৮৩৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত ৭

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক: দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ চলাবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো স্থানে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি বিনিময় করে প্রার্থীদের সমর্থকরা।

এছাড়া ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ব্যালট পেপারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় চার জেলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। নিহতদের মধ্যে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় তিনজন, কুমিল্লার মেঘনায় দুইজন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে একজন এবং কক্সবাজার সদর উপজেলায় একজন রয়েছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় ১৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এসব ঘটনায় অন্তত ৩০ জনকে আটক করা হয়। আর জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে ভোট খুব সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তবে সহিংসতা ও মৃত্যুর খবর দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা নিহত হয়েছেন, তাদের কেউ ভোটকেন্দ্রে মারা যাননি।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সহিংসতা হয়েছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

এ নিয়ে দুই ধাপে তিন দিনে (করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রথম ধাপের ভোট দুই দিনে নেওয়া হয়) ১ হাজার ১৯৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সাতজন নিহত হলেন।

এর আগে ২১ জুন প্রথম ধাপের ২০৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিন তিনজন এবং ২০ সেপ্টেম্বর একই ধাপের ১৬০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনজন মারা যান।

প্রথম ধাপের এ পর্যন্ত নির্বাচনি সহিংসতায় মোট ৫৯ জন নিহত হয়েছেন। এসব ইউনিয়নে সব মিলিয়ে ১৫২ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়।

গতকাল ভোটগ্রহণ চলাবস্থায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের পুরান বাজারে একটি কেন্দ্র দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন।

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার সদর ইউপির দুটি কেন্দ্রে সরকারদলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।

কক্সবাজারের সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হন।

দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬৩টি জেলার ১১৫ উপজেলায় বৃহস্পতিবার ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। এতে ৩ হাজার ৩১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৪১ হাজার ২১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে ১৪টি জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ধাপে ভোটকেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির ২৫ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন ছিল।

আর ভোটকেন্দ্রের পাহারায় ছিলেন পুলিশ ও আনসারের দেড় লাখের বেশি সদস্য। এ ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে বুধবার আশা প্রকাশ করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। ইসি সূত্র জানায়, এ নির্বাচনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় ১৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
এসব কারণে নির্বাচনি সহিংসতা হয়ে থাকে। যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো না ঘটলে আরও ভালো হতো। পরবর্তী নির্বাচন আরও ভালো হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৬৫-৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন।

হুমায়ুন কবীর বলেন, জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা যেভাবে ফোর্স চেয়েছিলেন, সেভাবে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সবাই অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। এ কারণে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। এই নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখব কোন জায়গায় জোর দিতে হবে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- নরসিংদী : ভোরে রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের পুরান বাজারে কেন্দ্র দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

এ সময় গুলিতে উভয়পক্ষের তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন-বিদ্রোহী প্রার্থী রাতুল হাসান জাকির সমর্থক বাঁশগাড়ী গ্রামের হিকিম মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিন মিয়া (৪৫) ও হক মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর (২৭) এবং বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী আশ্রাফুল হকের সমর্থক একই এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (৪৫)। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

রায়পুরা থানার ওসি আজিজুর রহমান তিনজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। বেলা ১১টার দিকে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে রায়পুরার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের করিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংঘর্ষ হয়েছে।

এতে সাইফুল নামে একজনের মাথা ফেটে যায় এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চসুবুদ্ধি ইউনিয়নের মহিষবের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে কেন্দ্রটি স্থগিত করা হয়েছে।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, শত শত লোক টেঁটা নিয়ে কেন্দ্রে হামলা করে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছে।

কুমিল্লা ও মেঘনা : তিতাস এবং মেঘনা উপজেলার ১৬ ইউপিতে নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মেঘনা উপজেলার সদর ইউপির আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভাওরখলা ইউপির খিলারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পৃথক সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।

এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। নিহতরা হলেন-মেঘনা উপজেলার সানাউল্লাহ ঢালী এবং একই উপজেলার ভল্লবেরকান্দি গ্রামের শাওন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আফজল হোসেন।

জানা যায়, আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৌকা ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় মাথায় গুরুতর আঘাতে রক্তক্ষরণে মারা যান শাওন। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মফিজুল ইসলাম বলেন, বহিরাগতরা কেন্দ্রে হামলা করায় ভোটগ্রহণ প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

খিলারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে মারা যান সানাউল্লাহ ঢালী। এ ছাড়া তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি ইউপিতে সরকার দলের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক অস্ত্রের মহড়া হয়েছে। এ সময় ওই ইউপির দাসকান্দি, হরিপুর, কদমতলী ও মানিককান্দি ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

কক্সবাজার : কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়েছে।

এসময় বর্তমান মেম্বার শেখ কামালের ছোট ভাই আকতারুজ্জামান পুতু (৩৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

