২০২০ সালে ৩৫৫ কোটি টাকার অবৈধ পণ্য আটক
মনির হোসেন,মোংলা: দেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও সুন্দরবন অঞ্চলের জনগনের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের চার ভাগের ৩ ভাগ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ জোনের আওতাধীন এলাকা সমূহে স্থানীয় জনসাধারনের সার্বিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে কোস্টগার্ডে কর্মরত কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। সুন্দরবন অঞ্চলের নদ- নদী ও মৎস্য সম্পদ সুরক্ষায় কাজ করছে এ বাহিনীর চৌকষ সদস্যরা। পাশাপাশি সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবী, মৌয়াল, বাওয়ালী ও অন্যান্য পেশার দরিদ্র মানুষের একমাত্র ভরসার প্রতীক কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশিক আহম্মদ সিদ্দিক জানান, ২০২০ সালে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন তার এখতিয়ারভূক্ত এলাকাসমূহে চোরাকারবারকারী,পাচারকারী, অবৈধ জেলে আটক, তক্ষক, বিদেশী মদ, গাঁজা, ইয়াবা, হরিণের মাংস, মাথা ও চামড়া, অবৈধ বোট ও অবৈধ জাল আটকসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করেছে যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩৫৫ কোটি ৮০ লক্ষ ৮০ হাজার ৪ শত টাকা। এসময় কোস্টগার্ডের অভিযানে ৭৬ জন পাচারকারী, হরিণের ৬০ কেজি মাংস, ১টি মাথা ও ৫টি চামড়া, বিরল প্রজাতির ২টি তক্ষক সাপ , বিদেশী মদ ৩৫৯ বোতল, গাঁজা ৭ কেজি ৭০৫ গ্রাম, ইয়াবা ৩১৯ পিস, আগেয়াস্ত্র ২টি, ইঞ্জিনচালিত বোট ২৯টি, ছোট বোট ১৯টি সহ অবৈধ ১৫৬ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকারের জাল ও দঁড়ি। পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে জাটকা, চিংড়ি পোনা,ফাইসা পোনা ধরার নিয়মের ক্ষেত্রে কোস্টগার্ডের ভূমিকা অসামান্য।বঙ্গোপসাগরে দেশীয় জলসীমায় মৎস্য সম্পদ সুরক্ষা ও ভারতীয় জেলেদের উৎপাত ঠেকাতে কঠোর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর কোস্টগার্ডের টহল জাহাজ ‘বিসিজিএস সোনার বাংলা’ ও ২২ ডিসেম্বর ‘বিসিজিএস অপরাজেয় বাংলা’ দেশীয় জলসীমায় মাছ শিকারের অপরাধে দুটি ট্রলারসহ মোট ৩৩ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে। এসময় জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমান জাল,দঁড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।২০২০ সালের মার্চ মাসে সারাদেশে যখন করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তখনই কাজ হারিয়ে অসহায় কর্মহীন হয়ে পড়ে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের এখতিয়ারভূক্ত এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনাকালে স্থানীয়দের সচেতন করতে এবং তাদের ঘরে রাখার জন্য কোস্টগার্ড বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় কোস্টগার্ডের নিজস্ব তহবিল থেকে অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ সহায়তা। ধাপে ধাপে চলতে থাকে এ কার্যক্রম। চরম দূর্দিনে ৫ হাজার পরিবারকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। করোনাকালের সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য। দেশের ক্রান্তিলগ্নে জনগনের জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এ বাহিনীর অনেক সদস্য।মোংলা, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় একটি বেইস ও ১৪টি স্টেশান নিয়ে পরিচালিত হয় কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের কার্যক্রম। এ বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারনে সুন্দরবনে অনেকটাই বনদস্যু জলদস্যুদের উৎপাত কমে গেছে। মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহন করে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেছে যা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে। সমুদ্র এলাকায় চোরাচালানরোধে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের তৎপরতা চোখের পড়ার মত। ২০২০ সালে কয়েক দফা অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমান ভারতীয় শাড়ি কাপড়, চোরাই ডিজেল, বিদেশী মদসহ চোরাচালানে সংশ্লিষ্ট চীনা নাগরিক ও দেশীয় অপরাধীদের আটক করেছে কোস্টগার্ড। এছাড়া বঙ্গোপসাগর প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ও অন্যান্য বহু অনাবিষ্কৃত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ সকল মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রক্ষায় কোস্টগার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জাহাজ ‘বিসিজিএস কামরুজ্জামান’ ও ‘বিসিজিএস মুনসুর আলী’সহ অন্যান্য টহল জাহাজ সমূহ বঙ্গোপসাগরে দেশীয় সমুদ্র সম্পদ ও অপার সম্ভাবনায়ময় সুনীল অর্থনীতি সুরক্ষায় সমুদ্রের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।