দেবহাটায় লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে জমি দখলের পায়তারা, থানায় অভিযোগ
মিজানুর রহমান দেবহাটা : দেবহাটার সখিপুরে জমি লিখে দেয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা নিয়ে বায়নাপত্র সম্পাদনের প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলেও চুক্তি মোতাবেক জমি লিখে না দিয়ে এবং বায়নার টাকা ফেরত না দিয়ে গোপনে অন্যত্র জমি বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে রাতের আঁধারে জমি দখলের পায়তারায় লিপ্ত হয়েছে প্রভাবশালী একটি চক্র।
এঘটনায় ভুক্তভোগী উত্তর সখিপুর গ্রামের মৃত মোহর আলী সরদারের ছেলে মোক্তার সরদার বাদী হয়ে শুক্রবার দুপুরে কালীগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের কাজলা গ্রামের শামছুর রহমানের স্ত্রী নাজনিন নাহার ওরফে সামিরা, উত্তর সখিপুরের আদাড় সরদারের ছেলে আরশাদ সরদার, তার ছেলে রাজু আহম্মেদ এবং রাজুর স্ত্রী কুলসুম পারভীনের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরে দায়েরকৃত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেবহাটা থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী মোক্তার সরদার লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, উত্তর সখিপুরে তার বসতবাড়ির পূর্ব পশ্চিম পাশে সখিপুর মৌজার ৮১৪ নং এসএ খতিয়ানের এসএ ১৫২৮ দাগে স্থানীয় মৃত ঈমান আলীর কন্যা ও নলতার কাজলা গ্রামের শামছুর রহমানের স্ত্রী নাজনিন নাহার ওরফে সামিরা’র পৈত্রিক সূত্রের প্রায় সাড়ে ৪ শতক জমি ছিল। ওই জমির দুপাশে লাগোয়া ক্রয়কৃত জমি রয়েছে মোক্তার সরদারের। তিনি তার জমির মাঝখানে থাকা নাজনিন নাহারের জমিটুকু কিনতে চাইলে ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ প্রতি শতক জমি ১ লাখ টাকা করে চার শতক জমি চার লক্ষ টাকায় একে অপরের কাছে বেচাকেনা করতে সম্মত হন মোক্তার সরদার ও নাজনিন নাহার। করোনা পরিস্থিতির কারনে জমির রেজিস্ট্রি কাজ বিলম্বিত হওয়ার কথা বলে নাজনিন নাহারের উপস্থিতিতে তার ছেলে মনিরুল ইসলাম ওই দিনই মোক্তার সরদারের কাছ থেকে অগ্রীম ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বায়নাপত্র হিসেবে একটি কাগজে স্বাক্ষর করে জমির দখল বুঝিয়ে দিয়ে যান মোক্তারকে। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাকি টাকা নিয়ে জমিটি মোক্তার সরদারের নামে রেজিস্ট্রি করে দিবেন বলেও তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় নাজনিন নাহার ও তার ছেলে মনিরুল ইসলাম। সেখান থেকেই ওই জমির ভোগদখলে রয়েছেন মোক্তারের পরিবার। গত কয়েক বছর ধরে চুক্তি মোতাবেক বাকি টাকা নিয়ে বারবার নাজনিন নাহারের কাছে ধরণা দিলেও বিভিন্ন অজুহাতে মোক্তারকে জমি লিখে দেননি নাজনিন নাহার।
সম্প্রতি মোক্তার সরদার ও তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন যে, তাদের বায়নাপত্র করা জমিটি চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে প্রতিবেশী আরশাদ সরদারের ছেলে রাজু আহম্মেদ ও পুত্রবধূ কুলসুম পারভীনের কাছে নতুন করে বিক্রির চেষ্টা করছেন নাজনিন নাহার। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠক হলে ভুক্তভোগী মোক্তারের পরিবারকে ঠকিয়ে তাদের বায়নার টাকা ফেরত কিংবা জমি লিখে না দেয়ার জন্য সেসব শালিসে অপমান অপদস্ত হন নাজনিন নাহার। বর্তমানে রেজিস্ট্রি ছাড়াই ওই জমিটি কিনে নেয়ার দাবী করে রাতের আঁধারে কাজলা ও ইন্দ্রনগরের লাঠিয়াল এবং ঢালী বাহিনী নিয়ে মোক্তার সরদারের দখলে থাকা জমিটি জবর দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে আরশাদ সরদার, তার ছেলে রাজু আহম্মেদ এবং পুত্রবধূ কুলসুম পরভীন। তারা বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে মোক্তার সরদারকে মারপিট করে জমি জবর দখলের হুমকি দিচ্ছে বলেও জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
এনিয়ে মোক্তার সরদার বাদী হয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (নং- পি ১০৩৩/২১) দায়ের করলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) এর মাধ্যমে সদর ইউনিয়ণ ভূমি কর্মকর্তাতে নির্দেশ দেন আদালত। সে মোতাবেক বিষয়টি তদন্তের জন্য সদর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা উভয়পক্ষকে কাগজপত্রসহ হাজির হতে নোটিশ করলে রীতিমতো গাত্রদাহ শুরু হয়েছে আরশাদ আলী ও তার ছেলে রাজু আহম্মেদসহ অন্যান্যদের। সম্প্রতি তারা আবারো জমিটি লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে জবর দখলে নিতে বিভিন্ন পায়তারা শুরু করেছে। জবরদখল প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে এবং যেকোন মূহুর্তে সেখানে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে মোক্তার সরদার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয়পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আইনের মাধ্যমে সেখানকার উদ্ভুত সমস্যার সমাধান হবে। কেউ সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি।