পৌর মেয়রদের চরম ইমেজ সঙ্কট

তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি: রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৩টি পৌরসভায় জানুয়ারিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষণার পর মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে বর্তমান মেয়ররা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতমধ্যে তারা ব্যানার-ফেস্টুন-প্যানা ইত্যাদি ছড়িয়েছেন জনবহুল স্থান ও মোড়ে মোড়ে। ভোটারদের কাছে না গিয়ে তারা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ঘন ঘন ঢাকায় ছুটছেন।এদিকে রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী ও মুন্ডুমালা পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে গত ৫ বছরে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় জমেছে। অসদাচরণ, কাঙ্খিত সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়া, অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতার অভাব, বরাদ্দ এবং প্রকল্পের টাকার সিংহভাগ লোপাট, কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাঁকি ও পৌরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে চরম উদাসীন থেকে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন তারা। তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন না হওয়ায় এসব পৌরসভার চেহারা প্রায় বিবর্ণ। উন্নয়ন বলতে কিছুই হয়নি। পৌরসভা হলেও এখানে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মতো নাগরিক সেবা নাই বলে মনে করছেন নাগরিকগণ।
জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি। আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম বাবু ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মেয়র হন। গোদাগাড়ী প্রথম শ্রেণির পৌরসভা; কিন্তু কোথাও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যে বরাদ্দ এসেছে, এর বেশির ভাগই লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থ ব্যয়ে অস্বচ্ছতা ও টেন্ডার কারচুপির অভিযোগ বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
অপরদিকে তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বিএনপি নেতা। পৌরবাসীর অভিযোগ, গত ৫ বছরে দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় গোটা পৌর এলাকা যেন একটা ভাগাড়। উন্নয়ন প্রকল্পের একটা বড় বরাদ্দ পেয়েই সম্প্রতি প্রায় অর্ধকোটি টাকা দামের গাড়ি কিনেছেন। রাতারাতি বানিয়েছেন নতুন বাড়ি এবং মুন্ডুমালা পৌর এলাকায় প্রায় কোটি ব্যয়ে মাল্টা ও পেয়ারা বাগান তৈরী করেছেন।ইতমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) থেকে তার সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। অন্যদের মতো সরকারি বরাদ্দ লোপাট ও টেন্ডার দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধেও। এছাড়াও প্রায় ৮ মাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাঁকি এবং বিপুর অঙ্কের টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। তবে মেয়র মিজানের দাবি, প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে মুণ্ডুমালা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (দায়িত্বহীন) গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ওজলবায়ু প্রকল্পের বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। বিগত ১০ বছরে তিনি দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেন নি। তবে বিলাস বহুল একাধিক গাড়ী ও ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এছাড়াও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও জনগুরুত্বপুর্ণসহ বিভিন্ন খাতে আসা বরাদ্দের বেশির ভাগই পৌরসভার উন্নয়নে ব্যয় করেননি বলে পৌরবাসীর অভিযোগ। এখানেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় ১০ মাসের বেতন ভাতা ও প্রায় কুড়ি লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।পৌরবাসীর অভিযোগ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাাংশ সময় পৌরবাসী কাদাপানিতে ডুবে থাকছেন। সড়কে প্রয়োজনীয় বাতি নেই, যা আছে তার প্রায় অর্ধেকেই বিকল।খানাখন্দে ভরা সড়কগুলো সংস্কারের কোনো চেষ্টা করেননি। সরকারি বরাদ্দ ও প্রকল্পের টাকা ব্যয়ে মেয়র রাব্বানীর বিরুদ্ধেও চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কাউন্সিলরগণ তার অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুক) লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে মেয়র গোলাম রাব্বানী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *