সড়কে চলছে গণপরিবহন
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গত শুক্রবার (৫ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু করে গণপরিবহনসহ সব পরিবহন মালিক সমিতির সংগঠনগুলো। তবে নতুন ভাড়া বাড়ানোর কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই গণপরিবহনের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।আজ রোববার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ দপ্তরে পরিবহন মালিক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠক শেষে বাস ভাড়া বাড়ানোর পর পরেই সড়কে বাস নেমেছে। রাজধানীর ফার্মগেট, গুলিস্তান, বাংলামোটর, মিরপুর, উত্তরা এবং সাভারের সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহন চলতে শুরু করেছে। সরেজমিন দেখা গেছে-আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল, গুলিস্তান-উত্তরা, ঢাকা-আরিচা, ও নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক-মহাসড়কে দেখা যায়, উপজেলার সব রুটে চলছে গণপরিবহন। বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যে ছুটছে বাসগুলো।সাভার পরিবহনের মমিনুল নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, পাঁচ টাকার ভাড়া ১০ টাকা দিলেও বাস কর্তৃপক্ষ ২০ টাকা দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে তার বিতণ্ডা হয়েছে। একই বাসের যাত্রী নান্না শেখ অভিযোগ করেন, বাস চলে সিএনজিতে। তবুও তারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে। সাভার পরিবহনের চালক আসগর জানান, মালিকের নির্দেশেই ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। তারা জানান, পথে পথে চাঁদা দিয়েই ধর্মঘটের মধ্যেও গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তাই তারা যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ঠিকানা পরিবহনের চালক মফিজ মিয়া বলেন, পেটের দায়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। সাপ্তাহিক কিস্তি আর সংসার চালাতে এমনটা করতে হচ্ছে তাদের।এদিকে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি বাস ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিকেরা। বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দূরপাল্লার বর্তমান বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা, তা বাড়িয়ে ২ টাকা করার প্রস্তাব হয়েছে। অর্থাৎ এতে কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৫৮ পয়সা গুনতে হবে। ভাড়া বৃদ্ধির এ হার ৪০.৮৫ শতাংশ। এছাড়া মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১.৭০ পয়সা, প্রস্তাব হয়েছে ২.৪০ পয়সা করার। এতে ৭০ পয়সা ভাড়া বাড়বে। বাড়তি ভাড়ার এ শতকরা হার ৪১.১৮ শতাংশ। মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১.৬০ পয়সা। এটি বাড়িয়ে ২.৪০ পয়সা করার প্রস্তাব হয়েছে। এতে ভাড়া বাড়ে কিলোমিটারপ্রতি ৮০ পয়সা। ভাড়া বৃদ্ধির এ হার ৫০ শতাংশ।অন্যদিকে মালিপক্ষের এই প্রস্তাবের জবাবে বিআরটিএ জানিয়েছে, বাস ভাড়া বাড়িয়ে দুরপাল্লায় কিলোমিটারে ১ টাকা ৮২ পয়সা ও মহানগরে ২ টাকা ১০ পয়সা করতে চায় তারা। সে হিসেবে দুরপাল্লায় বাস ভাড়া বাড়বে কিলোমিটারে ৪০ পয়সা ও মহানগরে বাস ভাড়া বাড়বে কিলোমিটার প্রতি ৪০ পয়সা করে। উভয়পক্ষের যেকোনো একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে।এর আগে গত বুধবার রাতে ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বা ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকালেই পণ্যবাহী গাড়ির মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন ধর্মঘটে যাওয়ার ডাক দেয়। জেলায় জেলায় বাস না চালানোর ঘোষণাও দেয়া হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি বিআরটিএর কাছে ভাড়া যৌক্তিক হারে বাড়াতে আবেদন করে। সে আবেদনে লেখা ছিল, জেলায় জেলায় বাসমালিকরা বলছেন, বিদ্যমান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করলে তাদের লোকসান হবে। তাই তারা বাস চালাবেন না।বাস ও পণ্যবাহী যানবাহনের পাশাপাশি ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শনিবার ধর্মঘটের ডাক দেন লঞ্চ মালিকেরাও। এতে দেশজুড়ে বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।