সংঘর্ষে বর্তমান ইউপি সদস্য ও সদস্য প্রার্থী শেখ কামালসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলন্ডী ইউনিয়ন ও উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জোরপূর্বক ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে
এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে একটি, নরসিংদীতে একটি, নেত্রকোনায় দুটি, গোপালগঞ্জে একটি, চট্টগ্রামে দুটি, কক্সবাজারে দুটি, নারায়ণগঞ্জে একটি ও শেরপুরে দুটি কেন্দ্র রয়েছে।

ইসি সচিব যা বললেন : ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং করেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তিনি বলেন, পুরো দেশে ৮৩৪টি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছে।

প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় নির্বাচন কমিশন থেকে খোঁজ নিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও কেউ কেউ অভিমত দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন মনে করে, ভোট খুব সুষ্ঠুভাবে হয়েছে, উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে।

তিনি বলেন, সারা দেশে ৮ হাজার ৪০০ ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। ১০টি ভোটকেন্দ্রে কিছু দুষ্কৃতকারী ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে। এরকম ঘটনায় ১০টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে।

ইসি সচিব বলেন, এর আগে ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। প্রতিটি মৃত্যু দুঃখজনক। ইউপি নির্বাচনে ঘরে ঘরে প্রতিযোগিতা হয়, পাড়ায় পাড়ায় প্রতিযোগিতা হয়। প্রার্থীরা অতি আবেগি হয়ে যান। এসব স্থানে পৃথক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা ও গণ্ডগোলের কারণে ২০ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। যাচাই বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম : ফটিকছড়িতে দুই ইউপি মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মোহাম্মদ শফি নামে একজন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বাকিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের লালপুর তোফায়েল আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

হবিগঞ্জ : আজমিরীগঞ্জের জলসুখা ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী রোখসানা আক্তার শিখা ও বিদ্রোহী প্রার্থী ফয়েজ আহমেদ খেলুর সমর্থকদের সংঘর্ষে অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। সংঘর্ষে আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। জলসুখা ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল জব্বার জানান, ব্যালট পেপার আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।

নোয়াখালী ও কোম্পানীগঞ্জ : বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নে কেন্দ্র দখলের চেষ্টাকালে পুলিশের সঙ্গে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।

এতে চেয়ারম্যান প্রার্থী আনিসুর রহমান গুলিবিদ্ধসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে জালভোট দেওয়ার অভিযোগে মোহাম্মদ জুয়েল নামের যুবককে ৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বড়াইগ্রাম (নাটোর) : বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নে সকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। চান্দাই উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যানের ছেলেও রয়েছেন।

অপর দিকে নগর ইউনিয়নের ধানাইদহ কেন্দ্রে বিদ্রোহী প্রার্থী শামসুজ্জোহা এবং একটি টিভি চ্যানেলের সংবাদ সংগ্রাহক আবু মুসার ওপর হামলা করেন নৌকার সমর্থকরা।

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) : বিক্ষিপ্ত গোলযোগ, হামলা-পালটাহামলার মধ্য দিয়ে মীরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে এদিন নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

১২নং খৈয়াছরা ইউপিতে বাধা, ১৩নং মায়ানীতে বন্দুকযুদ্ধ, ৬নং ইছাখালীতে জালভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খৈয়াছরা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহেদ ইকবাল চৌধুরী অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থীর লোকজন তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়।

ভোট দিতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা হামলার শিকার হয়েছেন। এতে তার স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে, বোনসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাহফুজুল হক জুনু (নৌকা) অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শরীয়তপুর : শরীয়তপুর সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার তুলাসারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বসতঘর ভাঙচুর ও বোমা হামলা, আংগারিয়ায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থদের সংঘর্ষ, রুদ্রকর, মাহমুদপুর ইউনিয়নে কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অন্তত ৭০ জন আহত হয়েছেন।

শেরপুর : শেরপুর সদরের ১৪ ইউনিয়নে ভোট হয়েছে। দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় চরমুচারিয়া ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবুলসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে ব্যালট ছিনতাই, ব্যালট বাক্স ভাঙচুর, সহিংসতা এবং কেন্দ্র দখলের অভিযোগে ৫টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে কেন্দ্রগুলো বাতিল করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ও বন্দর : বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নে নৌকায় জালভোট মারাকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদরের বৈকারি ইউনিয়নের খলিলনগর কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আসাদুজ্জামান অসলে ও তার ছেলে জহির রায়হান হৃদয়সহ আটজন প্রতিপক্ষের সমর্থকদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুপুর ১২টার দিকে ভোমরা ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া কেন্দ্রের বাইরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

যশোর : চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নে মাড়ুয়া স্কুলকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর ও অন্তত পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

এ সময় কেন্দ্রে একঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক এবং দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের পৃথক সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

আরও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা-অনিয়ম : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। মাদারীপুরের কালকিনিতে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ভোলার দৌলতখানে ভবানীপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে জালভোট দেওয়ার সময় রিয়াদ নামে একজনকে আটক করে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্রে হামলা ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। দামুড়হুদায় ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়ায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের রামগতির কমলনগরে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *