অন্যরকম সংক্ষিপ্ত এসএসসি পরীক্ষা শুরু আজ
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক: অবশেষে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এবং প্রতি বিভাগে তিন বিষয়ে (নৈর্ব্যক্তিক) পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রথম দিন সকালে হবে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা।
আগামীকাল সকালে মানবিকের বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এবং বিকালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা। এবার সর্বমোট পরীক্ষা দিচ্ছে ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ শিক্ষার্থী। গত বছরের চেয়ে এই সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন। গত বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন। অন্যান্য বছর পরীক্ষার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হলেও এবার ৩০ দিনে শিক্ষার্থীরা ফল পেয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সাধারণত প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেই হিসাবে সাড়ে ৯ মাস পর হচ্ছে পরীক্ষাটি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদেরকে নিজের আসনে বসতে হবে। যৌক্তিক কারণে কারও দেরি হলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্ব হওয়ার কারণ রেজিস্টারে উল্লেখ করে প্রবেশ করতে হবে। কেন্দ্রসচিব এসব পরীক্ষার্থীর তালিকা প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবেন।
এবারে মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এসএসসিতে অংশ নিচ্ছে ১৮ লাখ ৯৯৮ জন। এছাড়া দাখিলে ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭ এবং এসএসসি (ভোকেশনাল) ১ লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন পরীক্ষার্থী আছে। পাশাপাশি বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ৪২৯ জন পরীক্ষার্থী ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিচ্ছে। সারা দেশে এসএসসিতে ৩ হাজার ৬৭৯টি, দাখিলে ৭১০টি এবং এসএসসি ভোকেশনালে ৭৬০টি কেন্দ্র আছে। গত বছরের চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৫১টি আর কেন্দ্র ১৬৭টি বেড়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, শনিবার করোনা আক্রান্ত আর হাত-পা ভাঙা রোগীরা বিশেষ অনুমতি নেওয়ার জন্য ভিড় জমাচ্ছে। ঢাকা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত একজন করোনা রোগী ও ৭-৮ জন হাত ভাঙা রোগী এসেছে, যারা বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা দিতে চান। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, হাত ভাঙা রোগীরা প্রতিবন্ধীর মর্যাদায় শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারছে। তবে সর্বোচ্চ অষ্টম শ্রেণি পাশ শিক্ষার্থীদের শ্রুতিলেখকের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আর করোনা রোগীরা আইসোলেশনে থেকে পরীক্ষা দিতে পারবে।
নকলমুক্ত ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আয়োজনে ইতঃপূর্বে ৯ দফা নির্দেশনা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রশ্নফাঁস রোধে মুদ্রিত প্রশ্নপত্রের সবকটি সেট ট্রেজারি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিতে বলা হয়।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষায় পরীক্ষাকেন্দ্রে একজনের বেশি অভিভাবক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে আরও আছে-যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে পরীক্ষার্থীদের; কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, কেন্দ্রসচিব ছাড়া কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না; কেন্দ্রসচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
অননুমোদিত ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে; প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দিতে হবে।
ট্রেজারি বা থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার মনোনীত উপযুক্ত প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসারসহ প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতি ছাড়া প্রশ্ন বের করা যাবে না বা বহন করা যাবে না।
এবারের এই পরীক্ষা হচ্ছে সংক্ষিপ্ত (কাস্টমাইজড) সিলেবাসে। অনুরূপভাবে ১০০-এর পরিবর্তে ৫০ নম্বরে নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা। তবে পরীক্ষায় প্রশ্নের বিকল্পসংখ্যা আগের মতোই থাকছে।
যেমন: বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদেরকে আগে ৮টি সৃজনশীল প্রশ্নের মধ্যে ৫টির উত্তর দিতে হতো। এখন ৮টির মধ্যে ২টির উত্তর দিতে হবে। মানবিক এবং বিজনেস স্টাডিজে ১১টির মধ্যে উত্তর করতে হবে ৩টি। এমসিকিউ-এর ক্ষেত্রে মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজে ৩০টির মধ্যে ১৫টি আর বিজ্ঞানে ২৫টির মধ্যে ১২টির উত্তর করতে হবে। পরীক্ষার সময় তিন ঘণ্টার পরিবর্তে দেড় ঘণ্টা। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় বেশি পাচ্ছে।
বিজ্ঞানে ২৫ নম্বরের ব্যাবহারিক, ২৫ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৫০ নম্বরের সিকিউ প্রশ্ন হতো। আর মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজে ব্যাবহারিকবিহীন বিষয়ে ৭০ নম্বরে সিকিউ ও ৩০ নম্বরে এমসিকিউ পরীক্ষা হতো।
এবারও নির্ধারিত পূর্ণমানের মধ্যে শিক্ষার্থী যা পাবে, সেটা শতভাগে রূপান্তর করা হবে। প্রত্যেক বিভাগে ৩টি করে বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে। বাকি বিষয়ে জেএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের প্রবণতা দেখে নম্বর দিয়ে এসএসসি ও সমমানে ফল দেওয়া হবে। ২৩ নভেম্বর শেষ হবে এই পরীক্ষা।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্নপত্রের সুরক্ষা নিশ্চিতে অন্যান্য ব্যবস্থার একটি হচ্ছে, ট্রেজারি বা থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে কেন্দ্রে বহুমুখী নির্বাচনি প্রশ্নসহ রচনামূলক বা সৃজনশীলের সব সেটের প্রশ্নই নিতে হবে; সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে। সেই অনুযায়ী নির্ধারিত সেট কোডে পরীক্ষা নিতে হবে; কেন্দ্রের দয়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার), কেন্দ্রসচিব ও পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে বিধি অনুযায়ী প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে; পরীক্ষা চলাকালীন এবং পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগে বা পরে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।
এসময়ে কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে; অনিবার্য কারণবশত কোনো পরীক্ষা বিলম্বে শুরু করতে হলে যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের সেই সময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে; পরীক্ষাকেন্দ্রে ও প্রশ্ন পরিবহণে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নজরদারি জোরদার করবে।