লোহাগড়ায় অনুমোদন বিহীন ইট-ভাটায় পুড়ছে কাঠ
কাজী আশরাফ, লোহাগড়া (নড়াইল):নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বেশ কয়েকটি অনুমোদন বিহীন ইটভাটায় কাঠ দিয়ে বছরের পর বছর ধরে ইট পোড়ানো হলেও তা বন্ধে তেমন কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। অভিযোগ আছে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই বহাল তবিয়তে চলছে অনুমোদন বিহীন এসব ইট-ভাটা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইট-ভাটা স্থাপন করতে হলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী হাইব্রিড হফম্যান, জিগ-জ্যাগ, ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন্ অথবা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপন করার বিধান রয়েছে। উপজেলার শিয়রবর, কাঠালতলা, আড়িয়ারা, কালনাঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে কোনো রকম অনুমোদন ও পরিবেশ অধিপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই একাধিক ইটভাটা চলছে। সবগুলো ইটভাটা লোকালয়ের পাশে এবং ফসলী জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে হাত করেই এসব ভাটা চালানো হয় বলে ইটভাটাসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার মন্ডলবাগ গ্রামে একতা ব্রিকস, রামকান্তপুর কাঠালতলা এলাকায় এসকেএইচকে ব্রিকস, শালনগর ইউনিয়নের শিয়রবর গ্রামে হীরা ব্রিকসে টিনের চিবনি ব্যবহার করে কাঠ দিয়ে ইট-পোড়ানো হচ্ছে।
অনুমোদন ছাড়াই কি ভাবে ভাটা চলছে জানতে চাইলে শালনগর ইউনিয়নের শিয়রবর গ্রামে প্রায় ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থাপিত মেসার্স হীরা ব্রিকস এর মালিক আবুল হাসান মোল্যা জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা পরিচালনা করছি। এসময় আবুল হাসান ও তার অনুসারিরা এ প্রতিবেদককে নিউজ প্রচার বন্ধে ব্যার্থ চেষ্টাও করেন।ভাটা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে আরও জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে নসিমন, ট্রাকটর, এবং ঘোড়ার গাড়িতে কাঠ সংগ্রহ করে ভাটার মালিক হাসান। আর সেই কাঠ দিয়েই বছরের পর বছর ধরে চলছে এই ইট-ভাটা।
নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলায় ২৫টি ইট-ভাটা আছে। যার মধ্যে জিকজ্যাক দুইটি, ফিক্সড পাঁচটি, টিন চিবনি সতেরটি আছে। যার বেশিরভাগই চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই।পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০)-এর ১২ ও ৪(২) (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফসলি জমিতে অথবা ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করা দন্ডীয় অপরাধ। তবে লোকালয়ে এবং ফসলি জমিতে স্থাপিত লোহাগড়া উপজেলার এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন অথবা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা জানান, যাঁরা ইটভাটা করছেন তাঁরা খুবই প্রভাবশালী। এ কারণে ইট-ভাটার ধোঁয়ায় শ্বাষকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলেও মানুষ তাদের ভয়ে কিছু বলছে না।লোকালয়ের খুব কাছে স্থাপিত এসব ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।ফসলি জমিতে ইট-ভাটা তৈরির বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভাবে ইট-ভাটা তৈরিতে একদিকে যেমন অশঙ্কা জনক হারে কমছে ফসল আবাদ উপযোগী জমি অপর দিকে টিনের চিবনি ব্যবহার করা ভাটার বিষাক্ত ধোয়ার কারনে আশে পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যপক হারে কমছে ফলস উৎপাদন। সে কারনে নির্ধারিত লক্ষমাত্রা অর্জন করতে চরম ভাবে বাধাগ্রস্থ হতে হচ্ছে। অপর দিকে ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রান্তিক কৃষক।দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তানভির শেখ। তিনি মন্ডলবাগ গ্রামের মো. রব্বানী শেখের ছেলে। টিনের চিবনি ব্যবহার করা একতা ইট ভাটর পাশেই তার বাড়ি। তিনি বলেন, ভাটার কালো ধোয়ার কারনে অত্র এলাকার শিশু ও বয়স্ক মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় একখনই যদি যথাউপযুক্ত পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ আরও বেশি ঝুকিতে পবড়ে।উপজেলা দুর্নিতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নড়াইলকে গ্রীন এবং ক্লিন করতে লক্ষ লক্ষ বৃক্ষরোপন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। যা চলমান আছে। কিন্তু দঃখের বিষয় এক দিকে আমরা গ্রীন নড়াইল গড়তে গাছের চারা রোপন করছি অন্য দিকে অনুমোদন বিহীন ইট-ভাটা মালিকগন প্রতিদিন হাজার হাজার মন কাঠ পুড়িয়ে উজাড় করছে বন। এ বিষয়ে অতি দ্রুত প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন না করেন তাহলে নড়াইলকে গ্রীন করার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছি তা স্বপ্নই থেকে যাবে।অধিক মুনাফালোভী কিছু ইট-ভাটার মালিক যারা প্রতিদিন শতশত মোন কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ ধ্বংশের যে মহোৎসবে মেতে উঠেছে তা বন্ধে জেলা প্রশাসন কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি আঞ্জুমান আরা বলেন, জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যহত থাকবে। আমরা প্রতিবছরই অবৈধ ইট ভাটা একেবারই কখনো কখনো ভেঙে দিয়ে আসি। কখনে জরিমানাও করি। আমরা গতবছরই তাদেরকে সতর্ক করেছিলাম এ বছর কেউ অবৈধ ভাবে ভাটা চালু করবে না। এর পরেও যদি কেউ নিয়ম নিতীর তোয়াক্কা না করে ভাটা চালু করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।