ঝিনাইদহে গরীবের সরকারি টিসিবি’র মাল ওজনে কম দেয়ায় এলাকা জুড়ে তোলপাড়!

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: নানা অভিযোগ, অনুযোগ ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহে চলছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি। পণ্যের স্বল্পতা, ওজনে কম দেওয়া, দেরি করে স্পটে পণ্য নিয়ে আসা, জোর করে অপ্রয়োজনীয় পণ্য খরিদ করতে বাধ্য করা, দীর্ঘসময় ধরে লাইনে দাঁড় করানোর পর ‘পণ্য নাই’ বলে ক্রেতা বিদায় করে দেওয়ার অহরহ ঘটনা ঘটছে। এতে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, টিসিবির এক শ্রেণির কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারের এ উদ্যোগ ব্যর্থ করার পাঁয়তারায় লিপ্ত। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ টিসিবি। এদিকে ০৪ই নভেম্বর বুধবার ঝিনাইদহের বাইপাশ সড়কের আলহেরার সামনে অসহায় গরীবদের সরকারি টিসিবি’র মাল জে,কে এন্টারপ্রাইজ নামক ডিলার ওজনে কম দেয়ায় এলাকা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে! টিসিবি’র মাল খরিদ করতে আসা বাইপাশ ও আলহেরা এলাকার মিন্টু, রিমন, মিলন, বিপ্লবও মর্জিনা খাতুন ভিডিও ফুটেজে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তাদের নিকটে চিনি, ডাল ১০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ১ কেজি ও কেজির প্যাকেটে ওজনে কম দেয়া হয়েছে। মর্জিনা বলেন, তার ২লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ৪০ টাকা বেশি নিয়েছে। সেসময় মালামাল বিক্রয়ে কর্মরতরা এবিষয়ে জে,কে এন্টারপ্রাইজের মালিক কুমারেশ চন্দ্র বিশ্বাসের মোবাইল নাম্বার না দেয়ায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এসব অনিয়মের বিষয়ে ঝিনাইদহের টিসিবির সহকারী পরিচালক ও অফিস প্রধান সোহেল রানা সাংবাদিকদের জানান, ঝিনাইদহ জেলায় মোট ৫৯টি ডিলার রয়েছে। সদরে রয়েছে ৩০টি ডিলার। ঝিনাইদহ শহর এলাকায় প্রতিদিন ৩টি স্থানে টিসিবি’র মালামাল বিক্রয় করা হয়। এসব মালামাল ওজনে কম দেয়া চরম অন্যায়। আর টিসিবি’রর মালামাল গেটের বাইরে চলে গেলে সেটা ডিসি সাহেবের দায়িত্বে চলে যায়। সুতরাং ডিসির সাথে কথা বললে ভাল হবে। মহামারি করোনাকালীন নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে চিনি, ছোলা, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও আলু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম থাকায় সাধারণ ক্রেতা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পায় না। মানুষ মসুর ডাল বা পিয়াজের জন্য লাইনে দাঁড়ালেও প্রায়ই পাওয়া যায় না, আবার পেলে তার সঙ্গে চিনি নিতে বাধ্য করে। মসুর সয়াবিন তেল নিতে চাইলে ক্রেতার কাছে মসুর ডাল বিক্রি করে না। ‘খুচরা নাই’ এমন অজুহাতে রাখা হচ্ছে বাড়তি মূল্য। বাড়তি মূল্য দিতে না চাইলে ক্রেতাকে লাইন থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতা যখন খুচরা নিয়ে আসছেন, তখন আর আগের লাইনে দাঁড়ানো সুযোগ পাচ্ছেন না। দাঁড়াতে হচ্ছে নতুন লাইনে। আর নতুন লাইনে দাঁড়ালে আবার ঘণ্টা পার। আর পণ্যের ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ তো বহু পুরনো। সরকার নি¤œআয়ের মানুষের কাছে ন্যায্যমূল্যে মহামারি করোনাকালীন নিত্যপণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে ঝিানইদহের বেশ কয়েকটি পয়েন্টসহ জেলার উপজেলা গুলোতে খোলা ট্রাকে করে এবং নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে গত ১৭ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেছে। কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই অভিযোগ উঠেছে টিসিবির এই পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উপর। আর ডিলারদের খাম খেয়ালি তো রয়েছেই। সকাল ১০ টা থেকে সরকার নির্ধারিত স্পটে ট্রাক নিয়ে এসে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১২টার আগে স্পটগুলোয় ট্রাক আসে না। ১২টার পর এসে নানা ধরনের আনুষঙ্গিক কাজ সারতে পার করে দেয় ঘণ্টার বেশি সময়। এই দীর্ঘ সময় প্রচ- রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্রেতারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ বিষয়টির প্রতি ডিলার বা ট্রাক সেলের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ভ্রূক্ষেপ নেই। এদিকে আলু চাইলে বলে বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। পিয়াজ কে কিনলো, কার কাছে বিক্রি করলো, তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এ সব বিষয় জানতে চাইলে ঝিনাইদহ ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অফিস প্রধান সুচন্দন মন্ডল জানান, লিখিত অভিযোগ করলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া আমার সামনে ঘটলে অবশ্যই আমি ব্যাবস্থা নিব। উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ থেকে খোলা ট্রাকে করে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও আলু বিক্রি করছে টিসিবি। প্রতিকেজি চিনি ৫০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৫০ টাকা, লিটার প্রতি সয়াবিন তেলের ৮০ টাকা ও পিয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ২ কেজি চিনি, মসুর ডাল ২ কেজি, সয়াবিন তেল ৫ লিটার, পিয়াজ ২ কেজি খরিদ করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *