দামুড়হুদায় প্রবাসী শশুরের ১৮ লক্ষ টাকা আত্মসাত করে শিশু ছেলেসহ স্ত্রীকে সুকৌশলে ডিভোর্স দেওয়ার অভিযোগ স্বামী রাকিবুলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা তদন্ত সিআইডির হাতে
সাইফুল ইসলাম ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গার দামুড় হুদাই রকিবুল ইসলাম (২৭) ও তার মা রুপালী খাতুন (৪৫) পুর্ব পরিকল্পনামূলে বাবুল আক্তার নামে সৌদি এক প্রবাসীর কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে আঠার লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রকিবুল হোসেন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার বাজারপাড়া গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে। অপরদিকে প্রবাসী বাবুল আক্তার একই থানার ৭ নং দামুড়হুদা ইউনিয়নের চিৎলা গ্রামের মোঃ লোকমান সর্দারের ছেলে।যার মিশন সফল করতে প্রবাসী বাবুল আক্তারের একমাত্র মেয়ে স্বর্নালীকে বিয়ে করেছিলেন রকিবুল হোসেন নামে ঐ প্রতারক। শুধু টাকা আত্মসাৎ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি রকিবুল।ঐ প্রবাসীর এক মাত্র মেয়ের জীবন নিয়েও ছিনি মিনি খেলা হয়েছে। প্রবাসীর মেয়েকে বিয়ে করে তার সার্থ হাসিল হওয়ার পর নাবালক একটি সন্তান সহ তাকে তালাক দিয়ে বিধবা বানানো হয়েছে।
এমনি অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী প্রবাসী বাবুল আক্তারের স্ত্রী রহিমা খাতুন বলেন, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বরে মাত্র ৫ হাজার টাকা কাবিনে পারিবারিক ভাবে তার একমাত্র মেয়ে স্বর্নালীকে বিয়ে করেছিলেন রকিবুল হোসেন। বিয়ের পর সংসার চলাকালীন সময়ে তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ছেলের নাম রাখা হয় সানজামুল হাসান (সাজিম)। বর্তমান ছেলেটির বয়স ৩ বছর ৬ মাস।বিয়ের পর বছর খানেক ভালো ভাবে সংসার করলেও তার পর থেকে স্বর্নালীর উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।স্বর্নালীকে দেওয়া হয়না ঐ পরিবারে স্ত্রীর অধিকার।এমনকি তার উপর শারীরিক নির্যাতনও চালানো হয়েছে ছোট খাটো বিষয় নিয়ে। যার ফলে চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তিনি বলেন, একমাত্র মেয়ের সুখের কথা ভেবে জামায় রকিবুল হোসেন যা চেয়েছেন, যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই পূরণ করার চেষ্টা করেছেন তারা। সবমিলে স্বর্নালীর ব্যবহৃত স্বর্নালংকার সহ সর্বমোট ১৮,২৩৫৬/ টাকা পরিকল্পনা অনুযায়ী সু কৌশলে নিজের কব্জায় নেওয়ার পর পুনরায় যৌতুকের টাকা দাবী করে নাবালক ছেলে সহ স্বর্নালীকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় এবং পরে তালাক প্রদান করেন।এতে অল্প বয়সে একটি সন্তান সহ বিধবা হয়ে তার মেয়ে মানুষিক ভারসাম্যতার ঝুকিতে রয়েছেন।
এ বিষয়ে স্বর্নালীর মা রহিমা খাতুন বাদী হয়ে জামায় রকিবুল হোসেনের নামে দামুড়হুদা থানার বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামী করা হয়েছে রকিবুলের মা রুপালী খাতুনকেও।শত চেষ্টা করেও রকিবুলের পরিবারের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখার প্রচেষ্টা ব্যার্থ হয়ে এবং রকিবুলের কাছে ঐ টাকা ফেরত চাইলে তিনি অস্বীকার করায়, ন্যায় বিচার পেতে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি করতে বাধ্য হন বলে জানান, স্বর্নালীর মা রহিমা খাতুন।
সুত্রে জানা যায়, পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শশুর এবং শাশুড়ির সাথে সুসম্পপর্ক গড়ে তোলেন রকিবুল হোসেন। একপর্যায় শশুরের বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা তার সোনালী ব্যাংক হিসাব নাম্বারে প্রেরণের জন্য প্ররোচনা দিয়ে ঐ টাকা আমানত হিসাবে রাখবেন বলে শশুর-শাশুড়ির কাছে নিজেকে বিশ্বাসী করে গড়ে তোলেন রকিবুল হোসেন। একমাত্র মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে এবং চতুর জামাইয়ের প্রতারণা বুঝতে না পেরে রকিবুলের প্ররোচনায় পড়ে নিজের ছেলের থেকেও বেশি বিশ্বাস করতে শুরু করেন বাবুল আক্তার। একপর্যায় সৌদি আরব থেকে গত ২০১৮ সালের জুলাই মাসের ১৪ তারিখে ১,১০১০০/ টাকা এবং চলতি বছরের আগস্ট মাসের ১ তারিখে সর্বশেষ ৭১,১১৮/ টাকা সহ মোট ৩৩ দফায় সর্বমোট ১২,৮৭,৩৫৬/ টাকা রকিবুলের ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ করেন।যার দামুড় হুদা শাখার সোনালী ব্যাংক ১০৯৭, এর হিসাব নাম্বার- ৩১০৩৯০১০২০৩৮৯।
এছাড়াও স্ত্রী স্বর্নালীর ব্যবহৃত স্বর্নালঙ্কার, মোটর সাইকেল ক্রয় ও জমি ক্রয় বাবদ ৫,০১৫০০/ টাকা গ্রহন করেন রকিবুল। যা পরবর্তিতে তিনি অস্বীকার করলেও ভুক্তভোগী পরিবারটি জানান, এসবের সুনির্দিষ্ট প্রমান তাদের হাতে রয়েছে। ন্যায় বিচার পেতে যার আনুলিপি মামলার এজাহারের সাথে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত রকিবুলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, শশুরের দেওয়া টাকা আমি তাদের কাজেই ব্যাবহার করেছি। যার কাগজপত্র আমার কাছে আছে কোর্টে তা প্রমাণ করা হবে। তিনি বলেন, স্বর্নালী একটা চোর। যে কারণে আমি তাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়েছি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মিল্টন হোসেন জানান, ইউনিয়ন পরিষদে তালাক নামার একটি কপি এসেছে। যার প্রেক্ষিতে গত সোমবার দু-পক্ষকে ডেকে বসেছিলাম। স্বর্নালীর বাবা বিদেশ থেকে যে টাকা রকিবুলের কাছে পাঠিয়েছে তার ডকুমেন্ট পেয়েছি। তিনি বলেন, রকিবুল জানিয়েছেন, স্বর্নালীর বাবা বিদেশ যাওয়ার সময় বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা লোণ নিয়ে গিয়েছিলো। তার পাঠানো টাকা আমি লোণ পরিশোধ করেছি।তবে রকিবুল এ সংক্রান্ত কোন ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি বলে চেয়ারম্যান জানান।চেয়ারম্যান আরও জানান, সামনের সোমবার পর্যন্ত রকিবুলকে ডকুমেন্ট নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী নাজমুল হাসান লাভলু জানান, রকিবুলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও শশুরের বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা আত্মসাতের দায়ে মোট দুইটি মামলা হয়েছে। আদালত মামলার তদন্তভার সিআইডির কাছে দিয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন আসলে পরবর্তী আইনী ব্যাবস্থা গ্রহন করবে আদালত।