মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান, ‘কিছু জানিই না’- দাবি তাপসের
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: ‘মানহানিকর বক্তব্য’ দেয়ার অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলার আর্জি প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে নিজে থেকে কোনও মামলা করেননি জানিয়ে ‘অতি উৎসাহী’দের করা মামলা প্রত্যাহার করতে বলেছেন বর্তমান মেয়র।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটোরিয়ামে সাকরাইন (ঘুড়ি উৎসব-১৪২৭) উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র তাপস বলেন, ‘সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে যে দুটি মামলা হয়েছে, তার সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। আমি এসব মামলার বিষয়ে কিছু জানিই না। অতি উৎসাহী হয়ে হয়তো তারা মামলা করেছেন। তাদের করা মামলা আমি প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’
সাঈদ খোকনের বক্তব্যের সমালোচনা করে তাপস আরও বলেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরূপ মন্তব্য মানুষের কাছে হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। আমি এমন হাস্যকর পরিস্থিতিতে নিজেকে জড়াতে চাই না। সুতরাং তার বক্তব্যে যদি আমার কোনও মানহানিকর কিছু ঘটে সেটি ভবিষ্যতে বিবেচনা করা হবে। আপাতত মামলা নিয়ে ভাবছি না।’
এদিকে মেয়র তাপসকে নিয়ে ‘মানহানিকর বক্তব্য’ দেয়ার অভিযোগে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের নামে করা দুটি মামলার আবেদন গ্রহণ করা হবে কি-না, মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সে বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত।
এর আগে গতকাল সোমবার একই আদালতে কাজী আনিসুর রহমান নামে হাতিরপুলের ভুতেরগলির এক বাসিন্দা ও মো. সারওয়ার আলম নামে এক আইনজীবী বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করেন।
ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ ডিএসসিসি’র অভিযানে উচ্ছেদ হওয়া দোকান মালিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে গত শনিবার (০৯ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সামনে এক মানববন্ধনে ডিএসসিসি’র সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’
তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গত রবিবার (১০ জানুয়ারি) মেয়র তাপস বলেন, ‘যে স্থানটির কথা বলা হচ্ছে সে জায়গাটি দখলকৃত ছিল, এখানে এটি একটি উচ্ছেদ কার্যক্রম। ডিএসসিসির সাবেক মেয়র যা বলেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এমন মন্তব্য দেন, তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। সেটার জবাব আমি দায়িত্বশীল পদে থেকে দেয়াটা সমীচীন মনে করি না।’
এদিকে গতকাল সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর মানিকনগর এলাকার স্লুইসগেট ও পাম্প হাউস পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকনের বক্তব্যকে ‘মানহানিকর’ আখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা (মানহানি মামলা) নেয়ার কথা জানান মেয়র তাপস। তার সেই ইঙ্গিতের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করা হয়।
ওইদিন সাঈদ খোকনের ০৯ জানুয়ারির বক্তব্য প্রসঙ্গে মেয়র তাপস সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘অবশ্যই তিনি (সাঈদ খোকন) মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। তিনি নিজেকে চুনোপুঁটি দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকার করেছেন। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই এটা মানহানিকর হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে পারি। মানহানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো আইনি ব্যবস্থাই নিতে হবে।’
ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেটে (ব্লক-২) নকশা বহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে চলমান অভিযান কোনও ‘ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়’ জানিয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর সাঈদ খোকনের প্রতি ইঙ্গিত করে মেয়র তাপস বলেছিলেন, ‘ওই উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। কোনোভাবেই এ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।’
এদিকে ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেটে (ব্লক-২) দোকানের বৈধতার কথা বলে ৩৪ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের অভিযোগে ডিএসসিসি’র সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গত ২৯ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করা হয়েছে। মার্কেটের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। পিবিআই মামলার তদন্ত করছে, আগামী ৩১ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য রয়েছে।
মামলায় সাঈদ খোকন ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরকার, উপসহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ।
সেই মামলার ‘ইন্ধনদাতা’ হিসেবে শুরু থেকেই বর্তমান মেয়র তাপসের দিকে আঙুল তুলেছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন।