বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরকে বাবা সাজানো জামাই বরখাস্ত
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক: বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে অফিস সহায়ক (পিয়ন) পদে চাকরি পাওয়া শামীম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১১ বছর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুর সোনা মিয়াকে বাবা সাজিয়ে জামাই শামীম চাকরি নেন। তার প্রতারণার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেন।
রোববার বগুড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, শ্বশুরকে বাবা দেখিয়ে পিয়ন শামীমের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সত্যতা মিলেছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে এবং আগামীতে অধিকতর তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও অন্যসব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, এলাকাবাসী শ্বশুরকেও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউনিয়নের মাধববাঁকা গ্রামের করমতুল্লাহর ছেলে শামীম আগে আদালতে মহুরির কাজ করতেন। সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছার সোনা মিয়ার মেয়ে ফেন্সি খাতুনকে তিনি বিয়ে করেন। বাবার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ফেন্সি মৎস্য কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরি পেয়েছেন। বর্তমানে দুপচাঁচিয়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ে তিনি কর্মরত। বিয়ের পর মাধ্যমিক পাশ শামীম সরকারি চাকরি পেতে শ্বশুর সোনা মিয়াকে বাবা সাজানোর উদ্যোগ নেন। শ্বশুর পক্ষের সহযোগিতায় তার শিক্ষা সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবা মৃত করমতুল্লাহর স্থলে শ্বশুর সোনা মিয়ার নাম যুক্ত করেন। এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টও তিনি নিজের অনুকূলে নেন। ২০১০ সালের নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে তিনি অফিস সহায়কের চাকরি পান। দুপচাঁচিয়া উপজেলা কার্যালয়ে তিনি কর্মরত ছিলেন।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. শামীম হোসেনের (জাতীয় পরিচয়পত্র নং-১০১১৬৫০৫২৮) বাবার নাম পরিবর্তন করে মো: সোনা মিয়া করা হয়েছে। তবে মায়ের নাম জাহানারা বেগম রয়েছে। বর্তমান ঠিকানা : নারহট্ট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উলট্ট পশ্চিমপাড়া এবং স্থায়ী ঠিকানা মাধববাঁকা, কাহালু। কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন তালুকদার বেলাল জানান, শামীম ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাধববাঁকা গ্রামের করমতুল্লাহর ছেলে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী সাকিউল ইসলাম জানান, রাজশাহী সার্কেল থেকে শামীমের সব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়ার ওয়ারিশান সনদে শরিক হিসাবে তার নাম না থাকার অভিযোগের সত্যতা মেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০ নভেম্বর রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে শামীমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে শামীম অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার স্ত্রী ফেন্সি খাতুন জানান, তার কোনো ভাই নেই। শামীমই বাবাকে দেখভাল করেন। তাই শ্বশুরকে বাবা দেখিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন। এ ব্যাপারে অশ্লীল বাক্য প্রয়োগ করে সোনা মিয়া বলেন, এতে আপনাদের কি? যা ইচ্ছা করেন।