সাতক্ষীরায় পানিফল চাষে বাণিজ্যিক ভাবে সাফল্য পাওয়ায় কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

রফিকুল সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পানি ফলের বাণিজ্যিক ভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। জলাশয় ও বিল-ঝিলে এ ফলটি জন্মে। এর শেকড় থাকে পানির নিচে মাটিতে এবং পাতা পানির উপর ভাসতে থাকে। এক একটি গাছ প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানি ফলের আরেক নাম ‘সিংড়া’। ফলচাষ শুরু হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং ফল সংগ্রহ করা হয় অগ্রহায়ন-পৌষ মাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ এবং পরিপক্ক হলে কালো রং ধারন করে। ফলটির পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাসঁ। কাঁচা ফলের নরম শাসঁ খেতে বেশ সুস্বাদু। পানিফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ লবণগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম অন্যতম। ফসফরাসের সহযোগিতায় শরীরের হাড় ও দাঁতের গঠন এবং মজবুত করা ক্যালসিয়ামের প্রধান কাজ। পানি ফল কাঁচা খাওয়া হয়, তবে সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়। কাঁচা পানিফল বলকারক দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য পুষ্টিকর সহজ খাবার। ফলের শুকনো শাঁস রুটি করে খেলে এলার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ উপশম হয়। সাতক্ষীরা জেলার সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, সদরের আংশিক ও শ্যামনগর উপজেলায় জলাবদ্ধ এলাকার চাষিরা পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ফলের চাষ। জেলার সিংহাভাগ পানিফল চাষ হয় সাতক্ষীরার দেবহাটায়। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ ফল সারা দেশে ফল হিসেবে পরিচিতি না থাকলেও দিনে দিনে এর চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। পানি ফলের বাম্পার ফলন ও লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে চাষীদের। পানি ফল বা পানি স্যাংড়া নামের ফল চাষে অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় দেবহাটাসহ সাতক্ষীরা জেলার চাষীরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। স্থানীয়ভাবে ফলটি উৎপাদন বেশি হওয়ায় জনপ্রিয় চাষ হয়ে উঠেছে। দেবহাটাতে প্রায় ২২ হেক্টর জমিতে হেক্টর প্রতি ৩০ মেট্রিকটন ফলন হয়েছে। উপজেলার সখিপুর, গাজিরহাট, কোঁড়া, কামটা, দেবহাটা, পারুলিয়া, কুলিয়া, বহেরাসহ সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন থানা সহ গ্রাম্য এলাকায় চাষ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ চাষ ফসল চাষের জমি ছাড়াও ডোবা, খানা, মৎস্য ঘেরে সুবিধাজনক। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে চাষ করা যায়। পানিফল চাষে খুব বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। সার ও কীটনাশকের পরিমান কম লাগে। পানিফল ব্যবসায়ীরা বর্তমানে ২৫/৩০ টাকা দরে পানিফল বিক্রয় করছেন। দিনে গড়ে ৩০/৩৫ কেজি ফল বিক্রয় করে ১২০/১৪০ টাকা লাভ করে। তাদের এটি মৌসুমী ব্যবসা। এভাবে ১৯৯৭সাল থেকে ২৪ বছরের বেশি সময় তিনি পানিফল ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন তিনি খুলনা, যশোর, বেনাপোল, ঢাকা, বরিশাল, বরগুনা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ফল রপ্তানি করেন। বর্তমান জেলার বাইরের বাজারে পাইকারীভাবে বিক্রি করেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফ মোহাম্মাদ তিতুমির জানান, পানিফল চাষ কৃৃষি খাতে চাষ হিসেবে ধরা না হলেও এটি অতিদ্রুত চাষের খাতে আনা হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *