চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়া হয় মরিয়মকে

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক: দশ বছরের শিশু মরিয়ম। ফুল বিক্রির পাশাপাশি বাসে উঠে যাত্রীদের কাছে আর্থিক সহায়তাও চাইত মেয়েটি। প্রতিদিনের মতো গত মঙ্গলবার সকালেও রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে সে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে ওঠে। তবে সে যাত্রী নয়; তা বুঝতে পেরে শিশুটির ওপর ক্ষুব্ধ হয় ওই বাসটির চালক ও হেলপার। এরপর চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়া হয় শিশুটিকে। পরে পথচারীরা তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নিলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার চার দিন পর গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলো রাইদা পরিবহনের চালক রাজু মিয়া (২৫) ও তার সহযোগী ইমরান হোসেন (৩৩)।
র্যাব বলছে, ঘটনার দিন শিশুটি সাহায্য চাইতে বাসটিতে উঠেছিল। হেলপার এ সময় তাকে বলে, এটা গেটলক বাস। এই বলে চলন্ত বাস থেকে মরিয়মকে ফেলে দেয়া হয়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে রাজধানীর ভাটারার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে রাইদা পরিবহনের বাস থেকে মরিয়মকে ফেলে দেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ সময় শিশুটির বাবা রনি মিয়া জানতে পারেন ভাটারা এলাকায় একটি মেয়ে শিশুর লাশ পাওয়া গেছে। ওই দিন বিকেলে তিনি মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। পরে এ ঘটনায় রাতেই অজ্ঞাত গাড়িচালককে আসামি করে মামলা করেন তিনি। পরে র্যাব এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। এ সময় র্যাব ঘটনাস্থল ও আশপাশের প্রায় ৫০টির বেশি সিসিটিভি ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে। এরপরই শিশুটির মৃত্যু রহস্য উদঘাটন হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মরিয়ম তার পরিবারের সাথে খিলক্ষেতের কুড়াতলী এলাকায় বসবাস করত। তার বাবা রনি একজন প্রাইভেটকার চালক। মরিয়ম ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তবে অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে অর্থসহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুড়িল ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করত। ঘটনার দিন সকালে মরিয়ম বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পথচারী ও বাসযাত্রীদের কাছে ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাচ্ছিল। তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছেÑ মরিয়ম হেঁটে ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে আসে। এরপর সে রাইদা সিটিং সার্ভিসের একটি বাসে ওঠে। বাসটি সামনে যেতেই একজন পথচারীকে হাত দিয়ে ইশারা করতে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফ্রেমের ঠিক পেছনে ভিকটিম মরিয়মকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান এবং সময় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এখানেই অকালে মৃত্যু হয় মরিয়মের।
তিনি আরো বলেন, অর্থসহায়তা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটিতে উঠেছিল মরিয়ম। কিন্তু ভিকটিমের বাসে ওঠা এবং পড়ে যাওয়ার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ায় ওই বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং নজরদারি আরো বাড়ানো হয়। এরপরই পৃথক অভিযানে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। তারা এ ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *