খুলনার করোনা হাসপাতালে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন উপসর্গ থাকা রোগীরা

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: খুলনার ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে মঙ্গলবার (৮ জুন) সকাল ৮টা থেকে বুধবার (৯ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ১৩০ জন। এ সময়ে করোনাভাইরাসে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে ১২৬ জন। এছাড়া বুধবার সকাল ৮টা থেকে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, আসন সংকট থাকায় উপসর্গ রোগীদের মেঝেতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনা ইউনিটে চাপ বাড়ার কারণে আরও একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এবং করোনা ওয়ার্ডে ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, “বেড সংকট থাকলেও রোগী তো ফেরত দিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে রোগীদেরকে মেঝেতে চিকিৎসা দিচ্ছি। আগে তো মানুষের জীবন বাঁচুক। কোনো রোগী যেন চিকিৎসার অবহেলা না পায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. অঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “এখনও পর্যন্ত অক্সিজেন সংকট নেই। দিনকে দিন এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে অক্সিজেন সংকট হওয়ার আশংকা রয়েছে। এর জন্য আমরা ইতিমধ্যে আরও একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ওই প্ল্যান্টটা চালু করতে পারবো বলে তিনি আশাবাদী। ইতিমধ্যে ইঞ্জিনিয়ার এসে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন।”
ডেডিকেটেড করোনা হাসাপাতালের সূত্র মতে, গত ৯ দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ জন এবং উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরও ১৩ জন। এ সময়ের মধ্যে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় ৭৬০ জনকে। অন্যদিকে আইসোলেসন ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে ২১৮ জন।
ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের আইসোলেসনে ফ্লোরে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর স্বজন আফসানা জানান, তার খালাকে ৮ জুন সকালে ভর্তি করানো হয়। বেড খালী না থাকায় ফ্লোরে চিকিৎসা দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এদিকে, খুলনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩০ শয্যার করোনা ইউনিট-২ চালুর জন্য জনবল চেয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আবেদন করেও জনবল না পেয়ে করোনা ইউনিট-২ চালু করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাননি।
উল্লেখ্য, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ লাইন হচ্ছে। করোনা নমুনা দিতে এসে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সর্দি-কাশি ও শরীরে জ্বর নিয়ে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
গত ৯ দিনে খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ১ হাজার ১৪০ জন এর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ৫১২ জন করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর আগে গত ৮ জুন ১৯৭ জনের নমুনা সংগ্রহে ৯৪ জন করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল।
খুলনা বেসরকারী ব্যংকের কর্মকর্তা মুস্তানি হোসেন বলেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সামনে এগোতে পারিনি। শরীরে তীব্র জ্বর, সাথে কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যাও রয়েছে। অনেক সময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে।
করোনাভাইরাসের নমুনা জমা দিতে আসা রোগী রিয়াজুল ইসলাম কায়েস বলেন, লাইনে প্রায় সোয়া দুই ঘন্টার অপেক্ষার পরও নমুনা জমা দিতে পারিনি। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও এখানে বেশ কিছু অনিয়ম হচ্ছে। যাদের ভালো যোগাযোগ রয়েছে তারা আগে থেকে ফোন করছে এবং এই করোনা ইউনিটের দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে এবং দ্রুত পরীক্ষার নমুনা দিচ্ছে। অথচ আমরা এখানে শরীরে জ্বর, সর্দি-কাশি ও অসুস্থতা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।নমুনা সংগ্রহের দ্বায়িত্ব থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, একজন রোগীর নমুনা দিতে হলে তার এনআইডি কার্ড লিপিবদ্ধ করতে হয়, টাকা জমা নেওয়া, নমুনা সংগ্রহ করতে একটু বিলম্ব হয়। তাছাড়া অনেক সময়ে বিশেষ অনুরোধে কয়েকজন রোগীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার ইউনিটের মুখপাত্র ডাঃ.মেহেদী নেওয়াজ বলেন, বর্তমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে নমুনার লাইন। হঠাৎ চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে পরীক্ষা করতে আসা লোকজনের সময় লাগতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *