টাঙ্গাইল বিভিন্ন বিদ্যালয়ে জিম্মি করে টাকা আদায়!অভিভাবকরা বিপাকে, শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা
সুমন ঘোষ, বিভাগীয় প্রতিনিধি (ঢাকা): টাঙ্গাইলে অভিভাবকদের জিম্মি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নানা কৌশলে টাকা আদায় করা হচ্ছে। পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইনমেন্ট, মাসিক বেতনসহ নানা অজুহাতে ওই টাকা আদায় করা হচ্ছে। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে টাকা না নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা তা তোয়াক্কাই করছেন না। ফলে অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন এবং শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। প্রায় টানা ৮ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটো পাস দেওয়ার ঘোষণা হয়। এহেন অবস্থায় টাঙ্গাইল জেলায় ৫০৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিদ্যালয়েই অভিভাবকদের জিম্মি করে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, অনলাইনে ক্লাস হলেও হতদরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন না থাকায় তারা অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবুও হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে মুখ চেনা প্রভাবশালী ও জেলা-উপজেলার শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে কম টাকা নেয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়, টাঙ্গাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চৌধুরী মালঞ্চ অগ্রনী উচ্চ বিদ্যালয়, গালা আহসান উচ্চ বিদ্যালয়, রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, কাবিলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, কালিহাতীর সল্লা সমবায় উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়, বল্লা করোনেশন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নরদহি উচ্চ বিদ্যালয়, গোপালপুর হোমল্যান্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয়, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়, মাটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয়, ফলদা রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়, মধুপুরের রামজীবনপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চাপড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, ধনবাড়ীর পাইস্কা উচ্চ বিদ্যালয়, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বাসাইলের ময়থা জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, আইসড়া উচ্চ বিদ্যালয় সহ জেলার বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য দেড় থেকে তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। টাঙ্গাইল সদরের শহীদ জাহাঙ্গীর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক শামীম বলেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা নানা কৌশলে চাপ দিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন। শিক্ষকরা বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড় হাজার থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা আদায় করেছেন। টাকা না দিতে চাইলে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।অভিভাবক আবুল কালাম, মাজেদ মন্ডল সহ আরও কয়েকজন জানান, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা টাকা আদায় করছেন। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা যদি এমন করেন তাহলে অন্যরা তাদের কাছ থেকে কী শিক্ষা নেবে। ধরেরবাড়ী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম, শহীদ জাহাঙ্গীর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম সহ বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কেউ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন, কেউ রিসিভ করেন না। কারো কারো সঙ্গে স্বশরীরে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামীম আল মামুন জুয়েল জানান, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অর্ধেক মাসের বেতন নেওয়া হচ্ছে সে বিষয়টি তিনি জানেন। পরীক্ষার ফি ও অ্যাসাইনমেন্টের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম বলেন, করোনার মধ্যে পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইমেন্ট ও মাসিক বেতন নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কেউ যদি নিয়ে থাকে তাহলে তারা ঠিক করছেন না। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উপর মহলের নির্দেশনা আসার পর থেকে মাসিক বেতন নেওয়া যাবে।