্গল), খান মোহাম্মদ আলী (আনারস), চৌধুরী শাফিউল বারী (অটোরিক্সা), আমিনুল ইসলাম (চশমা), আমিনুল ইসলাম আকন্দ (টেবিল ফ্যান), সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সুজা (মটর সাইকেল), মোকলেছুর রহমান মন্ডল (ঘোড়া) ও বর্তমান চেয়ারম্যান এ্যাডঃ মোখলেছুর রহমান রাজু (নৌকা)। ছাপড়হাটী ইউনিয়নের প্রার্থী ৯ জন। উপজেলার মধ্যে একমাত্র মহিলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এই ইউনিয়নে। প্রার্থীরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান কনক কুমার গোস্বামী ( নৌকা), জোৎ¯œা বেগম জনতা (আনারস), আতাউর রহমান (মটর সাইকেল), আশরাফুল আলম (লাঙ্গল), আসাদুজ্জামান (দুটি পাতা), গোলাম আজম সরকার (চশমা), তারা মিয়া (ঘোড়া), মামুন-উর রশিদ প্রামানিক রুবেল (মশাল) ও শরিফুল ইসলাম (রজনীগন্ধা)। শান্তিরাম ইউনিয়নে প্রার্থী ১৩ জন। উপজেলার মধ্যে এ ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান প্রার্থী বেশি। এরা হলেন একেএম জাহিদুল করিম (রজনীগন্ধা), একেএম মোস্তফা কামাল (আনারস), এবিএম মিজানুর রহমান (দুটি পাতা), এমএ ছোলায়মান সরকার (ঢোল), এসএম মমিনুর রহমান (লাঙ্গল), আব্দুর রশিদ (টেবিল ফ্যান), সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মিয়া (অটোরিক্সা), সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান সরকার হান্নান (ঘোড়া) বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছামিউল ইসলাম (দোয়াত-কলম), বদরুল আমিন (চশমা), বিপ্লব খন্দকার (নৌকা), মিজানুর রহমান (টেলিফোন) ও সাইফুল ইসলাম (মটর সাইকেল)। কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের ৮ প্রার্থী হলেন আবুল খায়ের মোঃ হাফিজার রহমান (ঘোড়া), সাবেক চেয়ারম্যান দুর্লভ চন্দ্র মন্ডল (অটোরিক্সা), আশরাফুল আলম (লাঙ্গল), জয়নাল আবেদীন (নৌকা), বর্তমান চেয়ারম্যান মনোয়ার আলম সরকার (আনারস), মোবাশ্বের হোসেন সাইফুল্লাহ (চশমা), রমজান আলী (হাত পাখা) ও জাহেদুল ইসলাম (মটর সাইকেল)। শ্রীপুর ইউানিয়নে ৯ প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এরান হলেন খন্দকার আতাউর রহমান (চশমা), আজাহারূল ইসলাম (আনারস), আসাদুজ্জামান (মটর সাইকেল), জাহিদুল ইসলাম (টেলিফোন), নজরুল ইসলাম রাজা (লাঙ্গল), শাহজাহান আলী (অটোরিক্সা), বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম (নৌকা), শাহিন মিয়া (টেবিল ফ্যান) ও সোহেল রানা সোনা (ঘোড়া)। উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কাপাসিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে প্রার্থী সংখ্যা ৮ জন। এরা হলেন আব্দুর রহিম সরকার (আনারস), আব্দুল জলিল সরকার (মটর সাইকেল), জামাল উদ্দিন (অটোরিক্সা), বর্তমান চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সরকার (লাঙ্গল), বাদশা মিয়া (ঢোল), সাবেক চেয়ারম্যান মনজু মিয়া (চশমা), রেজাউল করিম জোতদার (ঘোড়া) ও রফিকুল আজম সরকার (নৌকা)।
প্রার্থীরা সবাইর কোমর বেধে মাঠে নেমেছেন ভোট যুদ্ধে। প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। প্রতীক পাওয়ার সাথে সাথেই গ্রামাঞ্চলের রাস্তা, অলি-গলি, চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরা, বিভিন্ন স্থাপনা ও বসত বাড়ির সামনে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা সবাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কথা হয় বিভিন্ন ইউনিয়নের ৩৫ জন প্রার্থীর সাথে। তারা সবাই আশাবাদী জয়ের ব্যাপারে। ১০ প্রার্থী বলেন জনগণের ইচ্ছাতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তাই জনগণ নির্বাচনে ভোট দিয়ে পার করবেন এ কামনা করছি। সকল প্রার্থীর প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে ইউনিয়নগুলো। হিসাব-নিকাশ চলছে ভোটারের। দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ায় ভোটাররা স্ব-স্ব দলের দিকে ঝুকে পড়ছেন। দিন যতই যাচ্ছে ততই ভোটারদের মতও পাল্টে যাচ্ছে। প্রার্থীরা আরামের ঘুম হারাম করে নতুন শীত উপেক্ষা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রার্থীদের সাথে মাঠে নেমেছেন স্ত্রী- সন্তান ও স্বামীরাও। তাদের আতœীয়-স্বজনরাও বসে নেই। সবার আশা ভোট যুদ্ধে জিততেই হবে। তবে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেয়ার ব্যাপারে সামনা-সামনি কোন প্রার্থীকেই নিরাশ করছেন না। ব্যবসায়ী ভোটারদের দোকানে গিয়েও ভোট প্রার্থনা করছেন। শুধু তাই নয় মাঠে কর্মরত শ্রমিকদের কাছেও যাচ্ছেন ভোটের আশায়। দিচ্ছেন নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি। বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ভোটার জমির উদ্দিন বলেন প্রার্থীরা সবাই ভাল লোক। কাকে ভোট দেব তা এখনও মনস্থির করতে পারিনি। শান্তিরাম ইউনিয়নের ভোটার হাসনা বেগম জানান, বাবারে প্রার্থীদের আনা-গোনায় রাতে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারি না। কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভোটার শান্ত জানান, নির্বাচন এলে প্রার্থীদের আনা-গোনার কমতি থাকে না। ভোট শেষ হলেই তাদের দেখা পাওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে সে মোতাবেক কাজ করে না। তারা নির্বাচনের পর সব ভুলে যান। ছাপড়হাটী ইউনিয়নের ভোটার সুজন বলেন, অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। কিন্তু কোন উন্নয়ন হয় না। সর্বানন্দ ইউনিয়নের ভোটার রহিমা বেওয়া বলেন প্রার্থীরা এখন আমাকে মা বলে ডাকে। চেয়ারম্যান, মেম্বর ও সংরক্ষিত মহিলা প্রার্থী যারাই ভোটের জন্য আসেন তারা সবাই মা বলে ডাকেন। এতে আমি খুশি হই। কিন্তু ভোট দিব দেখে-শুনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *