উন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতা কর্মসূচিতে সহায়তার মাধ্যমে উত্তরের ধনী দেশগুলো তাদের উন্নয়ন অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারে। তিনি বলেন, অনেক উন্নত দেশ এখনো তাদের আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তাদের জন্য সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতা কার্যক্রমকে সমর্থন করা তাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি উপায় হতে পারে।ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গ্লোবাল সাউথ-এ অনেক নিজস্ব উন্নয়ন সমাধান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে এই সমাধানগুলোর অনেকগুলো উন্নয়নশীল দেশে প্রয়োগ করা ও জোরদার করা যেতে পারে। এছাড়া এই প্রয়াস প্রযুক্তিগত সহায়তার নামে পুনরায় সমাধান উদ্ভাবন এড়াতে সাহায্য করতে পারে? তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোতে সরাসরি সাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার জন্য আরও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরের অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা সাউথ-সাউথ সহযোগিতা কর্মসূচির স্বচ্ছতা এবং ব্যয়-সাশ্রয় বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ২০১৯ সালে একটি ‘সাউথ-সাউথ জ্ঞান ও উদ্ভাবন কেন্দ্র’ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি দক্ষিণে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান সৃষ্টির জন্য একটি প্ল্যাটফরম হিসাবে কাজ করবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ, জি২০ এবং ওইসিডি-কে এই ধরনের দূরদর্শী প্রস্তাবগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাউথ-সাউথ সহযোগিতার ধারণাটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান রয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডায় স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার উদ্যোগ জোরদার হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের সৃজনশীল উন্নয়ন সমাধানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
তবুও সাউথ-সাউথ সহযোগিতার প্রয়াস আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আলোচনায় পেছনে আসন নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে প্রচলিত চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ এই ধরনের অনেক সম্ভাব্য সাউথ-সাউথ সহযোগিতা প্রকল্পের অর্থায়ন কম রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ত্রিমুখী সহযোগিতার ধারণাটি সম্ভাবনার অনুরূপ সফল হয়নি এবং এই ঘাটতি দূর করা দরকার।
বিশ্বব্যাপী বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে অসম প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন আমরা দেখেছি, আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থা গ্লোবাল সাউথের লাখ লাখ লোককে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার সুযোগ লাভের বিশাল ব্যবধানটি খুব বেশি উল্লেখ করার মতো।তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মতো কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের ভ্যাকসিনের সমতা ও গুণমান নিশ্চিত করার সক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন শেয়ার করার লক্ষ্যে বিপুলসংখ্যক ভ্যাকসিন উৎপাদনে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান বা ট্রিপস ছাড় দেওয়াসহ সহায়তা প্রয়োজন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মহামারি চলাকালীন জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ ও অন্যান্য সুবিধা কয়েকটি বন্ধু দেশে পাঠিয়েছে এবং একটি ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য তার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বাহিনীকে প্রেরণ করেছে।তিনি উল্লেখ করেন, গত বিশ বছরে আমাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে আমরা জাতিসংঘের উদ্যোগে ভ্রাতৃপ্রতিম আফগান জনগণের জন্য মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণ লাভ করায় আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় নিজস্ব প্ল্যাটফরম তৈরি করার জন্য কাজ করা।প্ল্যাটফরমটি আমাদের মূল্যভিত্তিক কূটনীতির কাজকে সমন্বয় ও সম্প্রসারিত করবে এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, শান্তিরক্ষা ও মানবিক প্রচেষ্টায় অবদান রাখার ক্ষেত্রে একাধিক উপায়ে সাহায্য করবে।বাংলাদেশ সব সময়ই বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) স্বার্থ তুলে ধরেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হিসাবে কাজ করছি এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিনের এবং প্রমাণিত।বৈশ্বিক মানবতার অভিন্ন স্বার্থে দৃঢ় অংশীদারত্ব গড়ে তোলার আহ্বান : এদিন ইউনেস্কো সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক মানবতার অভিন্ন স্বার্থে দৃঢ় অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সহিষ্ণুতা ও মর্যাদা সঞ্চারিত করার মাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং যোগাযোগকে কার্যকর হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছি।ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই সংস্থার নীতির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার ১৯৭২ সালে আমাদের প্রাথমিক সদস্যপদ লাভের মাধমে প্রতিফলিত। আমরা এই সংগঠনকে বিশ্ব শান্তি ও সম্মিলিত সমৃদ্ধি জোরদারের জন্য অন্যতম কার্যকর মঞ্চ হিসাবে বিবেচনা করি।শেখ হাসিনা বলেন, বৃত্তি প্রদান, লিঙ্গ-সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম, আইসিটি শিক্ষার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ প্রচুর। স্কুলে বছরের শুরুতে প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনা মূল্যে ৪০ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছি।তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষা মহাপরিকল্পনায় আইসিটি চালু করেছি, এর আওতায় প্রায় ৮৩ হাজার স্কুলকে আইসিটি ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে এবং ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৬ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
ইউনেস্কোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী সংস্থাটির মহাপরিচালককে অভিনন্দন জানান।