পিরোজপুরে মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুরে একটি মহিলা মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে একাধিক তৃতীয় বিভাগ পেয়ে নিজের চাকরী, অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে স্ত্রী, বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, ভূয়া সার্টিফিকেটে চাচাকে চাকরি, অডিট এর কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ ডজন ডজন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে মাদ্রাসা সুপারের আপন চাচাতো ভাই বেলায়েত শেখ জেলা প্রশাসক, চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিভাগীয় পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, বরিশাল,চেয়ারম্যান, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড, মহা-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ,জেলা শিক্ষা অফিসার, পিরোজপুর,উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পিরোজপুর প্রেস ক্লাব, পিরোজপুর জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে লিখিত আবেদন করেছেন। লিখিত অভিযোগে জানা যায়, পিরোজপুর সদর উপজেলার নামাজপুরে একটি সিনিয়র মাদ্রাসা থাকলেও এর খুব কাছে প্রতিষ্ঠিত করা হয় নামাজপুর সাকিনা হামিদ বালিকা দাখিল মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসায় ৮বছর বয়স কমিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সুপার হয়ে যান বর্তমান সুপার আলী আকসার এর পিতা ইসহাক আলী (বর্তমানে মৃত)। পরে বিষয়টি অডিটে ধরা পড়লে রাষ্ট্রিয় কোষাগারে টাকা ফেরত দিতে হয়। পিতার মৃত্যুর পর কৌশলে ভারপ্রাপ্ত সুপার পদ লাভ করেন দাখিল আলিম এবং ফাজিল এই তিনটি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ প্রাপ্ত মাওলানা আলী আকসার ওহিদ।অভিযোগ আছে তিনি অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসায় তিনজন সহকারী মৌলভী পদের বিপরীতে নিজের স্ত্রী মারজানা খানমকে সহকারী মৌলভী পদে গোপনে চাকরী দিয়ে বাড়িতে বসিয়ে বেতন দেন। তিনি বে-আইনি ভাবে বড় ভাই তৌহিদুল ইসলামকে ২বছর বয়স কমিয়ে সহকারী সুপার, ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে সহকারী মৌলভী, চাচা মকবুল হোসেনের বয়স কমিয়ে নৈশ প্রহরীর চাকরী দিয়েছেন। এমনকি তিনি আপন ভাগ্নেকে এই একই কায়দায় চাকরী দেয়ার পায়তারা করছে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। মাদ্রাসা অডিট রিপোর্টে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্ণীতি ঢাকতে ঘুষ দেওয়ার কথা বলে মাদ্রাসার শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা নিয়েছে আলী আকসার। সা¤্রতিক কালে তিনি আবারো শিক্ষকদের ১৫ দিনের বেতন নিয়ে নিতে জবরদদস্তি চালাচ্ছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। কাগজপত্র অনুযায়ী এ মাদ্রাসার সীমানার মধ্যে মাত্র তিন শতক জমি থাকলেও দেড় একরের বাকি স¤পত্তি রয়েছে নদীর চর এলাকায়। অথচ স্থানীয় অন্য লোকজনের জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে মাদ্রাসার মূল অবকাঠামো মাদ্রাসার জায়গায় নাই। সুপার এসব কর্মকান্ড করতে একজন অবসরপ্রাপ্ত চতূর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি বানিয়ে তাকে সুবিধা দিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মতো কর্মকান্ড করছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাক্তিবর্গ জানিয়েছেন।এছাড়াও সুপারের বিরুদ্ধে উদ্দিপনা পুরষ্কারের সোয়া লক্ষ টাকা, জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া গভীর নলকূপ বসানো বাবদ টাকা এনে একটি অ-গভীর নলকূপ বসিয়ে এক লক্ষ টাকার আত্মসাৎ, বিভিন্ন সময় মসজিদের নাম করে জেলা পরিষদ থেকে ৫ লক্ষ টাকা উঠানো, মাদ্রাসার পরীক্ষার ফি, রেজিষ্ট্রেশন ফি, ফরম ফিলাপ, টিউশন ফি, মাদ্রাসার জমির ফসল ও গাছপালা বিক্রি, এডমিট কার্ড ও সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য টাকা নেয়ার সব টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে এই সুপারের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহম্মেদ বলেন, আমি অভিযোগ পেয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত চলমান আছে। রিপোর্ট পেলে উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে নামাজপুর সাকিনা হামিদ বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার শেখ মো: আলী আকসার অহিদ এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সঞ্জিব কুমার বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের তদন্ত চলাকালে আরো অভিযোগ আসছে। সবগুলো অভিযোগ সমন্বিত করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *