তালা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মাদকের ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাটকেলঘাটা থানার ওসি, এস আই কৃষ্ণ তালা থানার এসআই মদন দেব
নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদক বিক্রি এবং মাদক সেবনে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা ও তালা থানার বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদক দ্রব্য তালার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান সময়ে মাদক রন্ধে রন্ধে ঢুকে পড়েছে। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে বেকার যুবক, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদক সেবন এবং বিক্রি বন্ধ করতে মাদকের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ভ্রাম্যমান আদালত, র্যাব এবং পুলিশের নিয়মিত অভিযান না থাকার কারণে অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। অভিযান অব্যহত না থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা থাকছে ধরা ছোয়ার বাইরে। বর্তমান সময়ে মাদক বিক্রেতারা ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে মাদক বিক্রি করছে। কেউ র্যাব ও পুলিশের সোর্স, কেউ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সোর্স আবার কেউ বিজিবির সোর্স পরিচয়ে মাদক বিক্রি ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা, ইসলামকাটি, ড্যামসা খোলা, সুজনশাহা, গোরডাঙ্গা, বাউকোলা, ঘোনা, পরানপুর, উতালী, কাজিডাঙ্গা, ভবানিপুর, বারাত মনোহরপুর, বারুইহাটি এলাকায় দেদারসে মাদক বিক্রি হচ্ছে। পুলিশের তালা থানার পুলিশের এসআই মদন ও দেব এবং পাটকেলঘাটা থানার এসআই কৃষ্ণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মাদক ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাদক বিক্রেতারা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পাটকেলঘাটা হারুন-অর-রশীদ কলেজ এলাকায় বিক্রি হয় মাদকদ্রব্য। এই কলেজের প্রভাষক ও ডিআইজির ভাই বলে পরিচিত মদনপুর গ্রামের রাকিবুর হাসান রাকিবের নেতৃত্বে চলে কলেজের ক্লাস রুমেই বসে জুয়া ও গাঁজার আসর। গত বছর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়। একটি অনলাইন মিডিয়ায় এমন খবর প্রকাশের পর তার সত্যতা সন্ধানে মাঠে নামে পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। রাকিব ডিআইজির নাম ভাঙিয়ে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল টাকার মালিক হয়েছেন। পাটকেলঘাটা থানার অধিনে মাদক ব্যবসায়ী বাইগুনি গ্রামের খুকি বিবি, আব্দুল মতিন ও তুহিন, আমতলাডাঙ্গীর আনিস, পাটকেলঘাটার মোহন ঋষি, আব্দুর রাজ্জাক, বিল্লাল হোসেন, হাজেরা বেগম ও রাসেল, তৈলকূপির পল্টু, সালাম ও সেলিম, চৌগাছার বারি, ইউনুচ, টিপু, জহুরুল ও সুমন, বড়বিলার জাহাঙ্গীর, লালচন্দ্রপুরের আলীম, আছাদ মিন্টু ও রাজিব, যুগিপুকুরের মিঠু মোড়ল, কবির ড্রাইভার, ইবাদুল, বাবু মোড়ল, সাইফুল, সোহাগ ও মালেক মুটে, দাদপুরের কামরুল ইসলাম, দায়পাড়ার মফিদুল, রকিবুল, হযরত আলী, ইজাহার, হালি বেগম, মুন্তাজ দায়, মনি দায়, আবুল ও শহিদুল সরদারের সাথে তার গভীর সম্পর্ক। এরা সবাই পুলিশের তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মামলা পরিচালনার দায়িত্ব রাকিব নিজেই করে থাকেন। তিনি নিজেও একজন মাদকসেবী। পাটকেলঘাটা ওভার ব্রীজ এলাকায় কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করেছেন বিলাষবহুল বাড়ি।
ড্যামসাখোলা রবিউল সরদারের নেতৃত্বে এমদাদুল সরদার, আমিনুর সরদার ইয়াবা, ফেনসিডিল, ভারতীয় মদ ও গাঁজা বিক্রি করে যাচ্ছে। রবিউল সরদারের বাড়ির বাগানে ও কবরস্থানে নিয়মিত বসছে মাদকের আসর। পাশাপাশি চলে জুয়ার আসর এবং গণবধুদের দেহ ব্যবসা। এই আসরে যাতায়াত রয়েছে এসআই মদন ও দেবের। বারুইহাটি গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে নূরুজ্জামান মিলন ও তার স্ত্রী রুনা বাড়িতেই বিক্রি করে ইয়াবা ও ফেনসিডিল। মিলন ও রুনা ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। মামলা নম্বর- ৫। জেল খেটে আবার ফিরে এসেছে পুরাতন পেশায়। বাইগুনির তুহিন নিজে এবং সহযোগী দিয়ে মাদক বিক্রি করে। পাটকেলঘাটার হাজেরা বেগম মাদকের মামলার আসামি। রাসেল হাজেরার বোনের ছেলে। ক্রেতার কাছে ব্যাটারি ভ্যান চালিয়ে মাদক পৌঁছে দেয়। এর বিরুদ্ধে পাটকেলঘাটা থানা ও বটিয়াঘাটা থানায় অনেক মামলা আছে।তৈলকূপির পল্টু টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে ব্যবসা করে। কুমিল্লায় তার নামে মাদকের মামলা আছে। পাটকেলঘাটা থানায় চাঁদাবাজিসহ ১৫-১৬ টি মামলা রয়েছে। ট্রাকে করে টেকনাফ থেকে ইয়াবা আনে। তার অর্থ জোগান দেয় পাটকেলঘাটার আল্লাহর দান বস্ত্রালয়ের মালিক মোহাম্মদ ওয়াহিদ। ওয়াহিদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা আছে। তিনি বস্ত্র ব্যবসার আড়ালে মাদকের ব্যবসা করেন। তার মালামাল সংগ্রহ করে দেয় জহুরুল ও সুমন। সালাম মাদক বিক্রির সময় হিরোইনসহ তিন-চারবার ধরা পড়ে।
চৌগাছার ইউনূচের নামে মাদকের মামলা আছে। টিপুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও হত্যা মামলা রযেছে। জহুরুল ইসলাম পাটকেলঘাটা পাঁচ রাস্তার মোড়ে রফিকুলের হোটেলের রাজ্জাক নামের লোকের মাধ্যমে মাদক বিক্রি করেন। সুমন একজন পুরাতন মাদক ব্যবসায়ী। লালচন্দ্রপুরের আলীমের পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসায়ী। ভোমরা বর্ডার থেকে মা ও বোনের সাহায্যে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে থাকে। আসাদ মিন্টু একজন প্রফেশনাল মাদক ব্যবসায়ী। রাজিব আজীবন তাস খেলে জীবন নির্বাহ করে এবং ছেলে মাদক বিক্রি করে। লালচন্দ্রপুর রহমতের বাড়ির পাশে ভাড়া থাকে।
যুগিপুকুরের মিঠু মোড়ল অ্যাপাচি মোটর সাইকেলে করে পাটকেলঘাটা বাজারে মাদক বিক্রি করে। কবির ড্রাইভার চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে। ইবাদুল তার স্ত্রীর সহযোগিতায মাদকের ব্যবসা করে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বাবু মোড়ল গাঁজাসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। সাইফুল একজন পুরাতন মাদক ব্যবসাযী। মালেক মুখের দুই বউ। একজন প্রফেশনাল মাদক ব্যবসায়ী বলে এলাকাবাসী জানায়। বর্তমান ব্যাটারি ভ্যান চালক হিসেবে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।
দায়পাড়ার ইজাহার ও হালি বেগমের নামে মাদকের বহু মামলা আছে। মন্তাজ দায়ের শ্বশুরবাড়ি কলারোয়ায়। সেখান থেকে গাঁজা ও ইয়াবা সংগ্রহ করে পাটকেলঘাটায় বিক্রি করে। আর শহিদুল শাকদা ব্রিজের টাওয়ারের পাশে মাদক বিক্রি করে থাকে।