মোংলা বন্দরে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে
মনির হোসেন,মোংলা: মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, ওএসপি, এনপিপি, আরসিডিএস, এএফডব্লিউসি, পিএসসি যোগদানের পর ধারাবাহিকভাবে বন্দরের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন শুরু করেন। এসময় তিনি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ভিটিএমআইএস প্রকল্প, কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ এবং মোংলা বন্দরের আওতাধীন মেইন সড়কের মেরামত কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন । মোংলা বন্দরের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দরের জন্য সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প যা মোংলা বন্দরের নিজস্ব পানির চাহিদা, বৈদেশিক জাহাজ, মোংলা বন্দরে গড়ে উঠা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ মোংলা বন্দরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুপেয় পানি সরবরাহের মাধ্যমে বন্দর ব্যবহারকারীদের উত্তম সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। তিনি আরো জানান, ভিটিএমআইএস প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আইএমও রেগুলেশন অনুযায়ী সোলাস ও আইএসপিএস কোড অনুসৃত হবে,বন্দরে আগত দেশে বিদেশি জাহাজ নিরাপদ চলাচল ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে, বন্দরে আগত জাহাজের যাবতীয় তথ্যাদি পূর্বাহ্নে জানা সম্ভব হবে। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বন্দর ব্যবহারকারীগণ মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরও আগ্রহী হবে ও বন্দরে অধিক সংখ্যক জাহাজ হ্যান্ডলিং এর পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও বন্দরের বর্তমানে ৮ নম্বর কন্টেইনার ইয়ার্ডের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ৯০% কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরেই এ নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান বন্দরের চেয়ারম্যান। এ ইয়ার্ডে ১ হাজার ৫০টি কন্টেইনার রাখা যাবে এবং মোংলা বন্দরের আওতাধীন মেইন সড়কের মেরামত কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত টেকসইভাবে কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি আরো জানান,মোংলা বন্দরের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসডিজি-২০৩০ ও ভিশন-২০৪১ এর অভিষ্ট লক্ষমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে। বন্দর কেন্দ্রিক অন্যান্য অবকাঠামো সহ পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকার সাথে মোংলা বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে বন্দরের ব্যবহার বহুগুনে বেড়ে যাবে। এ বিবেচনায় ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য মোংলা বন্দরকে সক্ষম করে তোলার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি পরিচালিত অভিক্ষেপণ অনুযায়ী বন্দরের বর্ধিত চাহিদা সুষ্ঠুভাবে মোকাবেলার জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে মোংলা বন্দরে ৩ হাজার জাহাজ, ৩০ হাজার গাড়ি এবং ৮ লক্ষ টিইউজ কন্টেইনার ও ৪ কোটি মেঃটন কার্গো হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিসহ সার্বিক অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মোংলা বন্দরের বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান বন্দরের সঙ্গেই মোংলা বন্দরের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার জাহাজগুলো এই বন্দরে নোঙর করে থাকে। এ বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সম্প্রতি মোংলা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়া ভারত, ভুটান ও নেপালের সাথে সরকারের চুক্তির ফলে এ সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত, নেপাল, ভূটানকে মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন।